
গাজীপুর: মুক্তিপণের দাবীতে দুই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করেছে অপহরণকারীরা। এ ঘটনায় জড়িত অপহরণকারী দুই খালাতো ভাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ ইতোমধ্যে একটি শিশুর লাশ উদ্ধার করেছে। অপর শিশুর লাশ উদ্ধারের জন্য বালু নদীতে ডুবুরীদের সহযোগীতায় উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
রবিবার (২১ মার্চ) বিকেলে এক সংবাদ গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি’র) উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ইলতুৎ মিশ (অপরাধ-দক্ষিণ) সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার পুটিয়া গ্রামের মৃত আলী জব্বার সর্দারের ছেলে আলী আকবর (২৪) এবং গাজীপুর মহানগরের গাছা থানার দক্ষিণ খাইলকৈর এলাকার মৃত মকবুল হোসেনের ছেলে আনোয়ার হোসেন (৩০)। এদের মধ্যে আকবর গাজীপুর মহানগরের হায়দারাবাদ তালতলা এলাকার আবুল হোসেনের বাড়ীর ভাড়াটিয়া।
জিএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ইলতুৎ মিশ জানান, গত ২০ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১ টার দিকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের গাছা থানাধীন পূর্ব কলমেশ^রের বেপারী বাড়ি মসজিদ রোডের পাশর্^বর্তী টিনশেড গার্মেন্টসের
সামনে থেকে তিন বছরের শিশু নিহাদকে অপহরণ করে অপহরণকারীরা। এসময় সেখানে সে খেলা করছিল। তার বাবা-মা স্থানীয় গার্মেন্টসে চাকুরি করেন। নিহাদকে না পেয়ে তার বাবা হানিফ আলী থানা অভিযোগ করেন। পুলিশ ঘটনাস্থলের সিসি টিভি ফুটেজে অপহরনকারীকে দেখা গেলেও তাকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। অবশেষে অপহরণের তিন দিন পর গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর শ্যামপুর থানাধীন করিমুল্লাবাগ এলাকায় নাসির উদ্দিন নাসুর তিনতলা ভবনের পানির ট্যাংকির ভেতর থেকে নিহাদের লাশ উদ্ধার করা হয়।
তিনি জানান, নিহাদ অপহরণের পর গত ৯ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টায় একই এলাকার এ্যারাইভ্যাল গার্মেন্টস এর পেছন হতে দুই বছর ৮ মাস বয়সের শিশু সুমাইয়া আক্তার সুমু ওরফে রুবা অপহৃত হয়। অপহরণকারীরা শিশুটির বাবার কাছে মোবাইল ফোনে ৫ লাখ টাকার মুক্তিপণ দাবী করে। এ ঘটনায়ও গাছা থানায় পৃথক আরেকটি মামলা হয়। একই এলাকায় এ দুটি অপহরণের ঘটনায় টনক নড়ে জিএমপি পুলিশের।
অবশেষে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ১৭ মার্চ অপহরণকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য আকবরকে প্রথমে গ্রেফতার করে পুলিশ। আকবরের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার খালাতো ভাই আনোয়ারকে ১৯ মার্চ তারগাছ এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা শিশু দুটিকে অপহরণ এবং অপহরণের পর হত্যার কথা স্বীকার করে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে নিহত শিশু নিহাদ ও সুমাইয়ার জামা কাপড় ও মুক্তিপণ আদায়ের জন্য অপহরণকারীদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
তবে সুমাইয়ার লাশ এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয় নি। তার লাশ উদ্ধারের জন্য ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় ডুবুরীদের সহযোগিতায় বালু নদীতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, অপহরণের পর সুমাইয়াকে হত্যা করা হয়। পরে নিহতের লাশ বস্তা বন্দি করে পূবাইল থানার নিমতলী ব্রিজের উপর থেকে তুরাগ নদীর শাখা বালু নদীতে ফেলে দেয়া হয়। পরে অপহৃত শিশু দুটি’র পরিধেয় জামা-কাপড় তাদের পরিবারকে দেখিয়ে মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা করেছিল বলে গ্রেফতারকৃত অপহরণকারীরা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জিএমপি’র সহকারি উপ কমিশনার (অপরাধ-দক্ষিণ) হাসিবুল আলম, গাছা জোনের এসি আহসানুল হক, গাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
আগামীনিউজ/মালেক