1. প্রচ্ছদ
  2. জাতীয়
  3. সারাবাংলা
  4. রাজনীতি
  5. রাজধানী
  6. আন্তর্জাতিক
  7. আদালত
  8. খেলা
  9. বিনোদন
  10. লাইফস্টাইল
  11. শিক্ষা
  12. স্বাস্থ্য
  13. তথ্য-প্রযুক্তি
  14. চাকরির খবর
  15. ভাবনা ও বিশ্লেষণ
  16. সাহিত্য
  17. মিডিয়া
  18. বিশেষ প্রতিবেদন
  19. ফটো গ্যালারি
  20. ভিডিও গ্যালারি

হরিরামপুরে নদীভাঙনের হুমকিতে গোপীনাথপুর

অপু সাহা, হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২১, ০৩:৪৩ পিএম হরিরামপুরে নদীভাঙনের হুমকিতে গোপীনাথপুর
ছবি : আগামী নিউজ

মানিকগঞ্জঃ "তিন-চার বছর আগে আমাদের স্বামীদের পৈতৃক ভিটা, জায়গা জমি এমনকি শশুড়ের কবরটিও পদ্মায় ভেঙ্গে নেয়। পড়ে ওখান থেকে এখানে এসে নিচু জমিতে মাটি ভরাট করে আমাদের স্বামীরা চার ভাই মিলে বাড়ি করে কোনভাবে দিনযাপন করছিলাম। কিন্তু এইবছর আবার ভাঙ্গন শুরু হওয়ায় ভাঙ্গনের হুমকিতে রয়েছে আমাদের ঘরবাড়ি। কেননা আমাদের বাড়ি থেকে মাত্র ৫০ হাত দূরেই পদ্মা নদী। এখন ভাঙ্গলে আমাদের আর যাওনের জায়গা নাই। আমরা সরকারের কাছে আর কিছু চাইনা, আমরা চাই সরকার যেনো আমাগো জন্য দ্রুত একটা বেঁরিবাধ দিয়া দেয়। যাতে আমরা এই মাটিতেই মইরা যাইতে পারি।"

কথাগুলো মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার গোপীনাথপুর উজানপাড়া এলাকার দুই গৃহবধূ কমেলা বেগম ও ছাবিহা বেগমের। সম্পর্কে তারা দুইজন জা।

পদ্মা নদীতে অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে স্রোতের কারণে এবার ভাঙনের কবলে পড়েছে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়ন। গত চার দিনে ইউনিয়নের উজানপাড়া এলাকায় পদ্মার ভাঙনে কয়েকটি পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে নদীপাড়ের আরও শতাধিক পরিবার। ভাঙনের ভয়ে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি পরিবার তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়েছেন। কেটে নিয়ে যাচ্ছেন গাছপালা।

স্থানীয়রা জানান, উজানপাড়া এলাকায় নদীপাড়ে শতাধিক পরিবারের বাস। প্রায় প্রতিটি পরিবারই এক থেকে চারবার নদীভাঙনে বসতভিটা হারিয়ে এখানে এসেছেন। গত শুক্রবার থেকেই প্রবল স্রোতের কারণে শুরু হয়েছে ভাঙন। তবে পানিতে তলিয়ে থাকায় কতখানি ভাঙছে তা এমনিতে বোঝা যাচ্ছে না, শুধু গাছপালা ভেঙে গেলেই বোঝা যাচ্ছে। জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ বারবার ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। গতকাল সোমবার দুপুর পর্যন্ত জনপ্রতিনিধি বা প্রশাসনের কেউ ভাঙন পরিদর্শনে আসেনি।

ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকা পরিবারগুলোর বেশিরভাগেরই অন্য কোথাও আশ্রয় নেওয়ার মতো জায়গাজমি নেই। তাই, জরুরি ভিত্তিতে ভাঙনরোধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ স্থায়ী বাঁধের দাবি জানান তারা।

নদীর ভাঙনের হুমকিতে থাকা তিন ভাই মনছের মোল্লা, গোপাল মোল্লা ও ইমরান মোল্লা জানান, চার বছর আগে একবার এই ভাঙন হয়েছিলো। সেসময় এখানকার প্রায় শতাধিক পরিবার গৃহহারা হয়েছেন। চার বছর পর আবারও ভাঙন শুরু হয়েছে। যার কারণে অল্প দামেই আমাদের তিন ভাইয়ের একটি মেহগনি গাছের বাগান বিক্রি করে দিতে হয়েছে। তবে, যার কাছে বিক্রি করেছি তিনিও বাগানের তিন ভাগের এক ভাগ গাছ কাটতে পারলেও বাকি গাছগুলো পদ্মায় চলে গেছে।

গোপীনাথপুর উজানপাড়া গ্রামের শেখ জামাল (৪৫) বলেন, সাতবছর আগে একবার পদ্মার ভাঙনের ভূমিহীন হয়ে পড়েছিলাম। পরে পদ্মা নদী থেকে কয়েকশ হাত দূরে এখানে একজনের জমিতে এসে আশ্রয় নিয়েছি। সেটাও এখন ভাঙনের মুখে থাকায় অন্যত্র সরিয়ে নিতে হচ্ছে। আমার মতো নদীর ভাঙনের হুমকিতে থাকা অনেকেই তাদের ঘরবাড়ি নিয়ে অন্যের জায়গায় ঠাঁই নিয়েছে। 

বৃদ্ধ ফয়েজ উদ্দিন আক্ষেপ নিয়ে বলেন, "আমরা নদী ভাঙ্গুনী। সরকারের কাছে আমরা ত্রাণ, চাউল বা খাওয়ার জন্য কিছু চাইনা। আমরা যারা স্থানীয় তারা যেনো এই গ্রামে থাকতে পারি। এই গ্রামে থেকেই মারা যেতে পারি। সেজন্য সরকারের সাহায্য চাই। আমরা চাই স্থায়ী একটা বাঁধ হোক।" এছাড়া বিভিন্ন সময় জনপ্রতিনিধিরা এসে শুধু আশ্বাসই দিয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত সেই আশ্বাস বাস্তবায়ন হয়নি বলেও জানান তিনি।

গোপীনাথপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কুদ্দুস বলেন, "ভাঙনের বিষয়টি আমি শুনেছি। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে ওখানে যেতে পারিনি। আগামীকাল আমি ওখানে যাবো।"

মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, "ঊধ্বর্তন কতৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। আশা করছি আমরা তিন-চার দিনের মধ্যেই জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করতে পারবো।"

চলতি বছর ঘূর্ণিঝড় 'ইয়াস' এর পর থেকেই হরিরামপুরে শুরু হয়েছে নদীভাঙন। গত মে মাসের শেষের দিকে ভাঙন শুরু হয় উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নে। ভাঙনে ফসলি জমিসহ প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ভাঙন আতঙ্কে শতাধিক পরিবার বাড়িঘর সরিয়ে নেয়। জুলাইয়ের শুরুতে উপজেলার পদ্মা তীর সংরক্ষণ বাঁধের বেশ কিছু জায়গায় ধ্বস এবং পরবর্তীতে ভাঙন শুরু হয়। এরপর জুলাইয়ের শেষের দিকে ভাঙন শুরু হয় উপজেলার চরাঞ্চল সুতালড়ি ইউনিয়নে। ভাঙনের কবলে পড়ে শতাধিক পরিবারের বসতভিটা, ফসলি জমিসহ সুতালড়ী রামচন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এরপর গত কয়েকদিন যাবত তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে পদ্মার চরাঞ্চল আজিমনগর ইউনিয়নে। ভাঙনে আজিমনগর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, ফসলি জমি, মসজিদ ভেঙে গেছে। ভাঙনের কবলে রয়েছে বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, আশ্রয়ন প্রকল্প ও বাড়িঘর।

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে
Small Banner