
সরকারি বাঙলা কলেজ (ঢাকা): স্বেচ্ছাশ্রম বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কার্যক্রম সাধারণত স্বার্থহীন কাজকে বোঝায় যা একজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী কোনো আর্থিক বা সামাজিক লাভের জন্য করে না, "একজন ব্যক্তি বা দল বা সংস্থার সুবিধাৰ্থে করে"। স্বেচ্ছাসেবী কাজ দক্ষতা বিকাশের জন্যও অতি পরিচিত এবং প্রায়ই সৎকর্ম প্রচার অথবা মানুষের জীবনমান উন্নত করার উদ্দেশ্যে করা হয়। বর্তমানে বিভিন্ন পর্যায়ে এসব সংগঠনের কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যক্রমও ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এই কার্যক্রমের দিক থেকে পিছিয়ে নেই সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।কলেজের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম সাত কলেজে ব্লাড অরগানাইজেশান। সমাজের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে, মুমূর্ষু রোগীর পরিবারের পাশে দাঁড়ানো,ব্লাড জোগাড়, আর্তমানবতার সেবায়, চারিত্রিক উন্নয়ন, নেতৃত্বের গুণাবলী অর্জনসহ বিভিন্ন লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে এই সংগঠনটি, কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাজ করে যাচ্ছে এই সংগঠনটি।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নিয়ে নিজের স্বপ্নের কথা জানিয়েছেন সরকারি বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থী এ কে এম শাকিল সাত কলেজ ব্লাড অরগানাইজেশান প্রতিষ্ঠাতা।
সাকিল বলেন, স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করা আমার স্বপ্ন। আমি চাই সমাজকে নতুন কিছু উপহার দিতে। আমাদের দেশে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমাজের তরুণরা স্বেচ্ছাসেবী কাজে এগিয়ে আসছে। তরুণরাই পারে সমাজকে বদলে দিতে।
নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে বলেন আমি ২০১৮ সালে বাঙলা কলেজে ভর্তি হওয়ার পর দেখলাম চারপাশে সেচ্ছাসেবী সংগঠন গুলো তেমন সক্রিয় নয়। চারপাশে অনেক হাসপাতাল, প্রতিদিন কলেজ ক্যাম্পাসে মুমূর্ষু রোগীর পরিবার এসে রক্তের জন্য ছুটাছুটি করতো কখনো জোগাড় হতো কখনো আত্ম চিৎকার করে অন্যদিকে ছুটাছুটি করা লাগতো। এখান থেকেই চিন্তা করলাম এই মানুষের পাশে দাঁড়ানোর, তাদের জন্য কিছু করার।
কলেজে কোন ব্লাড প্লাটফর্ম না থাকায় এমন সমস্যার সম্মুখীনও হতে হয়েছে ক্যাম্পাসের কয়েকজনকে। বিষয়টা এড়িয়ে না গিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলাম।
প্রথম দিকে সরকারি বাঙলা কলেজের নাম দিয়ে একটা ব্লাড প্লাটফর্ম চালু করলাম " বাঙলা কলেজ ব্লাড ব্যাংক"। কিন্তু রাজনৈতিক কিছু সমস্যার কারণে নামটি পরিবর্তন করতে হলো। পরবর্তীতে সাত কলেজের নামে ব্লাড প্লাটফর্ম চালু করলাম ২০১৮ সালের ১৭ নভেম্বর। বর্তমান প্লাটফর্মটি একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠনে রূপ নিয়েছে।
অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে সাত কলেজের সেচ্ছায় সেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থীদের নিয়ে "সাত কলেজ ব্লাড অরগানাইজেশান সংগঠনটি" প্রতিষ্ঠা করলাম।আমাদের সেচ্ছাসেবী সংগঠনটি কাজ করে যাচ্ছে। দেশের অনেক স্থান বন্যায় প্লাবিত হয়। বন্যাকবলিত মানুষের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি। তাছাড়াও বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কার্যক্রমেও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। তন্মধ্যে, মুমূর্ষু রোগীর জন্য রক্ত সংগ্রহ,অসহায় মানুষের চিকিৎসা সেবা, ছিন্নমূল শিশুদের শিক্ষাদান, বয়স্কদের শিক্ষাদান, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ক্যাম্পেইন এবং শীত বস্ত্র বিতরণ উল্লেখযোগ্য।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নিয়ে স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, ‘কীভাবে মানুষের জন্য কাজ করব, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবো, স্কুলগামী নয় এমন শিশুদের স্কুলগামী করবো তাদের জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠা করবো স্বপ্ন দেখি, শীতকালীন সময়ে অসহায়দের পাশে শীতবস্ত্র বিতরণ করবো।খবরের কাগজ খুললেই চোখে পরে অনেক স্থানে বাল্যবিবাহ হচ্ছে। অনেক শিশু ও তরুণী ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। এসব বন্ধের জন্য মানুষকে সচেতন করার স্বপ্ন দেখি। আমার বিশ্বাস সমাজের তরুণরা এগিয়ে আসলে এসব বন্ধ করা সম্ভব হবে।এভাবেই একদিন সফলতা আসবে এবং গড়ে উঠবে সুন্দর আগামী।আমাদের সাথে সেচ্ছাসেবী হয়ে কাজ করতে চাইলে বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ার পাশাপাশি ৭ কলেজের শিক্ষার্থী হতে হবে।
সংগঠনে সেচ্ছায় শ্রম দিচ্ছে ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজ,ইডেন মহিলা কলেজ,সরকারি বাঙলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ,বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ,কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সরকারি শহিদ সোহরাওয়ার্দী কলেজসহ প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থী।
উল্লেখ্য, এখন পর্যন্ত জনসেবা মূলক কাজে ব্যায় হয়েছে চিকিৎসা খাতে প্রায় ৬৪ হাজার ৮০০ টাকা, শিক্ষা খাতে ৩১ হাজার ৮০৫ টাকা, পথশিশুদের খাবার বাবদ ১৮ হাজার ১৫৭ টাকা, আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত বাবদ ১০ হাজার, ঈদ সামগ্রী ২১ হাজার ৯৮০ টাকা।
আগামীনিউজ/ হাসান