উত্তরাঞ্চল: শারদীয় দূর্গোৎসব আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে ১১ অক্টোবর। শরৎকালে সনাতন ধর্মাম্বলীদের এ উৎসব হয় বলে এটিকে সার্বজনীন শারদীয় দূর্গোৎসব বলা হয়। দুই বাংলার হিন্দু সম্প্রদায়ের এটি প্রধান ধর্মীয় উৎসব।
এজন্য উৎসবকে ঘিরে হিন্দু পরিবারগুলোতে আনন্দের হিল্লোল বইছে। প্রতিমা তৈরীর কাজ যত দ্রুত শেষ হচ্ছে, ততই বাড়ছে ওই সম্প্রদায়ের মানুষের কেনাকাটা।
ইতোমধ্যে শার্ট, প্যান্ট, শাড়ী, ধুতি, লুঙ্গি কেনা শেষ হয়েছে। এখন চলছে জুতা, স্যান্ডেল, জাঙ্গিয়া কেনার ধুম। নারী ও কিশোরীরা পোশাকের সঙ্গে মিল করে কিনছে চুড়ি, ফিতা, দুল, লিপস্টিক। মনিহারি দোকানগুলোতে হিন্দু নারী ও কিশোরী ক্রেতার ভীড় চোখে পড়ার মতো।
গত বছর করোনার থাবার কারণে সাধারণ মানুষের চলাচলে ছিল নানা ধরণের নিষেধাজ্ঞা। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোও মাঝে মাঝে খুলতো আবার বন্ধ হতো। চলতি সময়ে করোনার থাবা কমে আসায় নিষেধাজ্ঞা নেই বললেই চলে। ফলে সাধারণ মানুষ বেশ আয়েশে পথে ঘাটে চলছে। অনায়াসে মানুষ কেনাবেচা করতে পারছে। গত পূজার সময় এমন পরিবেশ ছিল না। ফলে হিন্দু পরিবারগুলো বলতে গেলে নিরানন্দভাবে কাটিয়েছে গত বছরের পূজা উৎসব। এ বছর প্রাণ খুলে তারা পূজার কেনাকাটা করছে।
উৎসব শুরু হওয়ার আগেই হিন্দু পরিবারের শিশু-কিশোরদের মাঝে উৎসবের আবহ বইছে জোরেশোরে। কথা হয় গৃহস্ত বাড়ির পুত্রবধু মালা রানীর সঙ্গে। তিনি বলেন দাদা গত বছর করোনার কারনে দূর্গোৎসব ম্লান হয়েছিল। এবারে পরিবেশ অনুকূলে। তাই প্রাণ ভরে সামর্থ অনুযায়ী কেনাকাটা করছি।
কথা হয় ভ্যান শ্রমিক সুধীর রায়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, দাদা গতবার আর এবার মিলে দুইবারের উৎসব একসঙ্গে করছি। অতিমারী করোনার কারণে গত বছর পূজার আনন্দ বলতে কিছুই ছিলনা। আর্থিক অনটনও ছিল। এবছর পূজায় ধার দেনা করে হলেও মানুষ পূজার আনন্দ করতে মজা করে কেনাকাটা করছে।
ইপিজেড শ্রমিক বনলতা রানী জানান, পূজা উপলক্ষে বেতন-বোনাস একসাথে পেয়েছি। তাই নিজে এবং পরিবারের সকল সদস্যদের জন্য কেনাকাট করছি। এবছর পূজার আনন্দ পূর্ণতা পাবে।
শিক্ষক যতিন রায় বলেন গত বছর পূজার সময় বেতন-বোনাস মিললেও করোনার কারণে পরিবেশ অনুকূলে ছিল না। তাই পূজার আনন্দ করা সম্ভব হয়নি। এবছর করোনা মহামারীর ভয় কমে যাওয়ায় পূজার আনন্দ ফিরে পেয়েছি।
কথা হয় মধ্যবিত্ত কৃষক জগদীশ চন্দ্র রায়ের সঙ্গে। তিনি বলেন আগাম জাতের ধান কাটা মাড়াই শেষে বাজারে বিক্রি করে নগদ অর্থ হাতে এসেছে। ধান বিক্রির টাকা দিয়ে অনায়াসে পূজার যাবতীয় খরচ মেটাতে পারছি। বেশ আনন্দও লাগছে।
কথা হয় স্থানীয় সাংবাদিক নিজু কুমার আগরওয়ালার সঙ্গে। তিনি আগামী নিউজকে বলেন মন থেকে করোনার ভয় কিছুটা কমে যাওয়ায় হাট-বাজারগুলোতে পদচারণা বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষ দোকানে এসে কোন প্রকার ভয়ভীতি ছাড়াই কেনাকাটা করছে।
কাপড় ব্যবসায়ী আক্তার, মঞ্জুরুল, মনিহারি পণ্য ব্যবসায়ী নেশাদ, করিম, রমিজ জানান গত বছর পূজার সময় যৎসামান্যও বেচাকেনা হয়নি। এবছর মানুষ আতঙ্ক ছাড়াই বাজারে আসছে, কেনাকাটাও ধুমছে চলছে। ব্যবসায়ীদের পূজা উপলক্ষে বেশ আয়ও হচ্ছে।
কথা হয় বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা বাবু রঞ্জন কুমার সরকারের সঙ্গে। তিনি আগামী নিউজকে বলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ গত বছরের চেয়ে এবছর অনেক সাচ্ছন্দে পূজা উদ্যাপনের প্রস্তুতি নিয়েছে। যে যার সামর্থ অনুযায়ী বেশ কেনাকাটা করছে। অনেকেই পূজার আনন্দ করতে এনজিও থেকেও লোন নিয়ে জামা কাপড় কিনছে। গত বছর মানুষ পূজার সময় ব্যক্তিগতভাবে ধারদেনা পাওয়া যায়নি। এমনকি এনজিও আলারাও তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিল। এবারে পরিস্থিতি অত্যন্ত অনুকূলে। তাই মানুষ মন খুলে করছে কেনাকাটা।
রংপুর বিভাগীয় পুলিশ পরিদর্শক অফিসের দেয়া তথ্য মতে এ বছর উত্তরাঞ্চলে ৫ হাজার ১৯৮টি পূজা মন্ডপে দূর্গোৎসব হবে। গত বছরের চেয়ে এবছর ৬৯৮টি মন্ডপ বেশী হয়েছে। দূর্গা পূজা ১১ অক্টোবর শুরু হয়ে ১৫ অক্টোবর শেষ হবে।