নীলফামারীঃ দল থেকে রাজাকার পুত্রের অপসারণ ও আওয়ামী লীগ নেতাকে লাঞ্চিত করার ঘটনায় নীলফামারীর সৈয়দপুরে স্থানীয় আ’লীগ দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। সে সময় তপ্ত হয়ে উঠেছিল সরকারি দলের রাজনীতি। পরে কেন্দ্রীয় নেতার হস্তক্ষেপে ধীরে ধীরে তা ঠান্ডা হতে চলেছে। দলে বাজছে এখন ঐক্যের সুর। গত ৮ এপ্রিল রাতে শহরের পাঁচমাথা মোড়ে উপজেলা আ’লীগের ত্রান ও সমাজ কল্যান সম্পাদক সাংবাদিক মোতালেব হোসেন হককে যুবলীগ নেতা ও ঠিকাদার আসাদুল ইসলাম আসাদের নেতৃত্বে বেদম মারপিট করা হয়। ওই নেতা যখন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছিল তখন আ’লীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন তার অনুসারীদের নিয়ে বেশ মহড়া দেয় শহরে। পরদিন ৯ এপ্রিল রাতে আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মহসিনুল হক মহসিনের নেতৃত্বে একাংশ দলের নেতাকে লাঞ্চিত করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও পথসভা করে। ফের ১০ এপ্রিল রাতে সভাপতির নেতৃত্বে যুবলীগ নেতা আসাদের পক্ষে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় মোখছেদুল মোমিন তার বক্তব্যে সাংবাদিকদের হাত না পা দিয়ে মারার নির্দেশনা দেন। তার এ বক্তব্য নেট দুনিয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে
পড়ে। ফলে সারা দেশে বইতে থাকে আলোচনার ঝড়। এরপর ১১ এপ্রিল আ’লীগ নেতা ও সাংবাদিক মোতালেব হোসেন হকের গলায় জুতার মালা পড়ানো বিলবোর্ড কে বা কারা শহরের মোড়ে মোড়ে ঝুলিয়ে দেয়। এমন ঘটনা আগুনে ঘি ঢালার মত অবস্থা সৃষ্টি করে প্রাজ্ঞজন মহলে। ঘটনার আদি অন্ত নিয়ে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় শুরু হয় আলোচনার ঝড়।
এর আগে ২০২১ সালে পৌর আ’লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মরহুম রাজাকার নঈম খানের পুত্র দিলনেওয়াজ খানকে দল থেকে বহিস্কারের দাবিতে উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদ সন্তান মহসিনুল হক মহসিনের নেতৃত্বে একাংশ ও পৌর আওয়ামী লীগ মিলিত ভাবে বিশাল আন্দোলন গড়ে তোলে। যা রাজপথ পর্যন্ত গড়ায়। এ সময় সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন সরাসরি দিলনেওয়াজ খানের পক্ষে অবস্থান নিয়ে লড়াই সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়ে। মূল দল দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়ায় তার আঁচ গিয়ে লাগে অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠন গুলোর ওপর। এমন অবস্থায় স্থানীয় আ’লীগের কর্মকান্ডে হতভম্ব হয়ে পড়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ দেয়া হয় দলের কেন্দ্রীয় কমান্ডকে। এ পরিস্থিতি গভীর হতে থাকে। দলের হাই কমান্ড এমন পরিস্থিতি সামলাতে দুই পক্ষকে লাল পতাকা দেখানোর হুমকি দেয়। ফলে পদপদবি
বাঁচাতে নেতৃত্বের উভয়পক্ষের সামনের অংশ পিছু হটে। পূর্বাকাশে দেখা দেয় সূর্যের আলো। আর এই আলোকে ঘিরে গত ১১ মে ওমরা হজ্বব্রত পালনের উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময় সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনে সাধারণ সম্পাদক চাচা মহসিনুল হক মহসিনের গলায় ফুলের মালা পড়িয়ে দেয় ভাতিজা সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন। এদিন থেকে ঐক্যের সুর বাজতে শুরু করে। এর ফলশ্রুতিতে গত ২২ মে মৎস্যজীবি লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে দুই পক্ষই অংশ নেয়। এদিন থেকে দলে ঐক্যের সুর বিউগলে বেশ জোরেই বাজছে। সাধারনের কানেও তা আসছে। স্থানীয় আ’লীগের ঐক্যের তালে অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের নেতৃকর্মীরাও তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করছে। উপজেলার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এমন ঐক্যের সুরে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছে।
জানতে চাইলে সাধারণ সম্পাদক মহসিনুল হক মহসিন সুদুর সৌদি আরব থেকে ভিডিও কলে এ প্রতিবেদককে জানান, তাদের দলীয় কোন্দলের পাথর সরতে শুরু করেছে। সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন তার প্রতিক্রিয়ায় মুঠোফোনে বলেন মত পার্থক্য থাকতে পারে তবে আমরা দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ।
এমবুইউ