নেত্রকোণাঃ ৭ই মার্চে মহান স্বাধীনতার ঘোষক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই অমর বাণী “বাঙালির নর-নারীর আর্তনাদের তেইশ বছরের করুণ ইতিহাস” আর নেত্রকোণা জেলার বারহাট্রা উপজেলার মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের এক বীরযোদ্ধা তেইশ বছর জুতা পায়ে না দেয়ার আবেগ-আপ্লুত হওয়ার ইতিহাস।
জানা যায়- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ স্ব-পরিবারকে হত্যার প্রতিবাদে ও খুনিদের বিচারের দাবিতে নেত্রকোণার বারহাট্টা উপজেলার এক বীর মুক্তিযোদ্ধা জুতা পায়ে না দিয়ে দীর্ঘ ২৩বছর খালি পায়ে কাটিয়ে দেন। তিনি বঙ্গবন্ধু মুজিব আদর্শের এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর সৈনিক বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম সুলতান আহমেদ নূরী। যিনি ১৯৫১সালে বারহাট্টা উপজেলার আসমা ইউনিয়নের কৈলাটী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছোট বেলা থেকেই বঙ্গবন্ধু’র একজন খাঁটি ভক্ত ও আদর্শের সৈনিক ছিলেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধু’র প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসায়। তিনি বারহাট্টা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি নেত্রকোণা জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর ডাকে, মাতৃভূমিকে স্বাধীন করতে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে একটি ইউনিট কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন এবং পরিবর্তীতে নেত্রকোণা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডারের দ্বায়িত্বে ছিলেন।
পারিবারিক ও আওয়ামীলীগের একাধিক নেতৃবৃন্দের সূত্রে জানা যায়- তিনি তৎকালীন সময়ে বি.এ পাশ ছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁকে চাকরি দেয়ার কথা বললেও, তিনি বলেছিলেন আমি চাকরি করবো না, আমি আপনার মতো খেঁটে খাওয়া মানুষের পাশে থেকে দেশের মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রাখবো। সেই লক্ষ্যে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। বাঙালি জাতির মুক্তি ও মহান স্বাধীনতার ঘোষক এবং স্বাধীন বাংলার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্ব-পরিবারে হত্যা করার পর তিনি শপথ করেছিলেন যেই মাটিতে বঙ্গবন্ধুর রক্তের দাগ লেগে আছে সেই মাটিতে আমি ততদিন খালি পায়ে থাকবো যতদিন আমার নেতা,বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু’র হত্যার বিচার না হবে।
তিনি তাঁর শপথ রাখতে গিয়ে দীর্ঘ ২৩বছর জুতা পায়ে দেন নাই। ১৯৯৬সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে এবং বঙ্গবন্ধু তনয়া, গণতন্ত্রের মানস কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হন তখন তিনি মরহুম জননেতা সুলতান আহমেদ নূরীকে গণভবনে ডেকে নিয়ে বলেন, সুলতান তোমার শপথ তুমি রেখেছো, এখন থেকে তুমি জুতা পায়ে দিবা, এই বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০হাজার টাকা দিয়ে বলেন এখনি জুতা কিনে এনে পায়ে দাও। এসময় আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় ও নেত্রকোণা জেলার নেতা কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সেই মূহুর্তে মরহুম সুলতান আহমেদ নূরীর কান্নায় বঙ্গবন্ধু’র কন্যা,মমতাময়ী নেত্রী, দেশরত্ন শেখ হাসিনা সহ সকল নেতৃবৃন্দ অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন।
তিনি উপজেলা আওয়ামীলীগের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেন। আওয়ামীলীগ যখন ক্ষমতায় ছিলো না তখন তিনি দীর্ঘ সময় বারহাট্টা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন পরবর্তীতে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসলে কাউন্সিলের মাধ্যমে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে বারহাট্টা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং তিনি আমৃত্যু বারহাট্টা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ২০০১সালের ৯ই নভেম্বর এই মহান মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুবরণ করেন। এই মহান নেতা বীরমুক্তিযোদ্ধা মরহুম সুলতান আহমেদ নূরী -এঁর পরিবার আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে বারহাট্রা উপজেলায় শীর্ষ পর্যায়ে থাকার দাবি বাঙালির আশার প্রতীক ও আশ্রয়স্থল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বার বারের প্রধানমন্ত্রী তথা আগামী প্রজন্মের বাসযোগ্য উন্নত বাংলাদেশের রূপকার দেশরত্ন শেখ হাসিনা এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের কাছে তৃণমূল আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীগণের।
আগামীনিউজ/নাসির