ঢাকাঃ সময়মতো খাবার, বিশ্রাম, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং ধূমপান ও মদ্যপান বর্জন, মোটকথা রোজায় এক ধরনের শৃঙ্খলাবোধ কাজ করে। এসব প্রভৃতি বিষয়ে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে রোজা। এ কারণে দেখা যায় সকল ধর্মের লোকেরা উপবাস পালন করে। এমনও প্রমাণ রয়েছে যে, প্রাচীন মিসরীয়রাও দীর্ঘকাল ধরে তাদের অসুস্থতা কাটাতে উপবাস পালন করতো।
গবেষণায় দেখা গেছে, রোজা দেহের কোষের চারপাশে হতে পারে এমন সাধারণ প্রদাহের পরিমাণ হ্রাস করে প্রতিরোধ ব্যবস্থায় উপকারী প্রভাব ফেলে। রোজা শরীরকে ‘শক্তি সংরক্ষণের মোডে’ রাখে বলেও মনে করা হয়। যখন উপবাসের সময় শেষ হয় তখন প্রতিরোধক কোষগুলো সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য দ্রুত কার্যকর হয়।
একইসঙ্গে মন এবং দেহকে বিশ্রামের সময় দেয় রোজা। এটি এমন একটি প্রাকৃতিক প্রতিকার যা শরীরকে খাবারের বিষ তথা টক্সিসিটি থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য অত্যন্ত কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে কাজ করে।
রোজা যেমন আমাদের দেহ থেকে বিষাক্ত বস্তু বের করে দিতে সাহায্য করে, তেমনি আধ্যাত্মিক, মানসিক ও শারীরিকভাবেও সতেজ রাখে। এর মাধ্যমে শরীরের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গও বিশ্রামেরও সুযোগ পায়।
এ ছাড়া রোজা শরীরের চর্বিও কমাতে সাহায্য করে। অতিরিক্ত ফ্যাট আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার ভারসাম্য নষ্ট করে। অতিরিক্ত চর্বি মানেই নানা ধরনের হৃদরোগ ও অন্যসব স্বাস্থ্য সমস্যার মূল অনুঘটক। ত্রিশ দিন রোজা রাখার ফলে নতুন সাদা রক্তকণিকা উৎপাদনও তরান্বিত হয়। যা প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে নতুন করে জাগিয়ে তোলে এবং নানা ভাইরাল সংক্রমণ থেকে মুক্তি পেতে দেহকে শক্তিশালী করে।
কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন রোজার সময়ে শরীর সুস্থ ও ফিট রাখার জন্য কিছু পরামর্শঃ
প্রথমে শরীরের স্বাস্থ্যের অবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। যারা অসুস্থ তারা ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন।
একটি স্বাস্থ্যকর এবং সুষম খাবার বজায় রাখা দরকার। কার্বোহাইড্রেট এবং ফাইবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় যা হজমে দীর্ঘ সময় নেয় এবং এনার্জিতে রূপান্তরিত হয়। শক্তি দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং দীর্ঘ সময় ক্ষুধাবোধ হয় না। লাল চাল, আলু, গমের রুটি, শস্য, শিম, ওট এবং মিষ্টি আলু খাবারের তালিকায় রাখুন।
সবুজ শাকসবজি, ব্রকলি, গাজর এবং অন্যান্য ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ খাবার খান। সঙ্গে প্রোটিন যেমন মাছ, ডিম, মুরগী, মাংস খাদ্য তালিকায় রাখুন।
তরমুজ, পেঁপে, বাঙ্গি, কমলা, ড্রাগন ফল এবং অন্যান্য মৌসুমি ফল খেতে ভুলবেন না। দিনে কমপক্ষে ২ লিটার পানি পান করুন।
যাদের ডায়াবেটিস নেই, তাদের চিনি গ্রহণের পরিমাণ যেন ৫০ গ্রামের বেশি না হয়। ৪ টেবিল চামচে সীমাবদ্ধ রাখতে পারলে ভালো। কারণ, চিনি আমাদের রোগ প্রতিরোধক কোষগুলোকে প্রভাবিত করতে পারে। এ ছাড়াও, উচ্চ ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন এবং শর্করাযুক্ত খাবার বা পানীয় এড়িয়ে চলুন।
ইফতারের অংশটি প্রতিদিনের খাবারের চাহিদার ১০-২৫ শতাংশ হওয়া উচিত। সূর্যাস্তের পর রাতের খাবারে হবে মোট চাহিদার ২৫-৩৫ শতাংশ। সেহেরিতে খেতে হবে ২০-২৫ শতাংশ।
রোজার সময়ও হালকা ব্যায়াম বা শারীরিক ক্রিয়াকলাপ চালিয়ে যেতে হবে।
দিনে কমপক্ষে চার ঘণ্টা বিশ্রাম নেওয়া উচিৎ। এর সাথে পরিমাণমতো ঘুম হচ্ছে কিনা সেদিকেও খেয়াল রাখা উচিত।