কুড়িগ্রামঃ তীরে এসে তরী ডোবার মতো অবস্থা মেধাবী শিক্ষার্থী আতিক হাসানের। ছোটবেলা থেকে অভাবের সাথে যুদ্ধ করে তিনি এবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে স্নাতক সম্মান প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছেন। ভর্তি হলেও উচ্চশিক্ষার ব্যয় কিভাবে মিটবে সে দুশ্চিন্তায় তাড়া করে ফিরছে তাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনায় প্রতিমাসে যে পরিমাণ টাকা প্রয়োজন তা তার দিনমজুর বাবার পক্ষে যোগান দেওয়া অসম্ভব। টাকার অভাবে তার পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম। সে সমাজেরই হৃদয়বান মানুষের বা কোনো সংস্থার সহযোগিতায় আরো এগিয়ে যেতে চান। আতিক কী পারবে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে। এজন্য সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন। আতিকের স্বপ্ন ছিল একদিন দেশের বড় অর্থনীতিবিদ হবেন। এখন তার এ স্বপ্ন ফিকে হয়ে এসেছে।
আতিক হাসান উপজেলার অনন্তপুর মন্ডল পাড়ার বাসিন্দা। বাবা দিনমজুর আব্দুল জলিল এবং মা গৃহিণী গোলেনুর বেগমের কনিষ্ঠ পুত্র। জলিল-গোলেনুর দম্পতির দুই ছেলের মধ্যে সে ছোট। বড় ছেলে নূর আলম কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। আতিক হাসান উপজেলার গংগারহাট এম এ এস উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও কাশিপুর ডিগ্রী কলেজ থেকে মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস করে এ বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিক (ক ইউনিট) বিভাগের মেধা তালিকায় তার অবস্থান ছিল ৮৩ তম। গুচ্ছ পরীক্ষায় ৬০ দশমিক ২৫ ।
আতিক হাসান জানান, আমরা দুই ভাই। ছোট বেলা থেকে বাবার সাথে দিন মজুরের কাজ করে ও নীচের শ্রেণির ছাত্র ছাত্রীদের প্রাইভেট পড়িয়ে সংসারে সাহায্য করে পড়াশোনা চালিয়েছি। ধারদেনা করে ও প্রতিবেশীদের সহায়তায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। আগামী ১ অক্টোবর থেকে ক্লাস শুরু হবে। টাকার অভাবে ক্লাসের যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে পারছি না। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার এতো টাকা কীভাবে জোগাড় করবো ভেবে পাচ্ছিনা। আমার চিন্তায় বাবা-মা নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন।
আতিক হাসানের বাবা আব্দুল জলিল জানান, তার মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তানসহ ৬ জনের পরিবার। বাবা হাঁপানি রোগী। মা ব্যাথায় নড়াচড়া করতে পারে না। স্ত্রী উচ্চ রক্তচাপসহ নানা রোগে ভুগছেন। আমি একা পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। জমাজমি তো দূরের কথা। থাকার জায়গা নেই। স্থানীয় এক চাচার ভিটার পরিত্যক্ত জায়গায় ঘর তুলে কোনোমতে বসবাস করছি। পরিবাররের ৬ জনের দৈনন্দিন খাবারের জোগান দিতে এলাকা ছেড়ে বছরের প্রায় ৬ মাস নোয়াখালী, মুন্সীগঞ্জ, সিলেটসহ নানা জায়গায় গিয়ে খেতের মজুরি দিতে হয়। এখন ছেলেকে পড়াবো কেমন করে।
আতিক হাসানের মা গুলেনূর বেগম বলেন, ছেলে দুটোকে পড়াশোনা করাতে চরম আর্থিক সংকটে ভুগছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারলেও পড়াশোনা করানো আমাদের পক্ষে অসম্ভব।
আতিক হাসানের দাদা জয়েন উদ্দিন বলেন, ছেলেকে পড়াতে করতে পারিনি। কিন্তু নাতি দুটো আমার সেই আশা পূরণের অর্ধেক পথ পেরিয়েছে। সমাজের হৃদয়বান ব্যক্তিরা এগিয়ে আসলে বাকি পথটুকু পেড়িয়ে যাওয়া সম্ভব ।
উপজেলার গংগারহাট এম এ এস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হামিদুল ইসলাম বলেন, আতিক হাসান এ বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ছিল। আর্থিক সংকট থাকলেও পড়াশোনায় তার আগ্রহের কমতি ছিল না। তার হতদরিদ্র পিতার অবস্থা জেনে আমরাও চেষ্টা করছি তাকে সাহায্য সহযোগিতা করেছি। আশা করছি সে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অনেক ভালো করে তার স্বপ্ন পূরণ করবে।
কাশিপুর ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ হেল বাকী বলেন, আতিক হাসান এ কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে ভালো ফলাফল করতে সক্ষম হয়েছে। সে দারিদ্র্যের কাছে হার মানেনি।সহযোগিতা পেলে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আরো ভালো ফলাফল করতে সক্ষম হবে।
আতিক হাসানের প্রতিবেশী মোশাররফ হোসেন ও কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গোলজার হোসেন বলেন, আব্দুল জলিলের দইটা ছেলেই মেধাবী, বিনয়ী এবং সৎ। বর্তমান সময়ে এরকম ছেলে পাওয়া খুবই দুষ্কর। বড় ছেলেটাকে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে ভর্তিতে আমরা সহযোগিতা করেছি। এখন আতিককে নিয়েই সমস্যা। তার দিনমজুর পিতার পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ জোগানো অসম্ভব। আমরা সমাজের দানশীল এবং বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। তাহলেই তার জীবনের লালিত স্বপ্ন পূরণ হবে।
এমএম