দিনাজপুরঃ বড় পুকুরিয়া কয়লা খনিতে কর্মরত ৩০ চীনা শ্রমিক করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। ফলে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে খনির উৎপাদন কর্মকান্ড।
বুধবার ২৮ জুলাই এ খবর ছড়িয়ে পড়লে দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার সর্বত্র করোনা আতংক বিরাজ করে। গত ২৫ জুলাই কমপক্ষে ৫০ জন চীনা নাগরিক অসুস্থ হলে তাদের করোনা টেস্ট করা হয়। টেস্টে ৩০ চীনা নাগরিকের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে।
এ খবর খনির অভ্যন্তরে ছড়িয়ে পড়লে সেখানে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। খনির ভিতরেই তাদের কর্তৃপক্ষ কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করতে চাইলে শ্রমিকরা তা মেনে নেয়নি। শ্রমিকরা দাবি তোলে কোনো ভাবেই তারা খনি অভ্যন্তরে কোয়ারেন্টাইনে থাকবে না, তারা বাড়ি ফিরে যাবে। দাবি আদায়ে শ্রমিকরা খনিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে। ফলে কর্তৃপক্ষ তাদের বাড়িতে ফেরার অনুমতি দেয়। খনির অভ্যন্তর থেকে শ্রমিকরা বাড়ি ফিরলে করোনা বিস্তারের খবর লোকালয়ে চলে আসে। দেখা দেয় খনির আশপাশ এলাকায় করোনা আতংক।
এদিকে খনি এলাকা শ্রমিক শুন্য হওয়ায় কর্তৃপক্ষ উৎপাদনও বন্ধ করে দেয়। কথা হয় খনি শ্রমিক নেতা নূর ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনেই বাংলাদেশী শ্রমিকরা খনি অভ্যন্তরে কাজ করতো। গত বছর করোনা শুরু হলে খনির উৎপাদন কার্যক্রম সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে গেল বছরের সেপ্টেম্বর মাসে কয়লা খনির ফের উত্তোলন কাজ শুরু হয়। চালু করা হয় কঠোর স্বাস্থ্যবিধি। পুরো খনি এলাকায় দেশিও নিবন্ধিত শ্রমিকের সংখ্যা ১ হাজার ১৪২ জন। এর মধ্যে ৬০০ শ্রমিক কর্মরত ছিলেন।
এদিকে দেশিও শ্রমিকদের পাশাপাশি খনিতে ৩০০ চীনা শ্রমিকও কাজ করতো। বাঙালি শ্রমিকরা কাজ শেষে খনির ভেতর থেকে বের হতো না। কিন্তু চীনা শ্রমিকরা বিভিন্ন অজুহাতে খনির বাইরে লোকালয়ে যেত। কেনাকাটা করতো স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়াই। আর তাদের কারণেই খনির ভেতরে করোনা ভাইরাস চলে আসে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
একসাথে কাজ করতে গিয়ে আমাদের দেশিও শ্রমিকরা যে করোনায় আক্রান্ত হয়নি সেই নিশ্চয়তাও দেয়া যাবে না। তার মতে আমরা কাজ করি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অধীনে। চীনের এক্সএমসি-সিএমসি কনসোর্টিয়াম নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কয়লা উত্তোলন করে। এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শর্ত দিয়ে সেখানে আমাদের কাজ দিয়েছে। আর তা হলো কাজ আছে বেতন আছে, কাজ নেই বেতন নেই। খনির উৎপাদন বন্ধ হওয়ায় আমরা পুরোপুরি বেকার। এমন অবস্থা কতদিন চলবে তাও নির্দিষ্ট করে বলেনি খনি কর্তৃপক্ষ কিংবা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
দীর্ঘ ১১ মাস পর আমরা দেশি শ্রমিকরা খনির বাইরে আসলাম। খনি কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্যমতে বর্তমানে কয়লার মজুদ আছে ৩ লাখ টন। যা দিয়ে বড় পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র চলবে এ বছরের নভেম্বর মাস পর্যন্ত। এ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৫২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। যা দিয়ে দেশের অনেকাংশে বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো সম্ভব। তবে খনি কর্তৃপক্ষ আরো জানিয়েছে বর্তমানে যে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কয়লা উত্তোলন করছে তাদের চুক্তির মেয়াদ এ বছরের ১১ আগস্ট শেষ হবে। চুক্তিকৃত কয়লা উত্তোলনের লক্ষ্যমাত্রা তারা ২০ জুলাইয়ে শেষ করেছে। আগামী চুক্তির ক্ষেত্রে রদবদল হতে পারে।
জানতে চাইলে বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী কামরুজ্জামান খান মুঠোফোনে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে আগামী নিউজকে বলেন কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনেই খনির উৎপাদন প্রক্রিয়া অব্যাহত ছিলো। তবে কেন করোনা ভাইরাস খনির ভেতরে ছড়িয়ে পড়লো তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।