রাত পোহালেই চালু হতে যাচ্ছে চিলাহাটি-ঢাকা রুটে নতুন একটি আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেন। ওই ট্রেনের নাম ‘নীলফামারী এক্সপ্রেস’ নামকরণ পুনর্বহাল ও ৮০ শতাংশ আসন বরাদ্দের দাবিতে কয়েক দিন ধরে মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ ও ট্রেন অবরোধ করছিলেন স্থানীয়রা। সেই দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে আবারও তীব্র রোদ উপেক্ষা করে সড়ক অবরোধ করেছেন নীলফামারী জেলার সকল স্তরের মানুষ।
সৈয়দপুর-নীলফামারী-ডোমার সড়কের গাছবাড়ি এলাকায় শনিবার (৩ জুন) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন আন্দোলনকারীরা। এতে সৈয়দপুর-নীলফামারী-ডোমার ও সৈয়দপুর-নীলফামারী-দেবীগঞ্জ সড়কে আন্তঃজেলাসহ দূরপাল্লার সকল যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
‘নীলফামারী এক্সপ্রেস’ নাম প্রস্তাব করা হয় গত ২৯ মে । এক দিন পর ৩০ মে ওই ট্রেনের নাম পরিবর্তন করে নামকরণের প্রস্তাব দেওয়া হয় ‘চিলাহাটি এক্সপ্রেস’। এরপর থেকেই নীলফামারী জেলাজুড়ে শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড়। নাম পরিবর্তনের প্রতিবাদে ও ‘নীলফামারী এক্সপ্রেস’ নামকরণ পুনর্বহালের দাবিতে গত বুধবার দুপুরে নীলফামারীতে মানববন্ধন ও সমাবেশ হয়। সমাবেশ শেষে দাবিসংবলিত প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি স্মারকলিপি জেলা প্রশাসকের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
পরের দিন বৃহস্পতিবার নীলফামারী রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে দুপুর ১২টার দিকে নীলফামারীবাসীর ব্যানারে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন হয়। এ সময় রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা চিলাহাটিগামী আন্তনগর তিতুমীর এক্সপ্রেস দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে নীলফামারী স্টেশনে পৌঁছালে আন্দোলনকারীরা ওই ট্রেন অবরোধ করেন। এরপর সেদিন রেল কর্তৃপক্ষের অনুরোধে ১৫ মিনিট পর ট্রেনটি তারা ছেড়ে দেন।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, ২৯ মে বাংলাদেশ পশ্চিমাঞ্চল রেলের চিপ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ স্বাক্ষরিত পত্রে ওই ট্রেনের নাম প্রস্তাব করা হয় ‘নীলফামারী এক্সপ্রেস’। ৩০ মে রেলপথ মন্ত্রণালয় ‘চিলাহাটি এক্সপ্রেস’ নাম চূড়ান্ত করে রেলওয়ে দপ্তরকে চিঠি দেয়। নীলফামারীবাসী এর তীব্র প্রতিবাদ জানান। প্রস্তাবিত নাম অনুযায়ী তারা তাদের জেলার নামে ওই ট্রেনের নামকরণ চান।
তারা বিভিন্ন উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, উত্তরের জেলা কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকা চলাচলকারী ট্রেনের নাম কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস, লালমনিরহাট থেকে চলা ট্রেনের নাম লালমনি এক্সপ্রেস, রংপুর থেকে চলা ট্রেনের নাম রংপুর এক্সপ্রেস, পঞ্চগড় থেকে চলা ট্রেনের নামকরণ হয়েছে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস। একইসঙ্গে তারা নতুন ট্রেনে নীলফামারী জেলাবাসীর জন্য ৮০ শতাংশ আসন বরাদ্দ করার দাবি জানান।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, আগামীকাল ৪ জুন সকাল ১০টায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ট্রেনটির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সময়ে চিলাহাটি রেলস্টেশন চত্বরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।
ওই ট্রেন চালুর বিষয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী চিলাহাটি-ঢাকা রেলপথে নতুন একটি দিবাকালীন আন্তনগর ট্রেন চলাচল করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে রেলওয়ে। ইতোমধ্যে ট্রেনটির ট্রায়াল শেষ করা হয়েছে। আগামী ৪ জুন সকালে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর চিলাহাটি থেকে ঢাকার পথে ছাড়বে ট্রেনটি।
এ ট্রেন সপ্তাহের শনিবার বাদে ছয় দিন নিয়মিত চলাচল করবে। ট্রেনটি চিলাহাটি থেকে সকাল ৬টায় ছেড়ে ঢাকায় পৌঁছাবে বেলা ৩টা ১০ মিনিটে। ঢাকা থেকে বিকেল সোয়া ৪টায় ছেড়ে চিলাহাটি পৌঁছাবে রাত পৌনে ২টায়। চায়না থেকে নতুন আমদানি করা ওই ট্রেনের আসনসংখ্যা ৭৯২। চিলাহাটির পর বিরতি রয়েছে ডোমার, নীলফামারী, সৈয়দপুর, পার্বতীপুর, জয়পুরহাট, সান্তাহার, ঈশ্বরদী বাইপাস ও বিমানবন্দর স্টেশনে।
এ বিষয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, চিলাহাটি-ঢাকা রেলপথে নতুন দিবাকালীন আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল শুরু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে নতুন ট্রেনটির পরীক্ষামূলক চলাচল (ট্রায়াল) শেষ করা হয়েছে।
এসএস