ঢাকাঃ করোনার কারণে সারা দেশে ব্যবসা বাণিজ্যসহ উন্নয়ন কার্যক্রম প্রায় স্থবির হয়ে পরায় গ্রাম পর্যায়ে এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোতে বিপুল পরিমাণ খেটে খাওয়া মানুষ কাজ না থাকায় এবং শহরের বিভিন্ন এলাকা লকডাউনের কারণে পরিবার পরিজন নিয়ে চলতে না পারায় ঋণগ্রস্থ হয়ে শহরের বাসাবাড়ি ছেড়ে দিয়ে স্রোতের মতো গ্রামে চলে গেছে। যার প্রভাব পড়ছে গ্রামাঞ্চলে।
ঢাকা তেজগাঁয়ে এ শ্রমিকের কাজ করা কালাম বেপারী, ফিরোজ, মোকাদ্দেছ, আমিন, ফজর আলীসহ অনেকেই জানান, গত ১৫ দিনে ব্যবধানে কমপক্ষে ৫ হাজার মানুষ বাসা ছেড়ে দিয়ে নিজ নিজ গ্রামে চলে এসেছে।
রিক্সা চালক দুলাল জানান, করোনার কারণে এবং বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ায় ইনকাম কমে গেছে।
আগে যেথানে ৫শ থেকে ৭শ টাকা দিনে রুজি হতো বর্তমানে তা ২শ থেকে ৩শ টাকা রুজি করাই কঠিন হয়ে পড়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও মানুষ এখন রিক্সায় উঠতে চায় খুব কম, মানুষের কাছে টাকা নাই । এদিয়ে সংসারই চালাবো নাকি সাপ্তাহিক কিস্তি দিব কোন কুল-কিনারা পাই না।
পল্টনের ভ্যান চালক আবুল হোসেন বলেন, আমার বড় মেয়ে এবার এসএস সি পাশ করছে, কিন্তু টাকার অভাবে মেয়েকে এখনো ভর্তি করাতে পারিনাই; কামাই রুজি কইম্যা গেছে, যা কামাই করি মাস শেষে বাসা ভাড়াই দিতে কষ্ট হয়, তার উপর আবার কিস্তির জ্বালা। আবুল হোসেন বলেন, বাড়ি ভাড়া দেয়ার দেরি হলে বাড়িওয়ালা রাগারাগি করে, আমার বউয়ের সাথে কয়েকবার খারাপ আচরণ করছে বাড়িওয়ালা।
অতিধনী বৃদ্ধির হারের দিকে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম। ধনী বৃদ্ধির হারে তৃতীয়। দ্রুত মানুষের সম্পদ বৃদ্ধি বা ধনী হওয়ার যাত্রায় বাংলাদেশ এগিয়ে থাকলেও অতিগরিব মানুষের সংখ্যাও কিন্তু কম নয়। অতিগরিব মানুষের সংখ্যা বেশি এমন দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। বাংলাদেশে ২ কোটি ৪১ লাখ হতদরিদ্র মানুষ আছে।
বিশ্বব্যাংক ‘পভার্টি অ্যান্ড শেয়ার প্রসপারিটি বা দারিদ্র্য ও সমৃদ্ধির অংশীদার-২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনে সবচেয়ে বেশি হতদরিদ্র মানুষ আছে, এমন ১০টি দেশের তালিকা তৈরি করেছে। ক্রয়ক্ষমতার সমতা অনুসারে (পিপিপি) যাঁদের দৈনিক আয় ১ ডলার ৯০ সেন্টের কম, তাঁদের হতদরিদ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এটা আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যরেখা হিসেবে বিবেচিত হয়। বিশ্বব্যাংক ২০১৬ সালের মূল্যমান ধরে পিপিপি ডলার হিসাবে করেছে। বাংলাদেশে প্রতি পিপিপি ডলারের মান ধরা হয়েছে সাড়ে ৩২ টাকা। সেই হিসাবে বাংলাদেশের ২ কোটি ৪১ লাখ লোক দৈনিক ৬১ টাকা ৬০ পয়সাও আয় করতে পারেন না।
বাংলাদেশ ইতিমধ্যে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় ঢুকে গেছে। যদিও বাংলাদেশ এখনো নিম্ন আয়ের দেশ হিসেবে বিশ্বব্যাংকের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। এ কারণে বিশ্বব্যাংক নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অতিগরিব মানুষের একটি আলাদা হিসাবও দিয়েছে। নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের মানুষকে দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠতে হলে দৈনিক কমপক্ষে ৩ দশমিক ২ পিপিপি ডলার আয় করতে হবে।
এই করোনাকালে বিশ্বব্যাংক বলছে, এভাবে হিসাব করলে বাংলাদেশে অতিগরিব মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ৮ কোটি ৬২ লাখ। আর দারিদ্র্যের হার হবে ৫২ দশমিক ৯ শতাংশ। এর মানে হলো, টেকসইভাবে গরিবি হটাতে বাংলাদেশের প্রায় ৬ কোটি ২১ লাখ মানুষকে দ্রুত দৈনিক ৩ দশমিক ২ ডলার আয়ের সংস্থান করতে হবে। এই বিশাল জনগোষ্ঠী এখন ঝুঁকিতে আছে।
আগামীনিউজ/এমকে