নেত্রকোণা: তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নেত্রকোণায় বাড়ছে সংঘাত সংঘর্ষের ঘটনা।
জানা গেছে-কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও পূর্বধলায় প্রতিদিন নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামীলীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি, হামলা, প্রচারযন্ত্র, মোটরসাইকেল ও নির্বাচন কার্যালয় ভাঙচুর, অগ্নি সংযোগ, করা হচ্ছে। এতে ভোটারের মাঝে বাড়ছে আতংক। তবে প্রশাসন বলছে, আইনশৃংখলার বিঘ্ন ঘটালে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সোমবার রাতে কলমাকান্দার লেংগুড়া বাজারে লেংগুড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। এতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর অন্তত ১০জন সমর্থক আহত হন। এ সময় হামলাকারীরা তিনটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করে। হামলায় গুরুতর আহতদের মধ্যে চারজনকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী হলেন রফিকুল ইসলাম ওরফে গোলাপ। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন সাইদুর রহমান ভূঁইয়া। তিনি লেংগুড়া ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি এবার আনারস প্রতীক নিয়ে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার রাত আটটার সময় সাইদুর রহমানের সমর্থকরা লেঙ্গুড়া বাজার এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। এসময় নৌকার প্রার্থীর লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়। হামলায় তিনটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করা হয়। এসময় হামলায় শিবপুর গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে জহিরুল ইসলাম, চৈতানগর গ্রামের মিয়া হুসেনের ছেলে অন্তর মিয়া ও গোড়াগাঁও গ্রামের ঈমান আলীর ছেলে আব্দুল মিয়া সহ ১০ জন আহত হন। পরে স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে তাদের ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইদুর রহমান ভূঁইয়া মঙ্গলবার জানান, প্রতীক বরাদ্দ হওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও তার লোকজন আমার প্রচারণায় বাধা, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলাসহ কর্মী-সমর্থদের নানা ধরনের ভয়-ভীতি দেখিয়ে যাচ্ছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে তারা নিজেদের একটি ছাপড়া ঘরে নির্বাচনী কার্যালয় বানিয়ে তা আগুনে পুড়িয়ে দেয়। পরে উল্টো আমাকে ও আমার কর্মী-সমর্থকদের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করছেন। এলাকায় আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তাঁরা এমন হীন কাজ চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘সোমবার রাতে আমার কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়ে ১০জনকে আহত করে ও চারটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করে। আমি আমার নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালাতে বাধাগ্রস্থ হচ্ছি। এসব বিষয় নিয়ে রির্টানিং কর্মকর্তার কার্যালয়সহ থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।’
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার কোন কর্মী-সমর্থক কারও ওপর হামলা চালায়নি। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচারে বাধা বা ভয়-ভীতি দেখানোর বিষয় সত্য নয়। এটি আমার নামে মিথ্যাচার করা হচ্ছে।’
এদিকে দুর্গাপুর উপজেলার চন্ডীগড় ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী এমদাদুল হক আলম সরকারের সমর্থকরা চ-ীগড় বাজারে হামলা চালিয়ে উপজেলা শ্রমিক লীগের সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন খোকন, ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি তাজুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন,এহসানুল হক সহ ৬ জন কে আহত করার অভিযোগ উঠেছে।
স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী এমদাদুল হক বলেন, ‘আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী আলতাবুর রহমান এর লোকজন আমাকে ও আমার ছোট ভাইকে প্রাণনাশের হুমকী দিয়েছে। আমার কর্মীসমর্থকদের হামলা করে মারধর করা হচ্ছে। ভোটারদের মধ্যে আতংক সৃষ্টি করে বলছেন, সামনে টেবিলে সীল দিতে হবে।’
আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী ও বার বারের চেয়ারম্যান আলতাবুর রহমান কাজল (বিএসসি) অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন।
পুলিশ সুপার মো.আকবর আলী মুন্সী বলেন, ‘কলমাকান্দার লেঙ্গুরা সহ নির্বাচনী প্রতিটি ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। প্রতিটি বিষয় তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
আগামীনিউজ/ হাসান