বরগুনাঃ নানা অনিয়ম-দুর্নীতি, কাজে অসহযোগিতা ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে বরগুনার বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: আমানুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে। কোভিড ভ্যাক্সিনের কর্মচারী ও স্বেচ্ছাসেবীদের সম্মানি ও কর্মচারীদের পোশাকের প্রদানে উৎকোচ গ্রহণ, ভূয়াবিল উত্তোলন, কর্মচারীদের সঙ্গে অসদাচরণ, হয়রাণি, চাকুরিচ্যুত করার হুমকি দেওয়ার এবং অসযোগিতার জন্য সংস্কার কাজ বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে বলে এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।
এতে কর্মচারীদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। যে কোন সময় তাঁরা ফুসে উঠতে পারে এমনটাই সংশ্লিস্ট সূত্রে জানাগেছে। অসাধু এ কর্মকর্তার হাত থেকে নিজেদের বাঁচাতে এসব অনিয়মের ফিরিস্তি তুলে ধরে বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক বরাবর গত ১৬ মে একটি লিখিত অভিযোগ করেছে উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ২২ জন স্বাস্থ্য সহকারী ও ১৫ জন সিএইচসিপি।
জানা গেছে, স্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের আওতায় চলতি অর্থ বছরে বেতাগী হাসপাতালের তৃতীয় শ্রেণির কোয়াটার মেরামাতের কাজ বাস্তবায়নের জন্য ৫ এপ্রিল থেকে অধ্যাবধি সংশ্লিষ্ট ঠিাকাদার ও উপসহকারী প্রকৌশলী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে কাজের স্থান বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য বারংবার সরাসরি সাক্ষাৎ ও মুঠেফোনে যোগাযোগ করেও সমাধান না মেলায় যেহেতু নিয়মানুযায়ী চলতি অর্থ বছরেই জিওবি অর্থ ব্যয় নিশ্চিত করতে হবে তাই কাজটি বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় নিরুপায় হয়ে গত ২৮ এপ্রিল স্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের পটুয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো: জলিলুর রহমান প্রধান প্রকৌশলী, সিভিল সার্জন বরগুনা সহ বিভিন্ন বিভাগে লিখিত পত্র দিয়ে বিষয়টি অবহিত করে।
কর্মচারিদের অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, কোভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচির কর্মচারী ও স্বেচ্ছাসেবীদের অনুকূলে বরাদ্দকৃত ৬ লক্ষ ৮৮ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ২ লাখ টাকা এমটি-ইপিআইর মাধ্যমে উৎকোচ গ্রহণ। এ অর্থ আদায়ের আগে পবিত্র রমজানের ভেতরে একাধিকবার কর্মচারিদের তাঁর বাসায় তলব করে সকলের কাছে থাকা মোবাইল ফোন তার নিকট জমা নিয়ে সারাদিন বসিয়ে রেখে ২১ টিওয়ার্ডের ১৬ দিনের সরকারি বরাদ্দ থেকে তাঁকে ১৫% টাকা এবং প্রতিওয়ার্ড থেকে ১ জন করে ২১ ওয়ার্ডে থেকে ২১ জনের ১৬ দিনের টাকা দিতে হবে এবং এ কথা বাহিরে জানাজানি হলে কিংবা কাউকে বললে চাকুরীর মজা জীবনের তরে বুঝিয়ে দেওয়া এবং যাকে ধরা হবে তার জীবন নষ্ট এবং অফিসিয়াল ভাবে ক্ষতির করার হুমকি দেয়।
এমনকি কথায় কথায় আরও বলেন, আগে যে কর্মস্থলে ছিলাম সেখানকার রাজনৈতিক নেতা, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও সহ বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সাথে মামলা করে তাদেরকে বুঝিয়ে দিয়ে এসেছি, ইচ্ছার বাইরে কোন কর্মচারি কাজ করলে মামলায় ফাঁসানো ও চাকরিচ্যুতকরে খালি হাতে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
দায়সারাভাবে পুষ্টি সপ্তাহ পালন, হাসাপতালের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা খাত থেকে ২ লক্ষ টাকা, শেয়ার হেলথ থেকে ৪ লক্ষ ৮০ হাজার টাকাসহ আরও একাধিক খাতে ভূয়াবিল উত্তোলন করে, হাসপাতালের পথ্য ও ধোলাই ঠিকাদারের কাছ থেকে ২০% টাকা এবং ৪র্থ শ্রেণির ১৬ জন কর্মচারীদের পোশাকের জন্য ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা কোটেশনের মাধ্যমে উত্তোলন করে প্রত্যেক কর্মচারীকে এ থেকে তাঁকে ৫০% ঘুষ হিসাবে দাবি করে। অভিযোগ দেওয়ার পর অবশ্য গত বৃহস্পতিবার কোটেশনের কাজ যেখানে পোশাক তৈরি করে দেওয়ার কথা না দিয়ে জরুরি ভাবে জনপ্রতি ১৫ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা কেটে রেখে বাকী টাকা বিতরণ করে নাম না প্রকাশের শর্তে ভুক্তভোগি একাধিক কর্মচারি এমনই অভিযোগ করেন।
অফিসের প্রধান হয়েও যথারীতি অফিসে না বসে সকাল ১১.০০ টার সময় অফিসে এসে এক দের ঘন্টা পরে উদাও হয়ে একজন একজন করে বাসায় ডেকে অফিসের কাজ বাসায় সারেন। হাসপাতালের সকল কাজেই কম-বেশি তাকে ঘুষ দিতে হয়। এমনকি রোগীদের মেডিকেল সার্টিফিকেট আগে হাসপাতালের পিওন আ: আজিজের মারফত থানায় পাঠানো হতো। এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা যোগদানের পর বর্তমানে সেই কাজটিও হাসপাতালের স্টোর কিপার বদরুল আমিনের সাথে আতাঁতের মাধ্যমে ঘুষের বিনিময় থানায় রিপোর্ট প্রেরণ করেন। হাসপাতালে হিসাব রক্ষক কর্মরত থাকা সত্বেও স্টোর কিপারকে অবৈধভাবে হিসাব রক্ষকের দায়িত্ব দিয়ে সমস্ত টাকা পয়সার কাজ করান তাঁর মাধ্যমে। বেশির ভাগ সময় হাসপাতারের এ্যাম্বুলেন্স তিনি নিজের কাজে ব্যবহার করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্যসহকারী এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো: গোলাম কিবরিয়া বলেন,উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার উৎকোচ নেওয়া,অশালীন ব্যবহার, স্টাফদের হয়রাণি,কথায় কথায় মামলায় ফাঁসানো, চাকুরিচ্যুতির হুমকি, সার্ভিস বুকে লাল কালির ভয় দেখানোর কারণে তাঁর সঙ্গে কর্মচারীদের মধ্যে দ্বন্ধের সৃষ্টি হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে আমরা অসাধু, ভয়ঙ্কর ও দূর্নীতিবাজ এই কর্মকর্তার হাত থেকে নিজেদের বাঁচাতে অভিযোগ দিয়েছি। শুধূ গোলাম কিবরিয়াই নয়, হাসপাতালের আরও একাধিক কর্মচারি এর হাত থেকে রেহাই পেতে অন্যত্র বদলী পূর্বক তাঁর অপসারন দাবি করে বলেন, বর্তমান এই কর্মকর্তার অধীনে তাঁদের চাকুরিকরা কোন ক্রমেই সম্ভব নয়। তার কর্মকান্ডে চরম অসহায় হয়ে পড়েছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: আমানুল্লাহ আল-মামুন বলেন, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। বরং আমি ভাল কাজ করছি। কর্মচারিদের পোশাকের টাকা তাদের মাঝে ডেকে ডেকে বিতরণ করেছি। তার জন্য আমাকে পুরস্কৃত করা উচিত। সংস্কার কাজে অসহযোগিতার বিষয়ে ইতোমধ্যে সমাধান হয়েছে। ঠিকাদার শীঘ্রই কাজ শুরু করবেন ।
সাইদুল ইসলাম মন্টু/এমবুইউ