শরীয়তপুরঃ জেলার সদর উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শ্লীপ ও ক্ষুদ্র মেরামতের বরাদ্ধকৃত টাকা লুটপাট ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ২০-২১ অর্থ বছরে উপজেলার ১২৬ স্কুলের শ্লীপ ও ক্ষুদ্র মেরামতের টাকা উত্তোলন করলেও অধিকাংশ স্কুলেই তেমন কোন কাজ হয়নি। আবার কোন কোন বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক জোরা তালি দিয়ে কাজ করে ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসের যোগসাজসে উত্তোলন করেছেন পুরো টাকা। এ নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন ম্যানেজিং কমিটি ও অভিবাবকরা। তবে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলছেন শ্লীপের কাজ চলমান। আর ক্ষুদ্র মেরামতের কাজ নিদিষ্ট সময় চলে। এগুলো নিয়ম মেনে ভাউচার দেখেই বিল দেওয়া হয়েছে।
শরীয়তপুর সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও ৭২ নং পশ্চিম বগাদী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সুত্রে জানা গেছে, ২০২০ -২১ অর্থ বছরে শরীয়তপুর সদর উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নে ১২৬ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্লীপের ৫০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা করে প্রতিটি স্কুলে বরাদ্ধ দেওয়া হয়। আর ৪৫ টি স্কুলের অনুকুলে ২ লাখ টাকা করে ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। বৈশ্যিক মহামারীর করোনার কারনে স্কুল বন্ধ ও কিছু স্কুলে ভবনের কাজ চলমান থাকায় প্রধান শিক্ষকরা ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস কে ৫ থেকে ৭ শতাংশ কমিশন দিয়ে পুরো টাকা উত্তোলন করেছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ২০২০ -২১ অর্থ বছরে সদর উপজেলার চিকন্দি ইউনিয়নের ৭২ নং পশ্চিম বগাদী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্ধ পায়। সেখানে কোন রকম কাজ না করেই প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের যোগসাজসে পুরো টাকা উত্তোলন করে নিয়ে গেছেন। ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে টাকা উত্তোলন করলে ও কোন কাজ করেননি প্রধান শিক্ষক। বিদ্যালয়ে কোন কাজ না করায় ও বিদ্যালয়ের টাকা লুট পাটের বিচার দাবীতে এলাকাবসী, অভিবাবকও কমিটির পক্ষে প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলামের বিরোদ্ধে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন স্থানীয় আব্দুর রশিদ মাদবর, ধলু মাদবর, মনির বেপারী, জাবেদ শেখ গংরা। এ সব অনিয়মের বিরোদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবী করেন। এ রকম চিত্র শরীয়তপুর সদর উপজেলার অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।
শরীয়তপুর সদর উপজেলার চিকন্দি ইউনিয়নের ৭২ নং পশ্চিম বগাদী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মনির বেপারী বলেন, আমাদের স্কুলের প্রধান শিক্ষক না থাকায় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার যোগ সাজসে পাশে ও পুর্ব বগাদী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নব্য সহকারী শিক্ষককে ভার প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিয়ে সরকারী টাকা তছরুফ করা হয়েছে। এটা চরম অন্যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক জানান ক্ষুদ্র মেরামত সহ সকল উন্নয়ন কাজে উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সুকণ্ঠ ভক্ত ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম কে ৫-৭ পার্সেন্ট টাকা দিতে হয়। তা না হলে তারা কোন চ্কে সই করেন না।
৭২ নং বগাদী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম কে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
সদর উপজেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সু-কণ্ঠ ভক্ত বলেন, আমি সব সময় সততার সংগেই কাজ করি। আমার বিরোদ্ধে যে সকল অভিযোগ আনা হয়েছে তা মিথ্যা ও বানোয়াট। আর স্যারের বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
এ সব অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, শরীয়তপুর সদর উপজেলার ১২৬ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪৫ টি বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র মেরামতের কাজ শেষ হয়েছে বাকী স্কুল গুলোতে শ্লীপের কাজ চলমান রয়েছে।
শরীয়তপুর জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল আজিজুল বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি বিষয়টি জানি না। জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।
জামাল হোসেন/এমএম