1. প্রচ্ছদ
  2. জাতীয়
  3. সারাবাংলা
  4. রাজনীতি
  5. রাজধানী
  6. আন্তর্জাতিক
  7. আদালত
  8. খেলা
  9. বিনোদন
  10. লাইফস্টাইল
  11. শিক্ষা
  12. স্বাস্থ্য
  13. তথ্য-প্রযুক্তি
  14. চাকরির খবর
  15. ভাবনা ও বিশ্লেষণ
  16. সাহিত্য
  17. মিডিয়া
  18. বিশেষ প্রতিবেদন
  19. ফটো গ্যালারি
  20. ভিডিও গ্যালারি

বিয়ে হয়ে গেল সব বান্ধবীর, ক্লাসে একা নার্গিস!

ডেস্ক রিপোর্ট প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২১, ০১:৩২ এএম বিয়ে হয়ে গেল সব বান্ধবীর, ক্লাসে একা নার্গিস!
ছবিঃ সংগৃহীত

কুড়িগ্রামঃ নার্গিস নাহার নবম শ্রেণির ছাত্রী। তারা ৯ জন বান্ধবী অষ্টম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। লকডাউনের সময় আটজন বান্ধবীর বিয়ে হয়ে গেছে। এখন নার্গিস নাহার এক ক্লাসে শুধু একা।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের ধরলা নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন চর সারডোব উচ্চ বিদ্যালয়ে করোনাপরবর্তী স্কুল খুললে উঠে আসে এ চিত্র।

ঝরে পড়েছে শিক্ষার্থী। কন্যাশিশুদের একটা বড় অংশ শিকার হয়েছে বাল্যবিয়ের। অনেকেই এখনো স্কুলমুখী হচ্ছে না। এরই মধ্যে নার্গিস নাহার নবম শ্রেণির একমাত্র মেয়ে হিসেবে বৃহস্পতিবার ক্লাসে আসে। প্রথম দিন তার কেটেছে খারাপ লাগার মধ্য দিয়ে। কোনো বান্ধবী নেই।

নার্গিস আক্ষেপ করে বলে- এখন শুধু আমিই বাকি রয়েছি। ক্লাসজুড়ে আমি শুধু একা। কারও সঙ্গে কোনো কিছু শেয়ার করতে পারি না। তাই মন খারাপ করেই ক্লাস করতে হচ্ছে। বান্ধবীদের বিয়ের কথা জানতে পেরে নিজেরই কান্না পাচ্ছে। নিজের মধ্যেও শঙ্কা কাজ করছে। আমার শেষ পরিণতি কী হবে তাও অজানা।

সে বলে- আমি আমার বাবা-মাকে অনুরোধ করেছি। আমাকে যেন হঠাৎ করে বিয়ে না দেয়। আমি পড়াশোনা শেষ করে একটি চাকরি করে নিজের অবস্থা তৈরি করেই বিয়ে করব। এর আগে নয়। কেননা নিজে স্বাবলম্বী না হয়ে অন্যের কাছে বোঝা হয়ে থাকতে চাই না।

সরেজমিন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়- এই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী নার্গিস নাহার। সে শ্রেণির ছেলে সহপাঠীদের সঙ্গে একটি ব্রেঞ্চে একাই পাঠদানে অংশ নিয়েছে।

আনন্দমাখা মুখে সবাই যখন ক্লাস করে তখন নার্গিস নাহারের চোখেমুখে অদৃশ্য আতঙ্ত কাজ করছে। হাজারও দুশ্চিন্তায় হাসিমুখে ভরে ওঠে নার্গিসের মুখে মলিনতা। কীভাবে করবে স্বপ্ন পূরণ? কেননা এই শ্রেণিতে ৯ জন ছাত্রীর মধ্যে ৮ জনই বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে।

করোনার দেড় বছরে বিদ্যালয়ের নার্গিস নাহার বাদে যেসব ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে তারা হলো- নুরবানু খাতুন, নাজমা খাতুন, স্বপ্না খাতুন, হেলেনা খাতুন, চম্পা খাতুন, লুৎফা খাতুন, চাঁদনী খাতুন এবং আরফিনা খাতুন।

এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলে রহমান বলেন, আমার বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ২২৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬৩ জন ছাত্রী। এদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ মেয়ে এবং ৭০ শতাংশ ছাত্র বিদ্যালয়ে উপস্থিত হচ্ছে। বাকিদের খোঁজখবর নিতে শিক্ষকদের নিয়ে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিদ্যালয়ে না আসার প্রকৃত কারণ তুলে ধরবেন।

প্রাথমিক তথ্যমতে, বিয়ে হয়েছে ১৮ জন ছাত্রীর। এর মধ্যে বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির চারজন ছাত্রীর মধ্যে জেসমিন ছাড়া বাকি তিনজনেরই বাল্যবিয়ে হয়ে গেছে। নবম শ্রেণিতে ৯ জনের মধ্যে নার্গিস ছাড়া ৮ জনের বিয়ে হয়েছে, এছাড়াও ষষ্ঠ শ্রেণির একজন, সপ্তম শ্রেণির দুইজন, অষ্টম শ্রেণির চারজনের বাল্যবিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানা যায়।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল মজিদ চৌধুরী বলেন, নবম শ্রেণিতে ৩৬ জন ছাত্রছাত্রী। এর মধ্যে ৯ জন ছাত্রী আর ২৭ জন ছাত্র। বর্তমানে স্কুল খোলার পর বাল্যবিয়ের বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে; যা খুবই দুঃখজনক। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি মেয়েদের পড়ালেখামুখী করতে।

এই এলাকার বাসিন্দা নাজিম আলী বলেন, মেয়ে লোকের ফুট ভাসলে (১২-১৩ বছরে) বিয়ে দিতে হয়। আমাদের সরকার কী কবাইছে জানে ২১, ২২, ২৩, ১৮, ১৯, ২০ বছর হলে কে নিবে মেয়েকে? কেউ নিবে নয়। মেয়ে যত বড় হবে- দুই, আড়াই, তিন, পাঁচ লাখ টাকা ডিমান্ড হবে। মেয়ের একটু বয়স হলেই কয় এক লাখে হবার নয়, হাত-পায়ের সোনা দেয়া নাগবে। সেজন্য প্রত্যন্ত এলাকার মেয়েদের অল্প বয়সেই বিয়ে দেয় বাবা-মা এমন দাবি তাদের।

একই এলাকার বাসিন্দা বুলবুলি বেগম বলেন, তাড়াতাড়ি বিয়ে দেই হামরা গরিব মানুষ। মেয়ে ছইল যত বড় হইব তত ডিমান্ড হার বাড়ব। মেয়ে যদি মেট্রিক পাশ করাই তাইলে ছেলে নেয়া লাগবো ইন্টার পাশ। সেই সামর্থ্য যদি হামরা করবার না পারি সেজন্য ছোটতে মেয়ের বিয়ে দেই।
 
একই এলাকার আহাম্মদ আলী বলেন, বাল্যবিয়ে তো এলাকায় হয় না। মেয়েপক্ষ আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে বিয়ে দেয় গোপনে। কেউ এক ইউনিয়ন থেকে অন্য ইউনিয়ন, আবার কেউ উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় নিয়ে গিয়ে বিয়ে দেয়। বিয়ের কথা সঙ্গে সঙ্গে প্রকাশ না করে ১৫ দিন, এক মাস পর প্রকাশ করে বাবা-মা।

ইউনিয়নের ৪নং ইউপি সদস্য বাহিনুর রহমান বলেন, জেলা সদর হলেও ধরলা নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন এই ওয়ার্ড। এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় প্রশাসনের লোকজনকে বেগ পেতে হয়। এছাড়াও যারা বিয়ে দেন তারা গোপনে এসব বাল্যবিয়ে দেন অন্যত্র। এজন্য আমাদের কাছে সংবাদ আসে না।

একই এলাকার উত্তর হলোখানা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল রাজ্জাক বলেন, তার বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৪২ ছাত্রীর মধ্যে ২ জন, সপ্তম শ্রেণিতে ৪৫ ছাত্রীর মধ্যে ২ জন এবং অষ্টম শ্রেণিতে ৩৩ জন ছাত্রীর মধ্যে ৫ জন ছাত্রী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে।

বেসরকারি সংস্থা প্লান বাংলাদেশের তথ্যানুযায়ী, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত জেলায় মোট বিয়ে সংঘটিত হয়েছে ২২ হাজার ৩৯১টি। এর মধ্যে নিবন্ধিত বিয়ে ১৯ হাজার ২২১টি এবং অনিবন্ধিত বিয়ে ৩ হাজার ১৭০টি। জেলার ৯টি উপজেলায় বাল্যবিয়ে সংঘটিত হয়েছে ৩ হাজার ১৯টি। এর মধ্যে কুড়িগ্রাম সদরে ৭৩০টি, রাজারহাট ৭৪টি, উলিপুর ২৬১টি, চিলমারী ১৪৬টি, রৌমারী ৮৮টি, রাজিবপুর ৫০টি, নাগেশ্বরী ১ হাজার ১৪০টি, ফুলবাড়ি ২৯১টি, ভূরুঙ্গামারীতে ২৩৯টি বাল্যবিয়ে হয়েছে। এছাড়াও বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ হয়েছে এক হাজার ১৩৬টি।

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে
Small Banner