বরগুনাঃ পারিবারিক কলহের জেরে আলাদা থাকছেন স্বামী-স্ত্রী। স্ত্রীকে ঘরে ফেরাতে একাধিকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন স্বামী জাফর। অবশেষে হতাশায় নিজ ঘরে কবর খুঁড়েছেন তিনি।
এমনই ঘটনা ঘটেছে বরগুনা সদর উপজেলার আয়লা ইউনিয়নের কদমতলা এলাকায়। খবর পেয়ে শুক্রবার (২২ জুলাই) বিকেল ৫টার দিকে গ্রামপুলিশ ও স্থানীয় জনতা কবর খোঁড়া বন্ধ করান।
চাঞ্চল্য এ ঘটনায় আশপাশের গ্রামের মানুষ ওই বাড়িতে ভিড় করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৩ বছর আগে ঢাকায় হাজেরা ও জাফরের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই জাফরের অবাধ্য ছিল হাজেরা। পরে তারা বরগুনার গ্রামের বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। বরগুনায় কিছু দিন থাকার পর পারিবারিক কলহ তৈরি হলে দুজন আলাদা থাকতে শুরু করেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টি একাধিকবার মীমাংসা করার চেষ্টা করলেও হাজেরা তা মেনে নেননি।
পরে চলতি বছরের ২২ জুন জাফরের সঙ্গে রাগ করে স্বামীর চায়ের দোকানে বসবাস শুরু করেন হাজেরা। তাকে দোকান থেকে ঘরে ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে নিজের কবর নিজেই খুঁড়তে শুরু করেন জাফর।
এ বিষয়ে আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ সাইফুল ইসলাম জানান, প্রায় এক যুগের সংসার জাফর ও হাজেরার। তাদের সংসার জীবেনে নানা বিষয় নিয়ে ঝগড়া চলে আসছিল। চলতি সপ্তাহে এ বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদে দুই পক্ষের মধ্যে সালিস বৈঠকের কথা রয়েছে। তারা দুজনেই এক মাস ধরে আলাদা থাকেন। নিজ ঘরেই কবর খোঁড়ার সংবাদ পেয়ে তিনি দ্রুত ছুটে গিয়ে জাফরকে কবর খোঁড়া থেকে বিরত রাখেন এবং পুলিশকে বিষয়টি জানান।
জাফর হোসেন বলেন, ১৩ বছর আগে ঢাকায় হাজেরাকে বিয়ে করি। বিয়ের পর থেকেই হাজেরা আমার অবাধ্য। পরে তাকে নিয়ে বরগুনার গ্রামের বাড়িতে চলে আসি। এখানেও কিছু দিন থাকার পর আামদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ তৈরি হলে আমরা আলাদা থাকতে শুরু করি। এ নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির উপস্থিতিতে একাধিকবার সালিস করলেও হাজেরা তা মানছে না। সর্বশেষ গত ২২ জুন তার সঙ্গে রাগ করে হাজের তার চায়ের দোকানে থাকতে শুরু করে। তাকে দোকান থেকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে আমি ঘরের মেঝেতে কবর খুঁড়ি।
তবে স্বামী জাফরকে নিয়েও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে হাজেরার। তিনি জানান, ১৩ বছর আগে বিয়ের সময় তার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন জাফর গাজী। জাফরের আগের স্ত্রীকে তালাক না দিয়েই মিথ্যা তালাকনামা তৈরি করে তা দেখিয়ে বিয়ে করেন তাকে। এসব নিয়ে ঝগড়া ও ঝামেলা শুরু হলে তারা ঢাকা থেকে গ্রামে চলে আসেন।
তিনি বলেন, জাফর গাজী সংসারে অমনোযোগী। এজন্য প্রায়ই ঝগড়া হয়। ২২ জুন তাকে ঘর থেকে বের করে দেন। এরপর থেকে তিনি দোকানের মধ্যে আলাদা থাকা শুরু করেন। জাফরের সঙ্গে ফের সংসার জীবন শুরু করতে কোনোমতেই রাজি নন হাজেরা।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য কাজি মোখলেচুর রহমান জানান, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে জাফর যাতে কোনো অঘটন না ঘটাতে পারেন সেজন্য ঘর থেকে তাকে কদমতলা বাজারে নিয়ে আসা হয়েছে। পুলিশকে খবর দেওয়া হয়েছে। তারা পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।
বরগুনা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলী আহম্মেদ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। পুলিশ গিয়ে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ওই ব্যক্তিকে কবর খোঁড়া থেকে বিরত রেখেছে। এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমএম