Dr. Neem on Daraz
Victory Day

বই মেলায় ‍‍`লাল সন্ত্রাস‍‍`


আগামী নিউজ | প্রভাত আহমেদ প্রকাশিত: মার্চ ২৬, ২০২১, ০১:১৯ পিএম

ঢাকাঃ করোনাভাইরাসের কারণে এবার ভাষার মাসে শুরু হয়নি অমর একুশে গ্রন্থমেলা। নির্ধারিত সময়ের দেড় মাস পর ১৮ মার্চ শুরু হয় বইমেলা। তারপর এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। তবে চৈত্রের প্রখর তাপ আর করোনা নিয়ে নতুন করে যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে, তা যেন জমতে দিচ্ছে না বইমেলা।

বইমেলায় স্বাস্থ্যবিধি

প্রতিদিনের মতো বুধবারও মেলার প্রবেশপথ খোলে বেলা ৩টায়। সাড়ে ৩টার দিকে মেলায় প্রবেশ করতে গিয়ে কোনো ভিড় পাওয়া যায়নি।

প্রবেশপথে তাপমাত্রা মাপলেন নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা। হ্যান্ড স্যানিটাইজার লাগানোর আহ্বানও জানান তারা। মেলার প্রবেশের একটু পরেই কানে এলো মাইকের ঘোষণা। বলা হচ্ছিল, যারা মাস্ক ছাড়া ঘুরছেন তারা যেন মাস্ক পরিধান করেন। কিছুক্ষণ পরপরই সেই ঘোষণা দেয়া হয় বইমেলায়।

কয়েকজন দর্শনার্থী ও বিক্রয়কর্মী জানান, মাইকে এমন ঘোষণা দেয়া হলেও গরমের কারণে মেলায় প্রবেশের পর অনেকেই মাস্ক খুলে ফেলেন।

বিকেলে ফাঁকা, সন্ধ্যায় ভিড়

বেলা ৩টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বইমেলা বেশ ফাঁকা ছিল। তারপর লোকজন বাড়তে শুরু করে। শিশু-কিশোরদের প্রকাশনী ‘ঝিঙেফুল’-এর বিক্রয়কর্মী শাহিন আলম বলেন, ‘বইমেলা শুরুর পর থেকেই এ অবস্থা। এই গরমের মধ্যে মানুষ কীভাবে আসবে, সন্ধ্যার দিকে মানুষজন আসেন। বিকেল গড়াতে গড়াতে মেলার ভিড় বাড়ে।’

এবারের মেলায় বেশ আলোচনায় লাল সন্ত্রাস বইটি, তবে অন্য কোন বইয়ের দোকানে ভিড় না থাকলেও বাতিঘর স্টলে ভীড় ছিলো চোখে পড়ার মতো। বিক্রেতা জানান, এই বইটি ঘিরে পাঠকের মনে রয়েছে ব্যাপক উত্তেজনা, তার কারণ হিসেবে বিক্রেতা বলেন, ততকালীন সময়ের সর্বহারা পার্টি ও সিরাজ সিকদারের জীবনী নিয়ে রচিত এই গন্থটি তার জন্যেই পাঠকের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা।

যেমন চলছে বেচাবিক্রি

বিকেলেই কথা হয় কয়েকটি প্রকাশনীর কর্মকর্তা ও কর্মীদের সঙ্গে। প্রতিবছর দেখা যায় শিশু চত্বরে সবচেয়ে বেশি ভিড় থাকে সিসিমপুরের প্যাভিলিয়নে, এবার নেই সেই ভিড়। এবারই সবচেয়ে ছোট করে বানানো হয়েছে সিসিমপুরের প্যাভিলিয়ন।

এসব নিয়েই সিসিমপুরের প্যাভিলিয়নের কর্মকর্তা ইমরান হোসেনের সঙ্গে কথা হয়।

তিনি বলেন, ‘অন্যান্যবারের তুলনায় এবার এখন পর্যন্ত আমাদের বিক্রি খুবই কম। সেটা হয়তো আমাদের স্টল দেখেই বুঝতে পারছেন। মেলা ধরে এবার আমাদের নতুন প্রকাশনা নেই। আগের দু-একটি বইয়ের রিপ্রিন্ট করা হয়েছে।’

করোনা আর অসময়ে বইমেলা হওয়ায় বিক্রিতে মন্দা দেখা দিয়েছে বলে মনে করেন তিনি। বলেন, ‘এবার তো শিশুদের প্লে-গ্রাউন্ডও বানানো হয়নি। প্রতিবছর এটা ঘিরেও ভিড় থাকত স্টলগুলোতে।’

বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কথা হয় সময় প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী আব্দুল জলিলের সঙ্গে। গত কয়েক বছর মেলা ধরে এই প্রকাশনীতে কাজ করছেন তিনি।

বিক্রি কেমন জানতে চাইলে আব্দুল জলিল বলেন, ‘কেমন অবস্থা তা তো নিজের চোখেই দেখতে পাচ্ছেন। বইমেলা শুরুর পরই যে শুক্রবার পড়েছিল, সেদিন একটু ভিড় ছিল, এরপর আর নেই। অন্য বছর এ সময় হলে কথা বলারও সময় পেতাম না।’

একই অনুভূতির কথা জানান অনুপম প্রকাশনীর ম্যানেজার মো. শাহিন। তিনি বলেন, ‘আমাদের টুকটাক বিক্রি হচ্ছে। এই সময়টা ক্রেতা একটু কম থাকে। সন্ধ্যার দিকে বাড়ে, তখন কিছুটা বিক্রি হয়।’

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কথা হয় কাকলী প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী রাকিবের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আজ এখন পর্যন্ত মাত্র দুটি বই বিক্রি হয়েছে। কয়েক বছর হলো আমি এখানে কাজ করি। এ অবস্থা কখনও দেখিনি।

এবারের বইমেলা কীভাবে দেখছেন লেখকরা

এবারের মেলাকে একটু ভিন্নভাবে দেখছেন লেখকরা। সন্ধ্যায় কথা হয় কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমানের সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘সংশয় ছিল করোনার কারণে এবার বইমেলা জমবে না। কিন্তু আশা জাগানিয়া বিষয় হচ্ছে, প্রথম দিন থেকেই বইমেলা জমেছে। বইমেলার প্রথম দিনে বিধিনিষেধ থাকে প্রধানমন্ত্রী আসেন বলে। সে কারণে অনেক পাঠক সেদিন আসেন না।

‘কিন্তু এবার ব্যতিক্রম। প্রধানমন্ত্রী আসেননি প্রথম দিন। সেদিন থেকেই অনেক পাঠক-দর্শনার্থী এসেছেন মেলায়। এবং তারা বই কিনেছেনও। আমি ব্যক্তিগতভাবে দেখেছি আমার বইও প্রথম দিনে চার-পাঁচ কপি বিক্রি হয়েছে।’

মেলায় করোনা তেমন প্রভাব ফেলেনি মন্তব্য করে স্বকৃত নোমান বলেন, ‘প্রথম দিনের পরে শুক্র-শনিবার অনেক মানুষ হয়েছিল বইমেলায়। সবকিছুই তো খোলা। আমার আশা, আগামীতে আরও মানুষ বাড়বে বইমেলায়।’

তবে এবারের মেলায় করোনার একটা বড় প্রভাব আছে বলে মনে করেন লেখক ও পার্ল পাবলিকেশন্সের প্রকাশক হাসান জায়েদী।

তিনি বলেন, ‘বইমেলা হচ্ছে- এটাই আমাদের জন্য বড় ব্যাপার। সন্ধ্যার পর মানুষ বাড়ে। কিন্তু বিক্রি নেই। মানুষের তো যাওয়ারও জায়গা নেই। এখানে তো খোলামেলা জায়গা আছে, তাই মানুষ আছে। করোনা তো একটা বড় প্রভাব পড়েছে বিক্রিতে।’

ফিরছে লিটলম্যাগ

বাংলা একাডেমির বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ এনে ২১ মার্চ সব স্টল বন্ধ করে ধর্মঘট শুরু করেন লিটলম্যাগ কর্মী-সম্পাদকরা। তাদের দাবি ছিল, লিটলম্যাগের স্টল আগের জায়গায় ফিরিয়ে দেয়ার। দাবি আদায়ে লিটলম্যাগ কর্মী-সম্পাদকরা বইমেলায় মিছিলও করেন।

সন্ধ্যার পর দেখা যায়, লিটলম্যাগকর্মীদের দাবি অনুযায়ী আগের জায়গায়ই তাদের জন্য নতুন করে সাজানো হয়েছে স্টল।

সেখানে উপস্থিত বাংলা একাডেমির উপপরিচালক ও লিটলম্যাগ ‘অমিত্রাক্ষর’-এর সম্পাদক আমিনুর রহমান সুলতান বলেন, ‘আর কোনো সমস্যা নেই। তাদের সব দাবিদাওয়া মেনে নিয়েছে বাংলা একাডেমি। আর আমিও তো একটা ছোট কাগজ চালাই। সুতরাং সবার দাবি আমি বুঝি। আশা করছি, আগামীকাল থেকে সবাই বসবে।

আগামীনিউজ/এএইচ 

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে