1. প্রচ্ছদ
  2. জাতীয়
  3. সারাবাংলা
  4. রাজনীতি
  5. রাজধানী
  6. আন্তর্জাতিক
  7. আদালত
  8. খেলা
  9. বিনোদন
  10. লাইফস্টাইল
  11. শিক্ষা
  12. স্বাস্থ্য
  13. তথ্য-প্রযুক্তি
  14. চাকরির খবর
  15. ভাবনা ও বিশ্লেষণ
  16. সাহিত্য
  17. মিডিয়া
  18. বিশেষ প্রতিবেদন
  19. ফটো গ্যালারি
  20. ভিডিও গ্যালারি

বহু বছরের স্বপ্ন পূরন হয়েছে ৩ উপজেলাবাসীর

মোঃ নাজমুল হোসেন রনি, রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি প্রকাশিত: জানুয়ারি ৯, ২০২২, ০৪:১২ পিএম বহু বছরের স্বপ্ন পূরন হয়েছে ৩ উপজেলাবাসীর

রাঙ্গামাটিঃ স্বপ্ন পূরণ হলো নানিয়ারচরবাসীর। রাঙ্গামাটিসহ সারাদেশে যাওয়ার সহজ পথ স্বপ্নের (বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রব প্রস্তাবিত নাম) নানিয়ারচর সেতু (চেঙ্গী ব্রিজ) উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১২ই জানুয়ারী সকাল ১০টায় গণভবন থেকে ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই সেতুটি উদ্বোধন করবেন তিনি।

এদিকে এই সেতু উদ্বোধনকে ঘিরে সেতু এলাকায় উৎসবের আমেজ বইছে। শত শত লোক সেতুর দুই প্রান্তে অবস্থান করছেন এখনও। নানান রঙে সাজানো হয় সেতুটিকে এবং বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছে সেতুর আদলে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন এই নানিয়ারচর সেতুটি। উদ্বোধন উপলক্ষে রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলার নানিয়ারচর সেতু এলাকায় আয়োজন করা হচ্ছে  উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের। যেখানে উপস্থিত থাকবেন রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনসহ জনপ্রতিনিধিরা, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতারা।

এই নানিয়ারচরে (বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ ব্রিজ) সেতুটি চালু হওয়ায় এই অঞ্চলের মানুষের  পারাপারের যে ভোগান্তি ছিল, তার অবসান হচ্ছে। ঢাকার সঙ্গে এ অঞ্চলের নিবিড় যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের আরও উন্নতি ও অগ্রগতি হবে এবং পর্যটনশিল্পের বিকাশ ঘটবে। সাজেক যেতে  দূরত্ব কমে আসবে । অপার সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাচ্ছে নানিয়ারচরের অর্থনৈতিক দিকগুলোর, ইতোমধ্যে দৃষ্টিনন্দন এ সেতুটি এখন একটি বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ভ্রমণ পিপাসুদের পদচারণায় মুখর থাকে নানিয়ারচর সেতু এলাকার দুই প্রান্ত।

পার্বত‍্য রাঙ্গামাটি  জেলার নানিয়ারচর উপজেলার চেঙ্গী নদীর ওপর নির্মাণ হয়েছে এ সেতুটি। প্রকল্পে সেতুটির নামকরণ ‘সেতু’ কিন্তু স্থানীয়ভাবে বলা হয় ‘নানিয়ারচর ব্রিজ’।

সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের তথ্য মতে, ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ দশমিক ২ মিটার প্রস্থের এই সেতু নির্মাণে প্রায় ১২০ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। আর দুই কিলোমিটার সড়ক সংযোগের জন্য ১০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৪৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় করা হয়। ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়।

নানিয়ারচর চেঙ্গী সেতু তিন উপজেলা সমৃদ্ধ ঘটাবে

রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার চেঙ্গি নদীর উপর নির্মিত সেতুর মাধ্যমে সাজেক যাওয়ার দূরত্ব যেমন কমবে, তেমনি রাঙামাটি তিন উপজেলার বাসিন্দাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি  ঘটাবে। দেশের অন্যতম পর্যটন স্পট সাজেক, রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত হলেও সড়ক পথে যেতে হয় খাগড়াছড়ি জেলা দিয়ে। এতে একদিকে সময় যেমন বেশি লাগছে অন্যদিকে রাঙামাটিতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের ভোগান্তিও পোহাতে হয়, নানিয়ারচরের চেঙ্গি নদীর সেতু দিয়ে রাঙামাটি থেকে সাজেক যাওয়া যেমন সহজ হবে তেমন যাতায়াত খরচাসহ সময়ও কম লাগবে। সড়ক পথে যোগাযোগ রাঙামাটি জেলার সাথে নানিয়ারচর চেঙ্গী সেতু দিয়ে যাতায়াত করা যাবে, লংগদু, বাঘাইছড়ি উপজেলা সহ খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালার উপজেলাতেও। এই সেতুর  মাধ্যমে অল্প সময়ে দীঘিনালা হয়ে সাজেকে যাওয়া যাবে।

রাঙ্গামাটি জেলা শহর থেকে নানিয়ারচর উপজেলায় নৌ-পথই একমাত্র মাধ্যম যাতায়াতের,পরে রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি সড়ক পথটি চালু হলে,পাশাপাশি বাইপাস রাস্তা হয়ে নানিয়ারচর চলাচলে আরো সহজ হয়,কিন্তু নানিয়ারচর সদর উপজেলার কোল ঘেঁষে চেঙ্গী নদীর ফলে গাড়ি ও যানবাহন যাতায়াত বন্ধ হয়ে থাকে,এলাকাবাসীর প্রানের দাবী উঠে চেঙ্গী নদীর উপর সেতু স্থাপন করা হলে যাতায়াত ব‍্যাবস্থা আরো সহজ হবে, পাশাপাশি নানিয়ারচরের আনারস চাষীদের ফল পরিবহনে সুবিধা হবে,এছাড়া লংগদু উপজেলা ও বাঘাইছড়ি,দিঘিনালা উপজেলার মানুষের যাতায়াত ভোগান্তি কমবে। দীর্ঘ ৬০ বছর পর নির্মিত এই সেতুর ফলে রাঙামাটি জেলার দুর্গম তিন উপজেলার মানুষের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। চেঙ্গি নদীর ওপর ৫০০ মিটার দীর্ঘ এই সেতু দিয়ে শুধু নানিয়ারচর উপজেলাতেই নয়, সহজেই যাওয়া যাবে লংগদু ও বাঘাইছড়ি উপজেলাতেও। পাশাপাশি খুব সহজেই সাজেকে চলে যাওয়া সম্ভব হবে। অথচ এক সময় নানিয়ারচর উপজেলা সদরে যাওয়ার মতো সরাসরি কোনও সড়ক ছিল না। 

সেতুটি খুললে দুর্গম যাতায়াতের কষ্ট ঘুছবে তিন উপজেলার মানুষের। তবে নানিয়ারচর থেকে লংগদু ১৮ কিলোমিটারের সড়কটি এখনও নির্মিত না হওয়ায় লংগদু ও বাঘাইছড়িবাসীরা সেতু উদ্বোধনের পরেও  এই সুবিধা পাচ্ছেন না।

এই বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহে আরেফিন জানান, সড়কটি নির্মাণে সেনাবাহিনীর ১৯ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্স্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন (ইসিবি) থেকে একটি প্রকল্প প্রস্তুত করা হচ্ছে। শিগগিরই লংগদু সড়কটির নির্মাণকাজ শুরু হবে।

পরিকল্পনা গ্রহন বাস্তবায়ন

রাঙামাটি-নানিয়ারচর-লংগদু-বাঘাইছড়ি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ১৯৯৩ সালে নানিয়ারচর অংশে চেঙ্গী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। অবশেষে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নানিয়ারচরের চেঙ্গী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। মন্ত্রীর ঘোষণার দুই বছর পর ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে শুরু হয় সেতু নির্মাণের কাজ। এটি বাস্তবায়নে কাজ করছে সেনাবাহিনীর ১৯ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন ব্যাটেলিয়ান (ইসিবি)।

কষ্ট লাঘব হচ্ছে দুই উপজেলাবাসীর

রাঙামাটি থেকে বর্তমানে বাঘাইছড়িতে সড়ক পথে যেতে পাড়ি দিতে হয় প্রায় ১৫০ কিলোমিটার পথ। সময় লাগে প্রায় ছয় থেকে ঘণ্টা। তাছাড়া সরাসরি বাস সার্ভিস চালু না থাকায় সময় আরও বেশি লাগে। তাই কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টির পর নৌ-পথে  উপজেলাবাসীকে জেলায় যাতায়াত করতে হয়। তাতেও সময় লাগে অনেক,এই সেতুটি হওয়ায় ফলে দূর্গম উপজেলা লংগদু ও বাঘাইছড়ির জনসাধারণের জন‍্য কৃষি পন‍্য সহ জেলার আইন-আদালত কার্যক্রম শেষে,দিনে দিনে কাজ সেরে ঘরে ফেরা সম্ভব হবে। রাঙামাটি থেকে সড়কপথে লংগদু যেতেও প্রায় ১৪০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। সময়টাও লাগে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা। এই উপজেলার সঙ্গে রাঙামাটি সদরের কোনও বাস সার্ভিস চালু নেই। নৌ-পথেই একমাত্র ভরসা। কিন্তু নানিয়ারচরের চেঙ্গী সেতুর মাধ্যমে সেই দুর্গম পরিস্থিতি অনেকটাই লাঘব হবে।রাঙামাটি থেকে নানিয়ারচরের দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার। নানিয়ারচর থেকে লংগদু সদরে দূরত্ব ১৮ কিলোমিটার এবং বাঘাইছড়ির দূরত্ব ৩০ কিলোমিটারের মতো। চেঙ্গী সেতু ব্যবহার করে এখন এক ঘণ্টা বা দেড় ঘণ্টার মধ্যে সরাসরি লংগদু বা বাঘাইছড়ি যাওয়া সম্ভব হবে।

নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রগতি চাকমার সাথে কথা বলে জানা যায়, এই এক সেতুর মাধ্যমে আমাদের অনেক দিনের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। আমরা এখন খুব সহজেই জেলা সদরে যাতায়াত করতে পারবো। তাছাড়া এলাকার উৎপাদিত কৃষি পণ্যে আনারস  পরিবহন ও বাজারজাত সহজ হবে। একই সঙ্গে বাকি দুই উপজেলা লংগদু, বাঘাইছড়ি হয়ে আমরা সাজেকেও চলে যেতে পারবো।’ এই সেতু দিয়ে লংগদু দীঘিনালা হয়ে সহজে সাজেকেও যাওয়া যাবে।

নানিয়ারচর উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মেহেদী বিন সুলতান, সম্পাদক মোঃ নাজমুল হোসেন রনি বলেন, ‘এক সেতুতেই আমাদের তিন উপজেলার ভাগ্য পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। কিন্তু লংগদু থেকে নানিয়ারচর রাস্তার কাজটি হয়ে গেলে এই সেতু দিয়ে লংগদু,বাঘাইছড়ি,সাজেকে কম সময়ে যাওয়া যাবে। 

এ বিষয়ে নানিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিউলি রহমান তিন্নি জানান, উদ্বোধনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সকাল ১০টায় ভার্চুয়াল প্লাটফর্মের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক সেতুটি উদ্বোধন শেষে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে।

আগামীনিউজ/বুরহান

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে
Small Banner