নীলফামারীঃ নিঝুম রাত। চারদিক শুনসান। নেই ঝিঝি পোকার ডাক। জোনাকি পোকাড় আলোও নজড়ে পড়ছে না। নিমগ্ন মোবাইল হাতে বসে আছে ওরা ১০৭ জন। স্থানীয় মানুষ তাদের আখ্যা দিয়েছেন করোনা মুক্তিযোদ্ধা।
নীলফামারীর সৈয়দপুরে মুমর্ষ করোনা রোগিদের বাঁচাতে অক্সিজেন সরবরাহ করতে পাশে দাড়িয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোখছেদুল মোমিন এবং ইকু শিল্প গ্রুপের মালিক আলহাজ্ব সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিক। মহামতি এই দুই ব্যক্তি করোনা যুদ্ধে সেনাপতির ভূমিকা পালন করছেন।
আর রাজনৈতিকভাবে করোনা সংক্রমন রুখতে মাঠে-ঘাটে, গ্রামে-গঞ্জে সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করছে রুহুল আলম মাস্টারের নেতৃত্বে ওয়ার্কার্স পার্টির সৈয়দপুর শাখা। জনগনের এই পার্টি তাদের সাধ্যমত স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীও বিতরণ করছে। করোনা যুদ্ধের এই মাঠে তেভাগা আন্দোলনের লড়াকু নেতা তন্নানারায়ন ব্রিগেড তারা গঠন করেছে। কোভিডের বিরুদ্ধে এমন কর্মকান্ড চলার ফলে দেশের অন্যান্য এলাকার চেয়ে সৈয়দপুরে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার অনেক কমে এসেছে বলে সমাজ সচেতন মানুষ বলছেন।
অতিমারির এ সময়ে ডেল্টা ভেরিয়েন্ট প্রতি বাড়ির দরজায় কড়া নাড়ছে। কখন কার বাড়িতে ঢুকে আঘাত হানবে সেই আতংক সারাক্ষণ মানুষকে খুবলিয়ে খাচ্ছে। কিন্তু ডেল্টা ভেরিয়েন্টকে প্রতিহত করতে সর্বদা প্রস্তুত হয়ে আছে উঠতি বয়সের ১০৭ জন তরুন ও তরুণী। তারা মোবাইল ফোন নিয়ে সারাক্ষণ বসে আছে। খবর আসা মাত্র দ্রুত বাইকে চেপে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে রোগির বাড়িতে পৌছে যাচ্ছে। পেশাদার সেনাবাহিনীর আদলে করোনা মুক্তিযোদ্ধারা প্রস্তুতি নিয়ে থাকে।
গত ২০ জুলাই হতে সৈয়দপুরে করোনা রোগীদের অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করা শুরু হয়েছে। এসব যুবক ও যুবতী নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে করোনা রোগিদের সেবা করছে। সে জন্য সাধারণ মানুষ তাদেরকে করোনা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। বিশিষ্টজনদের কথা ৭১ সালে দেশ থেকে হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করতে যুবক ও যুবতীরা জীবনের মায়া ত্যাগ করে যুদ্ধে নেমেছিল। ঠিক ২০২১ সালে কোভিড-১৯ কে পরাভূত করতে তরুন ও তরুনীরা ঝাপিয়ে পড়েছে। সেদিন দেশকে মুক্ত করতে যারা যুদ্ধে নেমেছিলো তারা যেমন মুক্তিযোদ্ধা, ঠিক তেমনি করোনা প্রতিরোধে যারা জীবনের পরোয়া না করে মাঠে কাজ করে যাচ্ছে তারাও করোনা মুক্তিযোদ্ধা।
উপজেলা চেয়ারম্যানের তত্ত্বাবধানে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছে ৫৪ জন এবং শিল্পপতি আলহাজ্ব সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিকের সহযোগিতায় ৩ জন তরুনীসহ ৫৩ জন করোনা যোদ্ধা মাঠে রয়েছে। কথা হয় উপজেলা চেয়ারম্যানের করোনা ব্রিগেডের মুখপাত্র সালেহ উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, তাদের টিমের সদস্য সংখ্যা চিকিৎসক ও উপদেষ্টা মিলে ৫৪ জন। প্রতিদিন তারা গড়ে ৭/৮জন রোগির বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করছেন। প্রয়োজনে ২/৩টি সিলিন্ডারও একেকজন রোগিকে দিতে হচ্ছে। তাদের হাতে সবসময় মজুদ থাকছে ২০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার।
এদিকে আলহাজ্ব সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিকের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সংযোগ সৈয়দপুর’র’ সভাপতি ইরফান আলম ইকু বলেন, খবর পৌছার সঙ্গেই আমাদের স্বেচ্ছাসেবক সদস্যরা বাইকে চেপে সিলিন্ডার নিয়ে রোগির বাড়িতে পৌছে যাচ্ছে। যে রোগির যতটি সিলিন্ডার প্রয়োজন হচ্ছে সেই চাহিদা মোতাবেক সরবরাহ করা হচ্ছে অক্সিজেন।
‘সংযোগ সৈয়দপুর’ সবসময় কমপক্ষে ২০ থেকে ২২টি অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুদ রাখছে। আবার অক্সিজেন দেয়া শেষ হলে সেই সিলিন্ডার সঙ্গে সঙ্গে করা হচ্ছে রিফিল। তার মতে কোন ভাবেই যেন অক্সিজেনের অভাবে কোভিড-১৯ আক্রান্ত সৈয়দপুরের কোন মানুষ যাতে মারা না যায় সেই চিন্তাকে মাথায় রেখেই অবিরামভাবে কাজ করা হচ্ছে।
তবে সমাজের বিশিষ্টজনরা বলছেন উপজেলা চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন, শিল্পপতি আলহাজ্ব সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিক এবং রুহুল আলম মাস্টারের নেতৃত্বে করোনা মোকাবেলায় ওয়ার্কার্স পার্টি যেভাবে কাজ করে যাচ্ছে, অন্য রাজনৈতিক দল ও জনপ্রতিনিধিরা মাঠে থাকলে সৈয়দপুরের মানুষ আরো বেশি উপকৃত হতো। তাদের মতে, এ দুর্যোগ মুহূর্তে স্থানীয় এমপির কোন ভূমিকা নেই। এমপি মাঠে থাকলে জনগনের মাঝে সাহস ও শক্তি বৃদ্ধি পেত। কিন্তু স্থানীয় এমপি আলহাজ্ব আদেলুর রহমান আদেলের টিকিটিও দেখা যাচ্ছে না। পুরোপুরি তিনি গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।
সাধারণ মানুষ আক্ষেপ করে বলছেন, জাপা (এ) মনোনীত লাঙ্গল মার্কার বর্তমান এমপি বসন্তের কোকিল হয়ে এসে জুড়ে বসে আছে। জনগনের কোন কাজে আসছে না। তার বাবা মরহুম ড. আসাদুর রহমানও এই আসনের যখন এমপি ছিলেন তিনিও কখনও জনগনের কাজে আসেননি। পিতা ও পুত্রের একই রূপ পরিলক্ষিত হচ্ছে।