ফরিদপুরে পেঁয়াজ বীজ চাষীদের মাথায় হাত !
প্রকাশিত: এপ্রিল ৩, ২০২১, ০৫:০১ পিএম
ছবিঃ আগামী নিউজ
ফরিদপুরঃ ক’দিনের ব্যবধানে ফরিদপুরে পেঁয়াজ দানার খেত গুলো পুরোটাই নষ্ট হতে বসেছে। প্রচন্ড তাপে পেঁয়াজ বীজের কদম শুকিয়ে তা পড়ে যাচ্ছে। দিন যত গড়াচ্ছে দানা পরিপক্ক হবার আগেই তা প্রচন্ড রৌদ্রের তাপে কদম গুলো শুকিয়ে ঝড়ে যাচ্ছে। ফরিদপুরের অম্বিকাপুর ইউনিয়নের প্রায় দুই হাজার কৃষকের সকলের এখন মাথায় হাত পড়েছে। এসকল কৃষকেরা এখন সামনের দিন গুলোতে দুঃস্বপ্ন দেখছেন। কিভাবে ঋন পরিশোধ করবেন তা নিয়েই চিন্তিত হয়ে পড়ছেন।
স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর পেঁয়াজ দানার দাম আশাতিত ভালো পাওয়ায় অনেকেই এবার অধিক জমিতে বীজের আবাদ করেছিলেন। শুরুতে পেঁয়াজের কদম দেখে খুশিতে মন ভরে উঠেছিল তাদের। স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন অনেক কৃষক। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়া এবং গত কয়েকদিন ধরে প্রচন্ড খরার কারনে মাঠের পর মাঠ পেঁয়াজ দানার কদম গুলো শুকিয়ে কালো হয়ে ঝড়ে যাচ্ছে। ফলে কয়েকদিনে ব্যবধানে কৃষকের স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিনত হয়েছে।
সারাদেশের মধ্যে ফরিদপুর জেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নেই বেশী পেঁয়াজ বীজের আবাদ হয়ে থাকে। এ এলাকার সিংগভাগ কৃষকই পেঁয়াজ দানার আবাদ করেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু এবার প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে হচ্ছে তাদের। অম্বিকাপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর, পূর্ব ভাষানচর, মধ্য ভাষানচর, পশ্চিম ভাষানচর, চর নশিপুর, ইজা দূর্গাপুর, হাজী ডাঙ্গী, চর জ্ঞানদিয়া, খালাসি দূর্গাপুরের সব মাঠের চিত্র একই। মাঠের পর মাঠ পেঁয়াজ দানার ক্ষেত প্রচন্ড রৌদ্রের তাপে পুড়ে যাচ্ছে।
ভাষানচর এলাকার কৃষক আব্দুস সামাদ জানান, তিনি এবার অধিক জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ করেছেন। গত বছর দাম ভালো পাওয়ায় এ বছর সব ফসল বাদ দিয়ে পেঁয়াজ বীজ আবাদেই তিনি টাকা খরচ করেছেন। কিন্তু এবার তিনি সর্বশান্ত হবার পথে। একই অবস্থা সিরাজুল ইসলাম নামের আরেক কৃষকের। তিনি এ বছর ২৫০ শতাংশ জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ করেছেন। বিভিন্ন স্থান থেকে ঋন নিয়েছেন। তাদের টাকা পরিশোধ কিভাবে করবেন তা নিয়ে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।
গোবিন্দপুরের কৃষানী নাজমা বেগম জানান, তিনি একটি ব্যাংক থেকে ২ লাখ টাকা ঋন নিয়ে পেঁয়াজ দানার আবাদ করেছেন। এবার বুঝি তার জায়গা জমি বিক্রি করে দেনা পরিশোধ করতে হবে।
দেশের মধ্যে পেঁয়াজ বীজের সবচে বেশী আবাদকারী ও দেশসেরা কৃষানী উপাধী পাওয়া শাহিদা বেগম আগামী নিউজকে জানান, এবার মাঠে ফলনের অবস্থা ভালো না। তিনি ব্যাংক থেকে ৭৫ লাখ টাকা ঋন নিয়ে পেঁয়াজ বীজের আবাদ করেছেন। ফলন বিপর্যয়ের কারনে এবার তিনি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাচ্ছেন।
শাহিদা বেগম আগামী নিউজকে জানান, বিগত ৩০ বছরের মধ্যে এবারই পেঁয়াজ বীজের আবাদ করে সবচে বেশী বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছেন কৃষকেরা। সরকার ঋনের সুদ মওকুফসহ প্রনোদনা না দিলে অনেক কৃষকই পথে বসে যাবেন বলে তার অভিমত।
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, প্রচন্ড তাপের কারনে পেঁয়াজের কদম গুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, বৃষ্টি না হওয়ায় মাটিতে রস নেই। ফলে ধীরে ধীরে কদম ঝড়ে যাচ্ছে। পেঁয়াজ বীজের জন্য ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা সহনীয়। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে ৩৭ থেকে ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকায় এমন বিপর্যয় শুরু হয়েছে। মাঝে মধ্যে বিশেষ কায়দায় ক্ষেতে পানি ছিটিয়েও কোন লাভ হচ্ছেনা। পানি দেবার কারনে কদম গুলো পচে যাচ্ছে। তাছাড়া ক্ষেতে পানি দিলে গোঁড়া নরম হয়ে গাছ পড়ে যায়। আর পানি দেবার কারনে ক্ষেতে লাগানো পেঁয়াজ থেকে ফের ছোট ছোট কদম বের হয়, ফলে মূল কদমটি নষ্ট হয়ে যায়।
কৃষকেরা আগামী নিউজকে জানান, এ বছর যে অবস্থা দাঁড়াচ্ছে তাতে করে দেশে পেঁয়াজ দানার সংকট দেখা দেবে। ফলে আগামী বছর পেঁয়াজের চরম সংকট হতে পারে। তারা জানান, এ অঞ্চলের কৃষকেরা সবকিছু বাদ দিয়ে শুধু পেঁয়াজ বীজের আবাদ করে থাকেন। অনেকেই বিভিন্ন ব্যাংক, এনজিও থেকে ঋন নেবার পাশাপাশি জায়গা জমি, সোনার গহনা বন্ধক রেখে টাকা নেন। অনেকেই গরু, ছাগল, গাছ বিক্রি, গহনা বিক্রি করে বীজ আবাদ করেছেন। তারা এবার সর্বশান্ত হয়ে যাবেন বলে জানান তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফরিদপুর জেলার মধ্যে অন্যান্য উপজেলা গুলোতে ফলনের তেমন একটা ক্ষতি না হলেও সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের বেশীর ভাগ ক্ষেতের ফলন নষ্ট হতে বসেছে।
এ বছর ফরিদপুর জেলায় রেকর্ড পরিমান ১ হাজার ১শ ৭৭ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ করেছে কৃষকেরা। গত বছর প্রতি মন বীজ বিক্রি হয়েছিল ২ লাখ টাকায়। ফলে লাভের আশায় কৃষকেরা অন্য ফসল বাদ দিয়ে পেঁয়াজ বীজের আবাদের দিকেই ঝুঁকেছিল। ফলনের বিপর্যয় হওয়ায় এবার কয়েকশ কোটি টাকা লোকসানের মধ্যে পড়বেন ফরিদপুর অঞ্চলের কয়েক হাজার কৃষক।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোঃ হযরত আলী আগামী নিউজকে বলেন, সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় পেঁয়াজ বীজের কদম শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলে কৃষকেরা এবার ফলন পাবেন অনেক কম। তিনি বলেন, পেঁয়াজ বীজের কৃষকেরা এবার লোকসানের মধ্যে পড়বেন। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারনেই এ বছর এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
আগামীনিউজ/এএস