Dr. Neem on Daraz
Victory Day

কফি উৎপাদন ও ব্যবহার


আগামী নিউজ | লাইফস্টাইল ডেস্ক প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৬, ২০২০, ০১:০১ পিএম
কফি উৎপাদন ও ব্যবহার

দিনের কাজ শুরু করার আগেই নাশতার টেবিলে, দুপুরে লাঞ্চের পর অথবা অলস বিকালে অনেকটা অভ্যাসবশতই কফি পান করার অভ্যাস আমাদের অনেকের মধ্যেই রয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল কফি অর্গানাইজেশনের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯১ সালে সারা বিশ্বে ৬০ কেজি ওজনের কফির ব্যাগ বিক্রি হয়েছিল ৯ কোটি। এ বছর সেই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ১৬ কোটিতে। বিবিসি কফি নিয়ে ১০টি তথ্য উপস্থাপন করেছে। নিচে এগুলো তুলে ধরা হলো।

চেরি ফল থেকে কফি
যে বীজগুলো চোলাই করে কফি উৎপাদন করা হয় সেগুলো আসলে এক ধরনের ফলের রোস্ট করা বীজ, যে ফলগুলোকে কফি চেরি বলা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় কফি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের ৫% কফিতে ‘পিবেরি’ নামক একটি বীজই থাকে। এই ‘পিবেরি’ জাতীয় কফি হাতে আলাদা করা হয়।কড়া স্বাদ এবং চমৎকার মিশ্রণের জন্য এই ধরনের কফি বীজ বিখ্যাত।

পানীয় নয়, খাবার
মানুষ যুগ যুগ ধরে কফি পান করে এলেও কোথাও কোথাও এটি খেতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। নষ্ট হয়ে যাওয়া কফি চেরি দিয়ে, ময়দা তৈরি করে, কফি প্রস্তুতকারী অনেক প্রতিষ্ঠানই। এই ময়দা দিয়ে রুটি, চকলেট, সস বা কেক তৈরি করা হয়ে থাকে। এর স্বাদ পুরোপুরি কফির মতো থাকে না, বীজের জাতের ওপর নির্ভর করে এর স্বাদ পরিবর্তিত হয়ে থাকে।

বিষ্ঠা থেকেই দামি কফি!
‘সিভেট’ নামের স্তন্যপায়ী এক ধরনের বিড়াল অথবা হাতি। পৃথিবীর সবচেয়ে দামি কফি এই দুই প্রাণীর যেকোনো একটির পরিপাকতন্ত্র হয়ে মানুষের কাছে পৌঁছায়। ‘কোপি লুয়াক’ এক ধরনের কফি যা ইন্দোনেশিয়ান স্তন্যপায়ী বিড়ালের বিষ্ঠা থেকে তৈরি হয়। বিড়ালের পরিপাকতন্ত্র দিয়ে স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতে কফি চেরিগুলো গাঁজানো হয়, পরে সেগুলো সংগ্রহ করে বিক্রি করা হয়।

ওই ধরনের কফির ৫০০ গ্রামের দাম হতে পারে ৭০০ ডলার (প্রায় ৬০ হাজার টাকা) পর্যন্ত। কফি চেরি খাওয়ার পর থাইল্যান্ডের হাতিদের বিষ্ঠা থেকে তৈরি হয় এই জাতের কফি।

স্বাস্থ্যকর এক পানীয়
কফিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এগুলো আমাদের দেহের কোষগুলোকে ক্ষতিকর বিষাক্ত পদার্থ ও রাসায়নিকের মিশ্রণ ঠেকাতে সাহায্য করে।দিনে অন্তত তিন কাপ কফি পান করলে হার্ট অ্যাটাকসহ অনেক জটিল রোগের সম্ভাবনা কমিয়ে আনা সম্ভব। ১৬ বছর ধরে ইউরোপের দশটি দেশের ৫ লাখ মানুষের তথ্য নিয়ে চালানো হয় ওই গবেষণাটি। কফির ক্যাফেইন উপাদানটি মানুষের সতেজতা ও ক্রীড়া তৎপরতা বাড়াতে সাহায্য করে।

অতি পান ভালো নয়
স্নায়ু উত্তেজক হিসেবে অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণ করলে ক্যাফেইনের কিছু ক্ষতিকর প্রভাবও দেখা যায়।গর্ভবতী অবস্থায় ক্যাফেইন গ্রহণের ফলে শিশু কম ওজন নিয়ে জন্ম করে।অতিরিক্ত মাত্রায় ক্যাফেইনের কারণে গর্ভপাত হতে পারে বলেও ধারণা করা হয়। ব্রিটিশ স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, একজন গর্ভবতী নারীর দিনে ২০০ মিলিগ্রামের বেশি কফি পান করা উচিত নয়।

কফি বীজ দুই ধরনের হয়
ইথিওপিয়ায় জন্ম নেয়া কফি গাছ থেকে পাওয়া কফিকে বলা হয় অ্যারাবিকা।এই ধরনের কফি সাধারণত মিহি, হালকা এবং সুবাসযুক্ত হয়ে থাকে। বিশ্বের প্রায় ৭০% কফিই এই জাতের। স্বাদে কিছুটা তিতকুটে এবং অতিরিক্ত ক্যাফেইন সমৃদ্ধ আরেক ধরনের কফি হলো রোবাস্টা। এ ধরনের কফি সাধারণত ইনস্ট্যান্ট কফি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু এলাকায় এবং ব্রাজিলে সাধারণত এ ধরনের কফি জন্মায়।

ইথিওপিয়ায় কফি আবিষ্কারে ছাগলের ভূমিকা
পুরনো কিংবদন্তি অনুযায়ী, নবম শতকে কালদি নামের একজন ছাগল পালক প্রথম তার ছাগলদের বেরি জাতীয় গাছ থেকে ফল খেতে দেখে।সে লক্ষ্য করে যে, তার ছাগলগুলো সারা রাত ঘুমায়নি। পরে ওই ফল থেকে তারা পানীয় তৈরি করে, তাদের উদ্দেশ্য ছিল সারা রাত জেগে প্রার্থনা করা।

প্রথম ক্যাফে মধ্যপ্রাচ্যে
কফি যে শুধু ঘরেই উপভোগ করা হতো, তা কিন্তু নয়। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন শহরে কফির দোকানগুলোকে বলা হতো ‘কাহভেহ খানে’।ওইসব কফির দোকানগুলো পরবর্তী সময়ে দৈনন্দিন আড্ডা, জমায়েতের জায়গা হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করে।

বেশি কফি পান করে স্ক্যান্ডিনেভিয়ানরা
আন্তর্জাতিক কফি সংস্থার মতে, ফিনল্যান্ডের অধিবাসীরা গড়ে সবচেয়ে বেশি কফি পান করে থাকে। ফিনল্যান্ডের একজন ব্যক্তির বছরে গড় কফি গ্রহণের পরিমাণ প্রায় ১২ কেজি। এছাড়া নরওয়ে ও আইসল্যান্ডের মানুষের গড় কফি গ্রহণের পরিমাণ বছরে ৯ কেজির ওপর। ডেনমার্ক ও সুইডেনের অধিবাসীরাও বছরে গড়ে ৮ কেজির বেশি কফি গ্রহণ করে থাকে।

জনপ্রিয় চা না কফি?
ব্রিটিশ কফি অ্যাসোসিয়েশনের মতে, পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয় কফি। প্রতিদিন বিশ্বে প্রায় ২০০ কোটি কাপ কফি পান করা হয়। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দুটি দেশ ভারত আর চীন কফির চেয়ে চা বেশি প্রাধান্য দেয়। আমেরিকা আর ইউরোপের মূল ভূখণ্ডে কফি জনপ্রিয়, তবে এশিয়া মহাদেশের অধিকাংশ অঞ্চলে আর সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে চা এখনো বেশি সমাদৃত।

ভূগোলবিদ ডেভিড গ্রিগ ২০০৬ সালে প্রকাশিত গ্রন্থে উল্লেখ করেন, চা ও কফির এই দ্বন্দ্ব মেটাতে ওজন দিয়ে নয়, কত কাপ চা বা কফি পান করা হলো সেই বিবেচনায় হিসাব করা প্রয়োজন। এই হিসাব অনুসারে, তার মতে, ‘এক কাপ কফির সমানুপাতিক হতে পারে তিন কাপ চা।’

আগামী নিউজ/ হাসি/এনএনআর

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে