ফরিদপুরের দুই ভাইয়ের সম্পদের হিসাব দিলেন মেয়ে
সুমন ইসলাম, ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি প্রকাশিত: মার্চ ৯, ২০২১, ১২:১৭ পিএম
ছবিঃ সংগৃহীত
ফরিদপুরঃ গ্রেফতার হওয়া ফরিদপুরের আলোচিত দুই ভাই ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইমতিয়াজ হাসান রুবেল ও ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকতের সম্পদের হিসেব দিয়েছে পরিবার।
সোমবার রুবেলের মেয়ে যাওয়াতা আফনান রাদিয়ার পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সম্পদের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আমার বাবা রুবেল এবং চাচা বরকতের সম্পদ জব্দের হিসাবের যে বিবরণ বিভিন্ন পত্রিকা, ইলেট্রনিক্স মিডিয়ায় যেভাবে প্রকাশিত হয়েছে সে বিষয়ে কিছু তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে চাই।
যাওয়াতা আফনান রাদিয়া বলেন, আমার বাবা ও চাচার নামে ৫৭০৬ বিঘা জমি, ১৮৮টি ব্যাংক একাউন্ট ও ৫০টি গাড়ি যার মধ্যে বাস, ট্রাক ও ব্যক্তিগত গাড়ি রয়েছে বলে প্রচার হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে জমির পরিমাণ হবে ১২.৫০০০ একর কিন্তু দুদক যখন এসিল্যান্ড অফিসে জমির পরিমাণ চেয়েছিল তখন দুদকে পাঠানো চিঠিতে জমির পরিমান ভুলে ১২৫০০০ একর উল্লেখ করা হয়। পরবর্তীতে আমার বাবা জেলা প্রশাসকের কাছে এ বিষয়ে চিঠিও দিয়েছিল।
রাদিয়া আরো বলেন, আমার বাবা ২০০০ সাল থেকে সরকারি ঠিকাদারি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ফরিদপুর থেকে ৩বার সেরা করদাতা নির্বাচিত। জমির পরিমাণ ১৫৯ বিঘা, এর মধ্যে চর অঞ্চলে ৩০ বিঘা। চরে জমি প্রতি বিঘা মূল্য ২০০০০-২৫০০০ টাকা। কোম্পানির জন্য ৩টি ড্রাম ট্রাক, দুটি জিপ গাড়ি রয়েছে। কোম্পানির কাজে ব্যবহারের জন্য পে লোডার, রোলার রয়েছে এবং পুরাতন ২টা পানির গাড়ি আছে। ঢাকায় কোনো ফ্লাট বা জমি নেই। এমনকি ফরিদপুর মূল শহরে কোনো বাড়ি বা ফ্লাট নেই। আমরা দাদার পৈতৃক ভিটায় থাকি।
চাচা বরকতের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার কাকা সাজ্জাদ হোসেন বরকতের নামে ২০০ বিঘা জমি আছে। চর অঞ্চলে ৪০০ বিঘা জমির উপর একটি এগ্রো ফার্ম আছে। চরের জমি বিক্রি করলে ১ থেকে ১.০৭ কোটি টাকা পাওয়া যেতে পারে। চাচার নিজ নামে ১০টি টাটা বাস এবং ১০ টি বাস লিজিং কোম্পানির নামে রয়েছে। এছাড়া ৫-৭টা ড্রাম ট্রাক আছে। ঢাকায় কোনো ফ্লাট নেই। পৈতৃক বাড়িতে তিনি থাকেন। ক্রয়কৃত জমিতে কিছু সেমি পাকা দোকান রয়েছে। ফরিদপুর থেকে ২বার সেরা করদাতা নির্বাচিত হয়েছে। চরের জমি বিক্রি করলে ১ থেকে ১.০৭ কোটি টাকা পাওয়া যেতে পারে।
রাদিয়া বলেন, আমার চাচা ও বাবা ২জন সম্পূর্ণ আলাদা ব্যবসা করে। চাচা রাজনীতি করলেও আমার বাবা সেভাবে রাজনীতির সাথে জড়িত নয় এবং তার কোনো পদ পদবীও নাই। বাবা ও চাচাকে হাইব্রীড নেতা বলা হয় এবং বিএনপি এক নেতার সহযোগী ছিলো। তিনি বলেন, কেউ কী বলতে পেরেছে যে বিএনপির কোনো মিটিং মিছিলে বা পদে আমার বাবা ও চাচা ছিলো? এরপরও তাদের হাইব্রীড বললে কিছু বলার নেই। বাদশাহ মন্ডল নামে বাবার কোনো আপন চাচা নেই এবং আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার নামে আমাদের কোনো আত্মীয় নেই।
মামলার কিছু বিষয়ে অসঙ্গতি রয়েছে জানিয়ে রুবেলের মেয়ে রাদিয়া বলেন, একই মামলায় সিআইডি করলো ২০০০ কোটি টাকার মামলা আর দুদুক করলো ৭২ কোটি টাকার মামলা। গত ০৭/০৬/২০২০ তারিখে গ্রেফতারের পর পুলিশ সুপার প্রেস ব্রিফিং এ বললো বদরপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে যা ৯/০৬/২০২০ তারিখে সকল পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। অথচ অস্ত্রসহ সকল মামলার এজাহারে বলা হয়েছে বাইপাশ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরো জানান, ২০০০ কোটি টাকার মামলাকে অতি রঞ্জিত করা হচ্ছে। মামলায় বলা হয়েছে আব্বু ও চাচা মিলে ৩৭৫ কোটি ৬০ লাখ টাকার বৈধ উৎস পাওয়া গেছে। এটাও সম্পূর্ণ ভুল। আব্বু ও চাচা মিলে প্রায় ১০০ কোটি টাকা পাওয়া যাবে। এর বেশি না।
আমাদের বাসা ও অফিস উদ্ধার অভিযানের সময় কোনো সাংবাদিক বা ম্যাজিস্ট্রেটকে না রেখে নিজেদের ইচ্ছামত জব্দ তালিকা তৈরি করে মদ ও ইয়াবা দিয়ে মামলা সাজিয়েছে। আমাদের বাসা ও অফিসে তল্লাশীর নামে পুলিশ যে তান্ডব করেছে তা খুবই দুঃখজনক আমার ছোট কাকা সরকারি চাকরি করে তাকেও গ্রেফতার করা হয়েছিল। আমার বড় কাকা মানসিক ভাবে কিছুটা অসুস্থ তাকেও পুলিশ খুজছে। আমাদের পরিবারকে রাস্তায় নামিয়েছে।
ত্রিপল মার্ডার কেস নামে যে মামলা দেওয়া হয়েছিলো। সেই মামলার চার্জশিট দিয়ে ফাইনাল রিপোর্ট হয়ে গিয়েছিল। এই মামলা পূর্ণ তদন্তের নামে আমার বাবা ও কাকাকে ফাঁসানো হচ্ছে।
জাতীয় নির্বাচনের সময় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ একসাথে মটরসাইকেল যোগে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতো। সেই থেকে সাংবাদিক প্রবীর শিকদার কাকা এদের নাম দিয়েছে হেলমেট বাহিনী। নির্বাচনী প্রচারণার অংশগ্রহন করতো ছাত্রলীগ ও যুবলীগের স্ব স্ব সংগঠনের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক নেতৃত্বে।
ফরিদপুরে যারা ত্যাগী নেতারা সুস্পষ্ট করে বলতে পারবে যে কোনোদিন আমার বাবা ও কাকা দ্বারা তারা সংক্ষুদ্ধ হয়েছে বা ক্ষতি হয়েছে। অনেকে আমার বাবা ও কাকাকে দুর্নীতিবাজ হাইব্রীড বলে বক্তব্য দিচ্ছে নেতৃত্বে আসার জন্য।
কিছু কিছু মিডিয়ায় ২০০০ কোটি টাকার মামলাকে অতি রন্জিত করা হচ্ছে যা অনভিপ্রেত। মানি লন্ডারিং মামলা ডকুমেন্টরি মামলা। এই মামলায় বলা হয়েছে আব্বু ও কাকা মিলে ৩৭৫ কোটি ৬০ লাখ টাকার বৈধ উৎস পাওয়া গেছে।এটাও সম্পূর্ণ ভুল।আব্বু ও কাকা মিলে প্রায় ১০০ কোটি টাকা পাওয়া যাবে।এর বেশি কখনো পাওয়া যাবে না। বলা হচ্ছে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার করা হয়েছে যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এই সব ভিত্তিহীন কথা বলে আব্বু ও কাকার সম্পর্কে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এই সব অপপ্রচার চালাচ্ছে যাতে আব্বু ও কাকার জামিন না হয়। বিভিন্ন সময়ে কিছু কিছু ব্যক্তি মিডিয়ায় আব্বু ও কাকে নিয়ে কিছু অভিযোগ করেছে।
কিছু চ্যানেলে একটা নিউজ প্রচার করা হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে যে বাবু নামে এক লোক বলেছে যে ২৫লাখ টাকার জমি জোর করে ২লাখ টাকা দিয়ে আমার বাবা লিখে নিয়েছে এবং হেবা দলিল করেছে যা বিধি সম্মত হয় নাই বলে এক এ্যাডভোকেট বক্তব্য দিয়েছে। আপনাদের অবগতির জন্য বলছি ঐ লোক ও তার পার্টনার আমার বাবার অফিস থেকে ভাউচার সই করে ৩০লাখ টাকা চেকের মাধ্যমে নিয়েছে।আর এটা হেবা দলিল না। ঐ দলিলের নামে হেবা বিল এওয়াজ যা বিধি সম্মত।
কিছু পত্র-পত্রিকায় রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে যে আমার বাবা ১০ জেলার ঠিকাদারি ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করে। এরকম একটা মিথ্যা সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ায় আমরা অনেক অবাক হয়েছি। দশ জেলার মধ্যে পটুয়াখালি জেলায় আমার বাবা গত ২০ বছরে কোনো কাজ করেনি। বাকি ৯ জেলার মধ্যে ১২ বছরে হয়ত ১টা কাজ করেছে আবার কোনো কোনো জেলায় কাজই করে নাই,তাহলে নিয়ন্ত্রন করে কিভাবে?
আমি আপনাদের সামনে আমাদের বাস্তব চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমি এই প্রজন্মের সন্তান। ন্যায় বিচার না পেয়ে চুপ করে বসে থাকতে পারি না।
আমাদের নামে মিথ্যা প্রচার হতে হতে মানুষ মিথ্যা কে সত্যি মনে করছে। আমরা এতদিন প্রতিবাদ করতে চেয়েও প্রতিবাদ করতে পারিনি। আমাদের পরিবারকে ৬ মাস পুলিশ দিয়ে অন্ত্যরীণ করে রাখা হয়েছিল এবং বিভিন্ন ভাবে অনেক ভয় ভীতি দেখানো হয়েছিলো। আর আমাদের পরিবারের উপর কি পরিমান নির্যাতন করা হয়েছে তা আর বলতে চাইনা। শুধু বলবো মামলা মোকাবিলা আমরা করবো। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আপনারা যদি এই ৫৭০৬ বিঘা জমির অনুসন্ধান করে সত্যটা প্রকাশ করেন আপনাদের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকবো। কারন প্রায় ৮০০ বিঘা জমি যদি ৫৭০৬ বিঘা হয়ে যায় তাহলে আমরা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হবো।
একটা গল্প বলে শেষ করবো। গল্পটা হলো: বলে বাঘ ধরার জন্য বনরক্ষী আসছে মেশ দৌড়াচ্ছে আর বাঘ তখন মেশকে জিজ্ঞাসা করে যে তুমি দৌড়াচ্ছো কেন? মেশ উত্তরে বলে বনরক্ষি আসছে বাঘ ধরতে। বাঘ উত্তর শুনে বলে তুমি তো বাঘ না মেশ। তাহলে তুমি দৌড়চ্ছো কেনো? মেশ আবার উত্তর দেয় আমি বাঘ না মেশ এটা প্রমান করতে করতে আমার জীবন শেষ হয়ে যাবে।
আগামীনিউজ/এএস