ঢাকাঃ উত্তরবঙ্গের প্রাচীন ও বৃহৎ পর্যটন স্পট স্বপ্নপুরী দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে সেই স্বপ্নপুরীর আফতাবগঞ্জে এবার বিশ্বখ্যাত তাজমহলের অনুসরণে নির্মাণ হচ্ছে মসজিদ।এক বিঘা জমির উপর দাঁড়িয়ে থাকা মসজিদটি বাইরে থেকে দেখতে মনে হবে যেন তাজমহল। নির্মাণকাজ শেষ না হলেও এরই মধ্যে মসজিদটি দেখতে ভিড় করছে মানুষ। আফতাবগঞ্জ বাজারের পুরোনো মসজিদটিতে স্থান সংকুলান না হওয়ায় নির্মাণাধীন মসজিদটিতে শুক্রবারে জুমার নামাজ আদায়ও শুরু করেছেন এলাকার মুসল্লিরা।
জানা যায়, মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে। দীর্ঘ ৭ বছর ধরে নিজের তত্ত্বাবধানে মসজিদটি গড়ে তোলেন স্বপ্নপুরীর স্বত্বাধিকারী দেলোয়ার হোসেন। কোন বিশেষজ্ঞ আর্কিটেকচার বা ইঞ্জিনিয়ার ছাড়াই তাঁর নিজস্ব ডিজাইন ও পরিকল্পনায় গড়ে উঠছে মসজিদটি এবং নিজস্ব পরিকল্পনায় তাজমহলের অনুসরণে নির্মাণ শ্রমিকদের দিয়ে মসজিদটির নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
চার তলাবিশিষ্ট মসজিদটি নিচতলায় থাকবে একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি। যেখানে থাকবে ধর্মীয় বিভিন্ন গবেষণামূলক বই। পাশেই থাকবে সেমিনার কক্ষ। সেখানে ধর্মীয় বিতর্ক কিংবা আলোচনা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা যাবে। থাকবে তাবলিগ, জামাত কিংবা জ্ঞান অন্বেষণে আসা লোকদের জন্য থাকার সুব্যবস্থাও।
দ্বিতীয় তলা থেকে চতুর্থ তলা পর্যন্ত তিনটি ফ্লোরে ২০ হাজার স্কয়ার ফিটের এ মসজিদে প্রায় ৫ হাজার লোকের নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে। তৃতীয় তলায় মহিলাদের জন্য নামাজের ব্যবস্থা থাকবে। ১৬টি পিলারের ওপর তৈরি এ মসজিদে রয়েছে ৩২টি ছোট মিনার। চারকোনায় রয়েছে চারটি সুউচ্চ গম্বুজ। যেগুলোর প্রতিটির উচ্চতা ৯৭ ফিট। বাংলাদেশ ছাড়াও চীন, ভারত ও ইতালিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গ্রানাইট, টাইলস, মার্বেল পাথরসহ বিভিন্ন মূল্যবান সামগ্রী মসজিদটি নির্মাণে ব্যবহার করা হচ্ছে। মসজিদের দেয়াল, ছাদসহ গোটা মসজিদ জুড়ে বিভিন্ন নকশা, আরবি ক্যালিগ্রাফি ও চাঁদ-তারাসহ বিভিন্ন ডিজাইন স্থান পেয়েছে। সেখানে প্রতিদিন কাজ করছেন রাজমিস্ত্রি, টাইলস মিস্ত্রিসহ প্রায় শতাধিক শ্রমিক।
আফতাব হোসেনের নাতি ও স্বপ্নপুরীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক বলেন, আমার দাদু মরহুম ডাঃ আফতাব হোসেনের নামে এই বাজারটির নামকরণ করা হয়। তাঁর হাত ধরে এখানে মসজিদ, স্কুল কলেজসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। পূর্বের মসজিদটি পুরোনো হয়ে যাওয়ায় ও মুসল্লিদের স্থান সংকুলান না হওয়ায় পারিবারিকভাবে নতুন করে একটি মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা করেন আমার বড় আব্বা দেলোয়ার হোসেন। কয়েক শতাব্দী পেরোলেও তাজমহল নিজস্ব মহিমায় ভাস্কর থাকায় এর আদলে মসজিদটি নির্মাণ করার পরিকল্পনা করা হয়। এ জন্য মসজিদ নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মিস্ত্রিসহ একাধিক লোককে সঙ্গে নিয়ে একাধিকবার তাজমহলসহ ভারতের বিভিন্ন মসজিদ পরিদর্শন করা হয়েছে।
মসজিদটির নির্মাণ খরচের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মসজিদ নির্মাণে কোন বাজেট নির্ধারণ করা নেই। মসজিদটি নির্মাণে যত টাকা লাগবে তা ব্যয় করা হবে। তবে এ পর্যন্ত প্রায় ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকার মতো খরচ হয়ে গেছে।
মসজিদের উদ্যেক্তা দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমার বাবা প্রথমে আফতাবগঞ্জ বাজারে একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন যা এখনো দৃশ্যমান, সেই মসজিদে মুসল্লী বেড়ে যাওয়াতে নামাজ আদায় করতে কষ্ট হয় । এজন্যই এলাকার মুসল্লীর নামাজ আদায়ের জন্য ব্যতিক্রম একটি মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে, তবে বর্তমানে যে মসজিদটি নির্মাণ করা হচ্ছে আগামী ৫০ বছরেও সেখানে মুসল্লীদের নামাজ আদায় করতে কোনো সমস্যা হবে না। আগামী বছরে এপ্রিল মাসে মসজিদটি উদ্বোধনের ইচ্ছা ছিল। কিন্তু এটি নির্মাণে আরও ২-৩ বছর সময় লাগতে পারে।