পটুয়াখালীঃ ভরা ইলিশ মৌসুমে গত বছরের মতো ইলিশের দেখা পায়নি জেলেরা। এ যেনো ইলিশের আকাল। রয়েছে বৈরি আবহাওয়ার প্রভাব। বছরের অর্ধেকটা সময় ইলিশ প্রজননের জন্য সরকার ঘোষিত দফায় দফায় অবরোধের ফলে জেলেদের ঘাটে বসে অবসর সময় কাটাতে হয়। এ অঞ্চলের উপকুলের জেলেরা সাধারনত ইলিশ মৌসুমের আপেক্ষায় বসে থাকে। আগামী ৪ অক্টোম্ববর থেকে ২৫ অক্টোবর পযর্ন্ত শুরু হচ্ছে ইলিশ শিকারে টানা ২২দিনের নিষেধাজ্ঞা ।
মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র থেকে জানা যায়, মৎস্য অধিদপ্তরে হিসেব অনুযায়ী ইলিশ মৌসুম শুরু হয়েছে ১ জুলাই থেকে বাংলা জৈষ্ঠ্য, আষার, শ্রাবন ও ভাদ্র মাসকে ইলিশের ভরা মৌসুম ধরা হয় কিন্তু ২১ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫দিন মা ইলিশের নিরাপদ প্রজনননের জন্য ৪ অক্টোম্ববর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২দিনসহ মোট ৮৭দিন জেলেদের মাছ ধরা বন্ধ রাখতে হয়। এরপর আবার শুরু হয় জাটকা সংরক্ষনের জন্য ছয় মাস মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা, মা ইলিশের প্রজনন নিরাপদ করতে আশ্বিনের অমাবশ্যা ও পুর্নিমা মাঝে রেখে বেশ কয়েক বছর ধরে সরকারীভাবে এ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আশি^নের অমাবশ্যায় পানি বাড়লে মা ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য সাগর ছেড়ে মিঠাপানির দিকে ছুটতে থাকে।
স্থানীয় ও জেলেরা জানায়, আড়াই মাস আগে ইলিশ মৌসুম শুরু হলেও এবছর আগের বারের মতো নদ-নদী ও সাগরে ইলিশ পাচ্ছেন না সাগরে। প্রতি অমাবস্যা পুর্ণিমায় জেলেরা আশায় বুক বাঁধে, মনে করে পানির চাপের সঙ্গে সঙ্গে নদ-নদী ও সাগরে ইলিশ আসবে। এই বিশ্বাস ছিল জেলেদের।কিন্তু গত কয়েকমাস সে আশা পুরন হচ্ছেনা, আশা রয়ে গেলো। এখন শেষ পথে ইলিশ মৌসুম। গত বছরের তুলনায় এবার অর্ধেক পরিমানও ইলিশ পায়নি জেলেরা। ফলে ইলিশ নিয়ে এখন উদ্বেগ উৎকন্ঠা দেখা দিয়েছে জেলে পরিবারে। কম বৃষ্টিপাত হওয়ায় গভীর পানির সন্ধানে ইলিশের গতিপথও পরিবর্তনের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ৬৫ দিনের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও সাগরের যেতে তৎসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারনে সাগরে মাছ ধরার জন্য যেতে পারেনি জেলেরা। এ বছর বারবার তৎসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাব ছিল সবচেয়ে বেশি। এরই মধ্যে আবার ২২দিনের নিষেধাজ্ঞা। দেশের মোট ইলিশের দুই তৃতীয়াংশ আহরিত হয় বরিশাল বিভাগের দক্ষিনাঞ্চলের নদ নদী ও সাগর থেকে। গত তিন বছর মোটামুটি ইলিশ পাওয়ার পর এবছর ইলিশ অনেকাংশেই কম ।
ইলিশ জেলে সদরুল হাওলাদার এ প্রতিবেদককে বলেন , জুলায়ের শুরু থেকেই দফায় দফায় নিম্নচাপ ও লঘুচাগে সাগর উত্তাল থাকায় জেলেরা ইলিশ ধরতে তেমন সুবিধা হয়নি। আর যে টুকু পাওয়া গেছে তা আবার জাটকা ইলিশ।
ট্রলার মালিক ইউসুফ সর্দার গনমাধ্যমকে বলেন, গত বছর মাঝী মাল্লাদের বেতন দিয়ে কোনো রকম ইলিশের ব্যবসা মোটামুটি হয়েছে, কিন্তু এ বছর অবস্থা খুব খারাপ ধার করা লক্ষ লক্ষ টাকা কি দিয়ে শোধ করবো এ নিয়ে চিন্তায় পড়েছি। গত বছর যেখানে ২৫লক্ষ টাকা বিক্রি হয়েছে এ বছর সেখানে সাত লক্ষ টাকা বিক্রি হয়েছে।
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদ উল্লাহ সাংবাদিকদের জানায়, গত নভেম্ববর থেকে মে পযর্ন্ত দীর্ঘ ৭ মাস বৃষ্টি হয়নি বললেই চলে। এজন্য ইলিশ মাছ পড়ার প্রভাবটা আগের চাইতে অনেকাংশে কম। তাছাড়া বৃষ্টি হলে মাছের পেটে ডিম আসে। মোহনা সংলগ্ন রাঙ্গাবালীর সোনারচর ও ভোলার ডালীর চরে পলি পড়ে ভরাট হওয়ায় ইলিশ মাছের সংখ্যা কমে গেছে বলে তিনি জানান।
আগামীনিউজ/শরিফ