ঢাকাঃ ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। দৃশ্যত: সময়টা অনেক দূরের মনে হলেও আসলে কি তাই? যদি ধূমপান কমানোর ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা না থাকে তাহলে সে লক্ষ্য অর্জণ করা কিছুতেই সম্ভব হবে না, আর ধূমপান আদৌ কমছে কি না তাও তো ষ্পষ্ট নয়। ধূমপানমুক্ত দেশ গড়ার বিষয়টি শুধু একটি ঘোষণার বিষয় নয়, কোটি কোটি মানুষের দেশে এ কাজটি করা খুবই কঠিন, সরকারি এ ঘোষণাকে বাস্তবায়নে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও সংগঠনগুলোর ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালাসো একান্ত জরুরি।
ধূমপানে বিষপান’ কিংবা “ধূমপানে মৃত্যু হয়’ কথাগুলো আমরা সবাই জানি, বই পুস্তকে তো লেখা আছেই, এমনকি তামাকজাত পণ্য, বিড়ি, সিগারেট, জর্দার প্যাকেট বা কৌটার গায়েও আজকাল লেখা থাকে যে ধূমপানের ফলে মৃত্যুও হতে পারে, তারপরও মানুষ ধূমপান করে, কেউ বিষের শিশি পকেটে নিয়ে ঘুরবেন না, কিন্তু ধূমপানে বিষপান জানার পরও অনেকেই বিড়ি সিগারেটের নামে বিষের প্যাকেট ঠিকই পকেটে নিয়ে ঘোরেন!
অলস সময়ে নাকি ধূমপানের প্রবণতা বাড়ে। করোনাকালে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে দেশের অধিকাংশ মানুষই ঘরে ছিলেন, এই অলস সময়ে নিয়মিত ধূমপায়ীদের ধূমপানের প্রবণতা, তামাকজাত পণ্যের উৎপাদন আর বিক্রি নিয়ে ধূমপানবিরোধী সংগঠনগুলোর উচিত একটি গবেষণা চালানো। তবে অনুমাণ করা যায় এ সময়টাতে তরুণ-কিশোরদের মধ্যে ধূমপানের পরিমাণ হয়তো বেড়েছে, আবার অনেকে হয়তো এ সময়ে ধূমপান করতে শুরু করেছে। কেননা, এই সময়ে তাদের স্বাভাবিক জীবন যাপন পুরোপুরি বিঘ্নিত হয়েছে, ঘরবন্দি তরুণরা কখনো কখনো বের হয়ে পাড়া-মহল্লার রাস্তার পাশে কিংবা দোকানে যে অল্প সময় কাটিয়েছে সে সময় তাদের অনেকের হাতেই দেখা গেছে সিগারেট।
বিভিন্ন গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে করোনাভাইরাসে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফুসফুস। ধূমপানের ফলে যাদের ফুসফুস আগে থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত থাকে কিংবা দুর্বল থাকে তারা করোনার ধাক্কা সামাল দিতে পারেন না। চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করে, ধূমপান ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়, লাং ইনফেকশনের আশঙ্কা বাড়িয়ে তোলে। ফুসফুসের কার্যক্ষমতা ঠিকঠাক না থাকায় তারা করোনা ভাইরাসের সাথে যুদ্ধে হেরে যান সহজেই।
বিশ্বে উচ্চমাত্রার ধূমপায়ী দেশগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে বাংলাদেশ। ধূমপান নিবারণে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন ভয়েস ফর ইন্টার্যাকটিভ চয়েজ এন্ড এমপাওয়ারমেন্ট-ভয়েস সম্প্রতি একটি তথ্য প্রকাশ করেছে সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৩৫.৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ধূমপানে আসক্ত। সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক আহমেদ স্বপন মাহমুদ বলেছেন, দেশের বেশকিছু সংগঠন তামাক ও ধূমপানে তরুণরা যাতে আকৃষ্ট না হয় সেজন্য কাজ করে যাচ্ছে, তবে গণমাধ্যমে বিষয়টি যেভাবে আসা উচিত তা হচ্ছে না।
’ধূমপানে বিষপান’ এটি যে শুধু কথার কথা না তা মানুষকে উপলব্ধি করাতে হবে, এজন্য ধূমপানজনিত রোগে ভুগে প্রতি সপ্তাহে, প্রতি মাসে, প্রতি বছর কি পরিমাণ মানুষ মারা যায় সে তথ্য প্রকাশ ও প্রচার করতে হবে। এ বিষয়ে সরকারের কোন তৎপরতা চোখে পরে না, বেসরকারি সংগঠনগুলোও নির্বিকার, যদি ধূমপানমুক্ত দেশ গড়তে হয় তাহলে এমন প্রচারণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি-বেসরকারি সংস্থা আর সংগঠনগুলো এ ক্ষেত্রে তৎপর হয়ে উঠবেন সেটাই প্রত্যাশিত।