হবিগঞ্জঃ জেলার হাওরের একটি নৌকায় স্বামীর সামনে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক গৃহবধূ। ঘটনাটি ঘটেছে লাখাই উপজেলার টিক্কাপুর হাওরে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে লাখাই উপজেলা ছাত্রলীগ যুগ্ম আহ্বায়ক সোলায়মান হোসেন রনিসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
গ্রেপ্তার অপর দুজন হলেন উপজেলার মোড়াকড়ি গ্রামের মিঠু মিয়া (২১) ও শুভ মিয়া (১৯)।
ধর্ষণের শিকার গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে হবিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এ বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) মামলা দায়ের করেন।
আটজনের বিরুদ্ধ দায়ের করা মামলায় অন্য আসামিরা হলেন, মোড়াকরি গ্রামের বাসিন্দা মুছা মিয়া (২৬), হৃদয় মিয়া(২২), সুজাত মিয়া(২৩), জুয়েল মিয়া (২৫) ও মুছা মিয়া (২০)।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ২৫ আগস্ট স্বামী তার স্ত্রী ও বন্ধুকে নিয়ে নৌকা ভ্রমণের জন্য বাড়ি থেকে বের হন। বেলা ১২টার দিকে তাদের নৌকা কৃষ্ণপুর গ্রামের পাশে টিক্কাপুর হাওরে পৌঁছায়। ইঞ্জিনচালিত আরেকটি নৌকায় করে আসামিরা তাদের ঘেরাও করে। এ সময় মুছা মিয়া, সুজাত মিয়া, জুয়েল মিয়া ভিকটিমের স্বামী, স্বামীর বন্ধু ও নৌকার মাঝিকে প্রচণ্ড মারধর করেন। এরপর তারা তাদের হাত-পা বেঁধে রাখেন। নৌকার মাঝি নিতেশ দাসকে খুনের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক হাওরের স্লুইস গেটে নৌকাটি নিয়ে যেতে বাধ্য করেন। সেখানে নিয়ে গিয়ে আসামিরা নৌকায় উঠে পালাক্রমে প্রায় দু'ঘণ্টা ওই নববধূকে ধর্ষণ করেন। এক পর্যায়ে ওই গৃহবধূ অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এরপর স্বামী ও স্বামীর বন্ধুর কাপড়-খুলে তার পাশে শুইয়ে তাদের উলঙ্গ ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন আসামিরা। তারা ৯ লাখ টাকা না দিলে এসব ছবি ও ভিডিও ভাইরাল করে দেবেন বলে হুমকি দেয়। মামলা-মোকদ্দমা কিংবা লোক জানাজানি করলে তাদের হত্যা করে লাশ পানিতে ভাসিয়ে দেয়ার হুমকিও দেন তারা। বিকাল ৩টার দিকে তাদের এ অবস্থায় ফেলে রেখে ধর্ষকরা চলে যায়। পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তারা বাড়িতে পৌঁছায়।
বাদী জানান, লোকলজ্জা ও ধর্ষকরা অত্যন্ত প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে স্ত্রীর চিকিৎসা না করে পার্শ্ববর্তী নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা করেন। কিন্তু পরবর্তীতে তার শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি হয়। তাকে ১ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ব্যাপারে লাখাই থানা অফিসার ইনচার্জ সাইদুল ইসলাম জানান, পুলিশ অভিযুক্ত শুভকে বৃহস্পতিবার সকালে গ্রেপ্তার করেছে। এ ছাড়া র্যাব-৯ বুধ ও বৃহস্পতিবার অভিযান চালিয়ে রনি ও মিঠুকে গ্রেপ্তার করেছে।
হবিগঞ্জ হাসপাতালের আবসিক মেডিকেল অফিসার মঈন উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন ওই নারী সুস্থ রয়েছেন। তবে তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ইতিমধ্যে তার ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।