রংপুরঃ রংপুরে দেশের অন্যান্য জায়গার মতো বিদ্যুতের সমবণ্টন ও সময়সূচি মেনে লোডশেডিংয়ের দাবিতে মানববন্ধন সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশ থেকে অবিলম্বে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের সময়সূচি অনুসরণ করতে বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের কাছে দাবি জানানো হয়। অন্যথায় লোডশেডিং নিয়ে বৈষম্য নিরসনে বৃহৎ আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেন বিক্ষুদ্ধরা।
বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে রংপুর নগরের কলেজ রোডে নেসকোর বিদ্যুৎ বিতরণ কার্যালয়ের সামনে রংপুরবাসীর পক্ষে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এতে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও দিনমজুর, অটোচালক, শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও গৃহিণীরা অংশ নেন।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বিক্ষুদ্ধরা বলেন, রংপুরে নিয়মবহির্ভূতভাবে বিদ্যুৎবিভ্রাট লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সরকার ঘোষিত নির্দেশনা অমান্য করে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ে সময়সূচির কোনো তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। যেখানে দিনে এক থেকে দুই ঘণ্টা লোডশেডিং হবার কথা, সেখানে সারাদিনে অন্তত ৫-৬ বার লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। আমরা রংপুরবাসী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাত্র ৬-৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাচ্ছি।
তারা আরও বলেন, আমরা লোডশেডিংয়ের বিপেক্ষ নই। কারণ সংকট মোকাবিলায় সরকার একটি ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু আমরা নিয়মমাফিক লোডশেডিং চাই। সারা দেশের চিত্র আর রংপুরের চিত্র এক নয়। এখানে ঘন ঘন লোডশেডিং দেওয়াতে ব্যবসা-বাণিজ্য, উৎপাদন, পড়ালেখা ও কর্মক্ষেত্রসহ জনজীবন ব্যাহত করছে। অতিরিক্ত গরম আর লোডশেডিংয়ে শিশু ও বয়স্করা অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
দিনের মতো রাতের বেলাতেও ঠিক মতো বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে না। এমন অসহনীয় লোডশেডিং বন্ধ করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সময়সূচি মেনে লোডশেডিং দিতে হবে। নইলে বৈষম্যের বিরুদ্ধে আগামীতে বৃহৎ কর্মসূচি দেওয়া হবে।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন অভিনয়শিল্পী আদনান চৌধুরী, শিক্ষার্থী উদয় কুমার দাস, শাহরিয়ার, সুবা নাহিয়ান, ব্যবসায়ী ইস্তেফাক আহমেদ নূর, মাহবুবার রহমান, গৃহিনী হোসনে আরা পপি প্রমুখ।
মানববন্ধন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শুরু হবার কথা থাকলেও অনুমতি না থাকায় প্রথমে পুলিশি বাধার সম্মুখীন হন আয়োজকরা। পরে অবশ্য তাদেরকে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য মানববন্ধন করতে দেওয়া হয়। বিদ্যুৎতের সমবণ্টন নিশ্চিত করাসহ সময়সূচি মেনে লোডশেডিংয়ের দাবি সম্বলিত পোস্টার ও ব্যানার নিয়ে মানববন্ধনে অংশ নেন। কর্মসূচি শেষ করে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) লিমিটেডের রংপুর বিতরণ অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী বরাবর স্মারকলিপি দেন তারা।
এ ব্যাপারে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) হোসেন আলী সাংবাদিকদের বলেন, আয়োজকরা আমাদেরকে মানববন্ধন কর্মসূচি সম্পর্কে অবগত করেননি। মেট্রোপলিটন এলাকায় কোনো সভা, সমাবেশ করতে হলে অনুমতির প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু তারা সেটিও নেননি। তারপরও এই কর্মসূচিকে ঘিরে যাতে কোনো নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয় সেজন্য আমরা ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করেছি। শান্তিপূর্ণভাবে তারা মানববন্ধন করেছে, তাদের কোনো বাধা দেওয়া হয়নি, বরং এ ধরনের কর্মসূচি করতে কোথায় থেকে কার অনুমতি বা কাদের জানানো দরকার, সেই প্রসঙ্গে অবগত করেছি।
এদিকে চাহিদার বিপরীতে অর্ধেক মেগাওয়াট বিদ্যুৎতের কারণে এই সংকট ও লোডশোডিংয়ের সময়সূচিতে হেরফের হচ্ছে বলে জানিয়েছে নেসকোর রংপুর বিতরণ অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. শাহাদৎ হোসেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, রংপুরে দিনের বেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ৭০০ থেকে ৭৫০ মেগাওয়াট আর সন্ধ্যায় ৯০০ থেকে ৯৫০ মেগাওয়াট। আমরা গতকাল বুধবার মোটে ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেয়েছি। আজ বৃহস্পতিবার বেলা দুইটা পর্যন্ত পেয়েছি ৫০০ মেগাওয়াট।
তিনি আরও বলেন, চাহিদার তুলনায় রংপুরে যে ঘাটতি রয়েছে, তার প্রভাবে সময়সূচি মেনে লোডশেডিং দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আমরা এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের যে সময়সূচি তৈরি করেছি, তা পরিবর্তন করে লোডশেডিং কমিয়ে আনার চেষ্টা করব। তবে কবে নাগাদ এই পরিস্থিতি ভালো হবে, এখন তা বলা যাচ্ছে না।
এসএস