বরগুনা: মৃত্যূরকোপ থেকে ফিরে আসা আগুনে ছ্যাকা খাওয়া পরীভানু (৬৫) এখনো বেতাগী হাসাপতালে কাতরাচ্ছে। ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা-বেতাগী- বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ নামক চলন্ত লঞ্চের ইঞ্জিন থেকে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে তিনি অগ্নিদগ্ধ হন।
আগুনের ছ্যাকা খেয়ে পরনের ভারি কাপড় ছেড়ে দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঝ নদী থেকে তাঁর মেয়ে রেহেনা বেগম (৩০), বেবী বেগম (২৫) ও মেয়ের নাতনী জিমি আক্তার (৬) ঝাঁপ দিয়ে পড়ে বেঁচে যান। পরীভানু তার দুই মেয়ে ও নাতনী নিয়ে লঞ্চের নীচ তলার বামপাশে ঘুমিযে ছিলেন।
জানা গেছে, স্বামী কাঞ্চন হাওলাদারকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করে আসছেন। ঘটনার দিন দুই মেয়ে ও নাতনী নিয়ে ঢাকা থেকে তার গ্রামের বাড়ি উপজেলার ছোপখালী গ্রামে আসতে ছিলেন। সে দিনের কস্টগাথা স্মৃতি আর শরীর ব্যথা নিয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার খুব কষ্ট হচ্ছে সে দিনের কথা ভেবে। যা কিছুতেই ভূলতে পারছিন না। জীবদ্দশায় স্মৃতি থেকে কখনো ভুলতে পারবো কিনা তাও জানি না।
ঘটনা দিন রাত ৩ টায় রেহেনা বেগম বিকট শব্দ শুণে জেগে দেখেন চলন্ত লঞ্চের ভেতরে চারদিক ধূমায় ছেয়ে গেছে। আগুনের লেলিহান শিখা বের হয়ে আস্তে আস্তে লঞ্চের ভেতরটা উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। কিছুতেই আর টিকতে পারছেন্ না। লঞ্চে আগুনের কারণে ডাকচিৎকার করছে সবাই। এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করি। হঠাৎ করে আল্লাহর করুণাময় লঞ্চটি তীরে চলে যায়। আমি, মা-বোন সবাই মিলে কলেমা পড়ে ৬ মাস বয়েসী বাচ্চাকে কোমড় ধরিয়ে লঞ্চ থেকে লাফ দিয়ে পরে বেঁচে যাই। এ সময় আরো আনেক লোক লাফিয়ে পরতে গিয়ে আমাদের গায়ের উপর পরে।
আহত মেয়ে রেহেনা বেগম জানান,পরে রাত চারটার দিকে আমার ছোট বোনকে ফোন করে বলি, “আমাদের জন্য দোয়া করো, লঞ্চে আগুন লেগেছে। পড়ে সে ঘটনাস্থলে গিয়ে আমাদের উদ্ধার করে পরের দিন মাসহ আমরা হাসপাতালে ভর্তি হই। আমাদের অবস্থা উন্নতির দিকেগেলেও মা আগ থেকেই অসুস্থ থাকায় তার আবস্থা এখনো ভাল নয়।এমনিতেই বৃদ্ধ তার উপর শরীরে আগুনের ছ্যাকা এবং গায়ের উপর মানুষ লাফিয়ে পরায় সে হাসপাতালের বেডে এখনো কাতরাচ্ছে।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: তেন মং বলেন, ‘তিনি আগ থেকেই এমনিতেই অসুস্থ ছিলেন। লঞ্চ দূর্ঘটনার কারনেব তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তার মেরুদন্ড সমস্যা রয়েছে। যা চিকিৎসা করালেও ভাল হওয়ার সূযোগকম।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুহৃদ সালেহীন বলেন, ‘হাসপাতালে গিয়ে খোজ-খবর নিয়ে তার বিষয় সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।
এদিকে মা রুনু বেগম ও ছোট বোন রুশনি আক্তারের লাশ খুঁজে পেতে সোমবার দুপুরে নমুনা দিতে এসেছেন আহত জিসান শিকদার। তাঁর বাড়ি বেতাগীর করুনা গ্রামে। তিনি বলেন, ‘আমার নানু অসুস্থ থাকায় আমরা পরিবারসহ লঞ্চে করে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে সদরঘাট থেকে রওনা করি। আমরা সবাই ঘুমে ছিলাম, হঠাৎ করে লঞ্চে আগুন লাগে। তাড়াহুড়ো করে আমার আম্মুকে নিয়ে আমি ছাদে চলে যাই। আম্মুকে নিয়ে নিচে নামার চেষ্টা করেছি, কিন্তু পারিনি। আমি লঞ্চের সামনের অংশে গিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা নদীতে সাঁতার কেটে নিজের জীবন রক্ষা করতে পেরেছি।’
আগামীনিউজ/ হাসান