নীলফামারীঃ জেলার সৈয়দপুরে অবৈধ দখলদাররা রেল কোয়ার্টারের চিহ্ন নিশ্চিহ্ন করতে মচ্ছবে মেতে উঠেছে। অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে রেল কোয়ার্টার দখলমুক্ত করতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বার বার উদ্যোগ নিয়েও অজ্ঞাত কারণে সফল কাম হচ্ছে না। জবর দখলকারীরা রেলের কোয়ার্টারের আকৃতি প্রকৃতি পরিবর্তন করতে উঠেপড়ে লেগেছে। অনেকেই রেল কোয়ার্টার ভেঙ্গে গোডাউন ঘর নির্মাণ করছে। আবার অনেকেই কোয়ার্টার ভেঙ্গে সেখানে আরসিসি পিলার দিয়ে তৈরি করছে আধুনিকমানের বসতবাড়ি।
বুধবার মুন্সিপাড়া রেল কলোনী কর্নেল তাহের রোডে সরেজমিনে গেলে এমন চিত্র চোখে পড়ে। এ সড়কের অবৈধ দখলদার ধনাঢ্য সার ব্যবসায়ী মনোয়ার হোসেন রেলওয়ে কোয়ার্টার ভেঙ্গে গড়ে তুলছেন গোডাউন ঘর। রেল কোয়ার্টারের দরজা ভেঙ্গে বাহারী ডিজাইনের নির্মাণ করেছেন প্রধান ফটক। আর দখলবাজির প্রত্যক্ষ মদদ দিচ্ছেন রেলওয়ের উর্ধ্বতন উপ-সহকারি প্রকৌশলী (কারখানা) আইওডাব্লুউ শরীফুল ইসলাম। অনৈতিক উপঢৌকনের বিনিময়ে তিনি অবৈধ দখলদারদেরকে সহযোগিতা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অচেনা কোন মানুষ প্রথম দেখায় বুঝতেই পারবে না এটি এক সময় রেলওয়ে কর্মচারীদের আবাসস্থল ছিলো। এমন ঘটনা সৈয়দপুর শহরের প্রতিটি রেল কলোনীতেই ঘটছে। আর আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে রেলওয়ের ওই কর্মকর্তা।
সংশ্লিষ্ট দপ্তরের একটি সূত্রমতে, সৈয়দপুরে শহরে সিঙ্গেল ও ডাবল কোয়ার্টারের সংখ্যা দুই হাজার ৪০০। কিন্তু ইতোমধ্যে দুই হাজার ২০০ রেল কোয়ার্টার অবৈধ দখলে চলে গেছে। বর্তমানে অবৈধ দখলদাররা সিন্ডিকেট করে রেল কোয়ার্টার বেচাকেনা করছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ দিয়ে যাচ্ছে এসব কাজে সরকারি দলের নেতা ও রেলওয়ের ওই কর্মকর্তা। এলাকা ভেদে একেকটি রেল কোয়ার্টার দুই লাখ থেকে ছয় লাখ টাকায় কেনাবেচা চলছে। কোন অবৈধ দখলদার রেল কোয়ার্টার ছেড়ে যেতে চাইলে আরেক জনের কাছে টাকার বিনিময়ে হাত বদল করে। বড় ধরনের দখলবাজরা রেল কোয়ার্টার বিক্রির টাকা দিয়ে পৌর এলাকায় ব্যক্তি মালিকাধীন জমি কিনছেন। রেল সম্পদ খেকোরা রেলওয়ের কোয়ার্টার ও পতিত ভূমি বিক্রি করে আঙ্গুল ফুলে বটগাছে পরিণত হয়েছে। মুন্সিপাড়া ও গোলাহাট এলাকায় দুই দখলবাজ রেলওয়ের ভূসম্পদ বিক্রি করে গাড়ি বাড়ির মালিক হয়েছেন। রেলওয়ের ভূ-সম্পদ দখল আর বিক্রিই তাদের মূল পেশা। সরকারি দলের ছত্রছায়ায় থাকায় কেউ তাদের নাম মুখে নেয়ার সাহস পায় না। সাধারণ মানুষ ভুলে তাদের নাম উচ্চারণ করলে মহল্লা ছাড়া হতে হয়। অনেকে প্রাণও হারিয়েছেন। ওই দুই দখলবাজ মুর্তিমান আতংক শহরের মানুষের কাছে। সরকারি দলের নীতিনির্ধারকদের সাথে তাদের দর্হম মহরম থাকায় কেউ টু শব্দটি করার সাহস পায় না। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রশাসনও মামলা নেয় না। কারণ তাদের হাত বড় লম্বা। পুলিশ মামলা নিলেই তৎক্ষণাৎ পুলিশ কর্মকর্তাদের মোবাইলে রিংটোন বাজতে থাকে। হ্যালো বলার সঙ্গেই বলা হয় মামলা নিবেন না। এমন অবস্থায় শহরের সাধারণ মানুষ চরম আতংকে দিনাতিপাত করছে। দখলবাজিতে রেল কর্মকর্তা, সরকারি দলের নেতা ও দখলবাজরা একে অপরের মাসতুতো ভাইয়ে পরিণত হয়েছে বলে শহরের বিশিষ্টজনদের অভিমত।
রেল কোয়ার্টার ভেঙ্গে গোডাউন ঘর নির্মাণ করার বিষয়ে অবৈধ দখলদার মনোয়ার হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি আগামী নিউজকে বলেন এটি আমার বিরুদ্ধে ভূয়া অভিযোগ, আমি শুধু বাসার দরজার প্রধান ফটকটি নির্মাণ করেছি।
দখলবাজির মদদ দাদা রেল কর্মকর্তা শরীফুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি আগামী নিউজকে জানান, অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশি হয়রানির শিকার হতে হয়। তবে অনৈতিক কোন লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নন বলে জানান।
আগামীনিউজ/নাসির