ঢাকাঃ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) রসায়ন বিভাগে এক নেত্রীকে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দিতে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। ঐ নেত্রীর বিরুদ্ধে পরীক্ষায় নকল করে বহিস্কৃত, বিভাগের প্রশ্ন ফাঁসের সিন্ডিকেটে জড়িত থাকা ও অবৈধভাবে হলে থাকার অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল ঐ নেত্রীকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য সাবেক ও বর্তমান উপাচার্যকে ‘চাপ প্রয়োগ’ করেছেন। নিয়োগ প্রার্থী রসায়ন বিভাগের ৪৪ ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাদিয়া আফরিন পাপড়ি আকতারুজ্জামান সোহেলের রাজনীতি করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাদিয়াকে প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম ও সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মো. শরীফ এনামূল কবিরকে চাপ প্রয়োগ করছেন আকতারুজ্জামান সোহেল। সবশেষ অর্ধশত নেতাকর্মী নিয়ে আজ বুধবার সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মো. শরীফ এনামূল কবিরের কক্ষে যান ছাত্রলীগ সভাপতি। এছাড়া তিনি গত কয়েকদিন ধরেই বর্তমান উপাচার্য ও সাবেক উপাচার্যের কক্ষে গিয়ে পাপড়িকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য চাপ দিয়েছেন বলে জানিয়েছে সুত্র।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান একাধিক ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ জানান, সাদিয়া আফরিন পাপড়ি দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষায় নকল করতে গিয়ে ধরা পড়েন। তখন বিভাগের একজন শিক্ষক তাকে পরীক্ষার হল থেকে বের করে দেন। ফলে ওই কোর্সের পরীক্ষা পরবর্তী ব্যাচের সাথে দিয়েছেন তিনি। এছাড়া তার বিরুদ্ধে তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ রয়েছে। তার প্রেক্ষিতে তিনি দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষায় সিজিপিএ ৩.৫০ পেলেও তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষায় সিজিপিএ ৩.৮৯ পেয়েছেন। এ বিষয়কে অস্বাভাবিক বলেছেন পাপড়ির সহপাঠীরা। অন্যদিকে নবীন শিক্ষার্থীদের র্যাগ দেওয়ার সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন তিনি। তখন তাকে ও তার সহপাঠীদের শাস্তিস্বরুপ কান ধরে ওঠবস করান বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক মো. শরীফ এনামূল কবির।
এছাড়াও সাদিয়া আফরিন পাপড়ির বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের জাহানারা ইমাম হলের বি ব্লকের একটি কক্ষ ও নবনির্মিত ফজিলাতুন্নেসা হলের তৃতীয় ফ্লোরে একটি সিট দখল করে রাখার অভিযোগ রয়েছে।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘শরীফ স্যারের সাথে অন্য একটি বিষয়ে দেখা করেছি। কারও নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা বা চাপ প্রয়োগ করার আমি কেউ না। আর পাপড়ি দুটি হলে থাকছে কিনা- তা প্রাধ্যক্ষ বলতে পারবেন।’ এছাড়া তিনি রেগে গিয়ে বলেন, ‘ছাত্রলীগের কথা শুনলে তোমাদের এতো চুলকানি কেন? এমন সাংবাদিকতা বন্ধ করো।’
জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ সহযোগী অধ্যাপক মুরশেদা বেগম বলেন, ‘পাপড়ি যে কক্ষে থাকতো, সে কক্ষের ক্লিয়ারেন্স দিয়ে দিয়েছি। সেখানে নতুন শিক্ষার্থীদের বরাদ্দ দিয়েছি। তবে সেই শিক্ষার্থী অসুস্থ থাকায় কক্ষে উঠছে না বলে জেনেছি। ঐ কক্ষে এখন যে তালা দেওয়া আছে সেটি প্রশাসনের নয়।’
ফজিলাতুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মুহাম্মদ ছায়েদুর রহমান বলেন, ‘যে কক্ষটির কথা বলছো, সেখানে পাপড়িকে বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। ওই কক্ষটি কাদের বরাদ্দ, সেটা দেখে জানাতে পারবো। পাপড়ি আমার হলের এলোটেড না। তবে মাঝেমধ্যে আসে কিন্তু কার কাছে থাকে সেটা তো জানিনা।’
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কি কারণে দেখা করেছে জানতে চাইলে অধ্যাপক মো. শরীফ এনামুল কবির বলেন, ‘ওরা (ছাত্রলীগ) এম্নেই দেখা করতে এসেছিল।’ তবে নিয়োগের বিষয়ে ছাত্রলীগ চাপ প্রয়োগ করছে কিনা- সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর দুই দফায় কল কেটে দেন। এরপর যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
সাদিয়া আফরিন পাপড়ি বলেন, ‘আমি হল ছেড়েছি অনেক আগে, কিন্তু মাঝে মাঝে কাজের জন্য ক্যাম্পাসে গেলে দুই এক দিন থাকা হয়। র্যাগিংয়ের সময় ব্যাচের সবাই উপস্থিত ছিলো, তাই সবাইকে কানধরে ওঠবস করিয়েছিলেন শরীফ স্যার।’
প্রশ্ন ফাঁস ও নকল করে ধরা পড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি এসব ঘটনার সাথে জড়িত না। কেউ হয়তো আমাকে ফাঁসাতে চাচ্ছে।’
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
সৈকত ইসলাম/এমআইসি