ব্রাহ্মণবাড়িয়াঃ জেলায় প্রায়ই ৩০ লক্ষ মানুষের বসবাস। তাদের একমাত্র ভরষা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল বা জেলা সদর হাসপাতাল।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে প্রতিদিন দুই ২০০শ অধিক রোগী ভর্তি থাকেন। প্রতিটি ওয়ার্ডেই প্রচুর রোগীর চাপ থাকে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা ছাড়াও আর ৮টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে এই হাসপাতালে চিকিৎসা-সেবা নিতে আসেন রোগীরা। এত রোগীকে চিকিৎসা দিতে হিমশিম অবস্থা পড়তে হয় চিকিৎসক-নার্সদের। তারপরও তাঁদের নিরলস প্রচেষ্টায় অধিকাংশ রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান।
ঈদেও চিকিৎসা সেবায় কোনো বিঘ্ন ঘটে না। সদর হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের আন্তরিক প্রচেষ্টায় প্রতিবছর ঈদের দিনেও চিকিৎসাসেবা পেয়ে থাকেন রোগীরা। তবে ঈদের সময় অধিকাংশ রোগীই ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তুলনামূলক যেসব রোগীর অবস্থা গুরুতর, তাঁরাই শুধু হাসপাতালে ভর্তি থাকেন। ঈদের দিন তাঁদের হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে-বসে সময় কাটানো ছাড়া কিছু করার থাকে না। রোগীদের মন পড়ে থাকে তাঁর বাড়িতে, যেখানে স্বজন-প্রতিবেশীদের নিয়ে ঈদ উদযাপন করেছেন জীবনভর।
এর আগে খুব জরুরি ছাড়া ঈদের ছুটির দিনে জেলা সদর হাসপাতালে কোন ধরনের অপারশন হয়নি। এবারই প্রথম একটি প্রসূতি মায়ের সিজার হয়েছে। সকালে জেলা শহরের পুনিয়াউট এলাকার মো. মুবারক উল্লাহর স্ত্রী লামিয়াকে (২০) প্রসব ব্যাথার কারনে হাসপাতালের গাইনী বিভাগে ভর্তি করা হয়। গাইনী বিভাগের নার্সরা লামিয়ার নরমাল ডেলিভারির জন্য অনেক চেষ্টা করেন। কিন্তু বিকেল হয়ে গেলেও লামিয়ার নরমালে ডেলিভারি করা যায়নি। পরে গাইনী চিকিৎসক জিনান রেজা এসে লামিয়াকে দেখেন এবং তিনি ঈদের ছুটিতে থাকা শর্তেও মানবিক দৃষ্টিকোণের কথা চিন্তা করে লামিয়ার সিজার করানোর সিদ্ধান্ত নেন। পরে এনেস্থিসিয়ান চিকিৎসক সৈয়দ আরিফুল ইসলামকে সাথে পরামর্শ করেন। বিকেল ৫টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে সফল ভাবে সিজারটি সম্পূর্ণ করেন। বর্তমানে প্রসূতি মা ও নবজাতক মেয়ে শিশুটি সুস্থ আছে।
এব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করলে গাইনী চিকিৎসক জিনান রেজা জানান, সত্যি আজকে আমি খুবই আনন্দিত। চিকিৎসক হয়ে চিকিৎসকের মত দায়িত্বটি পালন করেছি আজ। আমি ঈদের ছুটিতে থাকলে রোগীদের প্রতি আমাদের একটা দায়িত্ব থাকে বটে। যেহেতু রোগীর পরিবার আর্থিকভাবে পরিপূর্ণ না তাই ছুটির দিনেও এনেস্থিসিয়ায় চিকিৎসক সৈয়দ আরিফুল ইসলাম ও ওটির নার্সদের সাথে নিয়ে লামিয়ার সিজারটি সম্পূর্ণ করি। প্রসূতি মা ও কন্যা শিশুটি সুস্থ আছেন।
নবজাতকের বাবা মুবারক উল্লাহ আনন্দে আবেগাপ্লুত হয়ে জানান, আমি সামান্য একজন কাঠ মিস্ত্রী। সকালে যখন আমার স্ত্রীর প্রসব ব্যাথা উঠে তখন আমি আমার চোখমুখে কিছুই দেখছিলাম না। পরে আমি লামিয়াকে সদর হাসপাতালে নিয়ে এসে ভর্তি করি। কিন্তু বিকেলে পর্যন্ত আমার স্ত্রীর প্রসব ব্যাথাও কমছিল না। পরে গাইনী চিকিৎসক জিনান রেজা ম্যাডাম ও এনেস্থিসিয়ায় চিকিৎসক সৈয়দ আরিফুল ইসলাম স্যারের সহযোগীয় আমার স্ত্রীর সিজার করা হয়। আমি সত্যি ভাগ্যবান ছুটির দিনেও আমি সদর হাসপাতালে সেবা পেয়েছি। ম্যাডাম-স্যার সহ নার্সরা আমাকে অনেক সহযোগীতা করেছে। আমি তাদের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকবো।