ফেনীঃ ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে ফেনীর ফুলগাজীতে মুহুরী নদী রক্ষা বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে লোকালয়ে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে।
রোববার (৬ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে উপজেলার ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের বরইয়া গ্রামের এনাম মিয়ার বাড়ির পাশে এ ভাঙন দেখা দেয়। এতে লোকালয়ে বন্যার পানি ঢুকে তলিয়ে যাচ্ছে রাস্তা-ঘাট, বাড়ি-ঘর, ফসলি জমি ও মাছের ঘের। পার্শ্ববর্তী ফুলগাজী সদর ইউনিয়ন পরিষদ ও কাঁচা বাজার পানির নিচে ঢুবে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুর রহমান জানান, এখন পর্যন্ত বাঁধের বরইয়া ও দৌলতপুরের দুটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি কমার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মুহুর নদীর পানি বিপৎসীমার ১০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
স্থানীয় বাসিন্দা এনাম বলেন, রাত ২টা থেকে মসজিদের মাইকে ডেকে গ্রামের লোকজন একত্রিত করে বরইয়া এলাকার বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করেছি। প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে আপ্রাণ চেষ্টা করেও পানির তীব্র স্রোতের সঙ্গে আমরা পারিনি। ক্ষতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জমিতে কাল রোপা আমন রোপণ শেষ করেছিলাম। আজ সব পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এখানে আশপাশের ৩০-৪০টি পুকুর, ফসলি জমি, মসজিদ, বাড়িঘর সব পানিতে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. সেলিম জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে শুকনো খাবার দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে ফুলগাজী বাজারসহ অন্যান্য এলাকাও প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য কামাল হোসেন জানান, এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ ফুটের বেশি জায়গায় ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। গ্রামের রাস্তাঘাট ছাড়াও বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। এছাড়া অনেক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে এবং আমন ধান তলিয়ে গেছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মাসুদ বলেন, ইতোমধ্যে ভাঙন স্থলে আমরা এসেছি। ক্ষতিগ্রস্তদের শুকনো খাবার দেওয়া হচ্ছে। একটি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া পানিবন্দীদের উদ্ধারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাজ করতে বলা হয়েছে।
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসাদ বেগম জানান, মুহুরী নদীর পানির চাপ এখনো কমেনি। নদীর আশপাশের মানুষের মাঝে ভাঙন আতঙ্ক বাড়ছে। আক্রান্ত এলাকায় বিতরণের জন্য শুকনা খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিগত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের পানির চাপে ফুলগাজীর মুহুরী নদী রক্ষা বাঁধে এবং পরশুরামের কহুয়া নদী রক্ষা বাঁধে ভাঙনে নিঃস্ব হয় কৃষক। কিন্তু এর জন্য স্থায়ী কোনো সমাধান নেওয়া হচ্ছে না।
বুইউ