নারায়নগঞ্জঃ একের পর এক বির্পযয়ে দিশেহারা গোটা দেশ। করোনা, লকডাইন, ডেঙ্গু আর বন্যায় সারা দেশের ন্যায় রূপগঞ্জের মানুষও বির্পযস্ত, আতঙ্কিত। দুর্যোগকে মোকাবেলা করেই বাঁচে বীরের জাতি বাঙ্গালী। দীর্ঘ দিন পর সবকিছু চালু হলেও ব্যবসা বাণিজ্য তেমন একটা নেই বললেই চলে। তবুও আশায় বুক বাধে মানূষ। করোনায় অর্থনৈতিকভাবে বির্পযস্ত মানুষ একটু সুখের জন্য , কিছুটা ভাল থাকার আশায়, সৃষ্টিকর্তার কাছে পাপ মোচনের জন্য প্রার্থনা করে থাকে, বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় সনাতণ ধর্মাবলম্বীরা তাদেও সবচেয়ে ব ড়ধর্শীয় উৎসব সারদীয় দূর্গাস্বোব আয়োজন করতে যাচ্ছে। পুরোধমে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ।
কথায় বলে, বাঙালী উৎসব পেলে বাঁচে। দুঃখ, জরা যতই থাকুক, হাসি-আনন্দে কাটাতে চায়। আর তাই এখানে বারো মাসে তেরো পার্বণ। অন্যতম একটির নাম শারদীয় দুর্গোৎসব। বছর ঘুরে আবারও এসেছে সেই ক্ষণ। আর মাত্র কয়েক দিনের অপেক্ষা। এর পরই বেজে উঠবে ঢাক। কানে আসবে শঙ্খ ধ্বনি। শুাং হয়ে যাবে বহু বছরের পুরনো উৎসব। অবশ্য তারও আগে প্রতিমা গড়া চাই। এখন চলছে সেই কাজ। কেউ কেউ ইতিমধ্যে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করে ফেলেছেন।
কাজটি বরাবরের মতোই নিভৃতে হচ্ছে। শিল্পীদের মুখে রা নেই। আপন মনে কাজ করে চলেছেন তারা। চলছে অন্যান্য প্রস্তুতিও। নতুন জামা-কাপড়ে সেজে বিভিন্ন মন্ডপে ঘুরে বেড়াবেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। নাচবেন। গাইবেন। চলবে খাওয়া-দাওয়া, বেড়ানো। অন্য ধর্মাবলম্বীরাও বাদ যাবেন না। সবার অংশগ্রহণে দারুণ মুখর হয়ে উঠবে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ।
সনাতন মতাবলম্বীদের বিশ্বাস মতে, মহালয়ার দিন দেবী দুর্গা মর্ত্যলোকে পা রাখবেন। এদিন ভোরে মন্দিরে চন্ডীপাঠের মাধ্যমে দেবীকে আবাহন করা হবে। দিন তারিখ মাথায় রেখেই চলছে প্রস্তুতি। শারদীয় দুর্গাপূজা উজ্জাপনে রূপগঞ্জ উপজেলা কমিটির সভাপতি বিমল চন্দ্র দাস বলেন, আর কিছুদিন বাদেই সনাতন সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গোৎসব শুরু হতে যাচ্ছে।
পূজার সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে প্রতিমা কারিগরদের ব্যস্ততা। দম নেওয়ারও ফুসরত নেই তাদের। আর পূজাকে ঘিরে উপজেলায় চলছে রাত দিন প্রতিমা তৈরির কাজ। উপজেলা পরিষদের তথ্যমতে, এবার এ উপজেলায় ৫১ টি মন্দিরে দূর্গাপূজা পালিত হবে। এ উপলক্ষ্যে নেওয়া হবে বাড়তি নিরাপত্তা।
সরেজমিনে উপজেলার ভুলতা, হাউলিপাড়া, দেইলপাড়া, নয়ামাটিসহ বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কারিগরেরা প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। প্রতিমা শিল্পীদের নিপুণ আঁচড়ে তৈরি হচ্ছে এক একটি প্রতিমা। নিজের সন্তানের মতো অতি ভালোবাসায় তৈরি করা হচ্ছে দুর্গা, সরস্বতী, লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক, অসুর ও শিবের মূর্তি। এখন খড় আর কাঁদামাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করে রোদে শুকানো হচ্ছে।
দিন দু’য়েক পর রং তুলির আঁচড় দেওয়া হবে। আবার কোনো কোনো প্রতিমা চলছে রঙের কাজ। এরপর কাপড় পড়ানো হবে। কথা হয় মুড়াপাড়া দূর্গা মন্দিরের পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিপন পালের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছর ধরে তারা দূর্গাপূজা উৎসব করে আসছেন। এবারও জাঁকজমকভাবে পালিত হবে। নয়ামাটি দূর্গা মন্দিরের পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি শ্রী গোপাল রায় বলেন, আগে প্রতিমা তৈরিতে খরচ কম হতো। এখন জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক কষ্ট হয়। প্রতিমা তৈরিতে সবমিলিয়ে খরচ হয় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা।
কথা হয় কারিগর সুশান্ত পালের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাত দিন কষ্ট করে প্রতিমা বানাতে হয়। তারপরও ভাল লাগে। একটা সুখ অনুভব করি। উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির কোষাধক্ষ্য গণেশ চন্দ্র পাল বলেন, রূপগঞ্জে নিরাপত্তা থাকায় প্রতিবছরই পূজা মন্ডপের সংখ্যা বাড়ছে। এবার ৫১ টি মন্দিরে প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে।
রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এএফএম সায়েদ বলেন, দূর্গাপূজাকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ কোনো প্রকার অপ্রীতিকর কিছু করতে চাইলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের সংসদ সদেস্য পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতিক) বলেন, রূপগঞ্জে হিন্দু-মুসলিম মিলে মিশেই উৎসব পালন করে থাকে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও জাকজমকপূর্ণভাবে দূর্গাপুজা উযযাপন করা হবে। নিরাপত্তা ও বিষয়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্তক দৃষ্টিসহ কড়া নিরাপত্ত্বার ব্যবস্থা করবে।