ঢাকাঃ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শুল্ক বিভাগের গুদামের লকার থেকে ৫৫ কেজি সোনা চুরির ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও সিপাহীসহ আটজনের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
আসামিরা হলেন, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম, সাইদুল ইসলাম সাহেদ, আকরাম শেখ ও মাসুম রানা এবং সিপাহী মোজাম্মেল হক, নিয়ামত হাওলাদার, রেজাউল করিম ও আফজাল হোসেন।
বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসানের আদালত এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আদালতের বিমানবন্দর থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোজাফফর আলী বিষয়টি জানিয়েছেন।
এদিন আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের উত্তরা জোনাল টিমের পরিদর্শক রাশেদুল ইসলাম আসামিদের প্রত্যেকের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। দুই আসামির পক্ষে রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করা হয়। অন্য ৬ আসামির পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসানের আদালত এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশিদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ৫৫ কেজি স্বর্ণ চুরির ঘটনায় হেফাজতে নেওয়া আট জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সেই সঙ্গে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৯৪ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়েছে।
ডিবিপ্রধান হারুন বলেন, বিমানবন্দরে কাস্টমসের গুদাম থেকে স্বর্ণ চুরির ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় দায়ের হওয়া মামলা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তরা বিভাগ তদন্ত করছে।
মামলার তদন্তের জন্য আমরা আট জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এনেছিলাম। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ৮ জনকেই গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাদের আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। রিমান্ড পেলে আমরা তাদের আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করবো। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৯৪ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়েছে। আমরা তাদের রিমান্ডে এনে আরও স্বর্ণ উদ্ধারের চেষ্টা করবো।
পরবর্তী ব্যবস্থা কী হবে জানতে চাইলে ডিবি প্রধান বলেন, আমরা ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠিয়েছি। আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আমরা জানার চেষ্টা করবো তাদের সঙ্গে আরও কারা জড়িত আছে। তারা স্বর্ণগুলো কোথায় সরিয়েছে জানার চেষ্টা করবো।
গত ২ সেপ্টেম্বর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউজের সোনা চুরির ঘটনা ঢাকা শুল্ক বিভাগের নজরে আসে। পরদিন ৩ সেপ্টেম্বর রাতে বিষয়টি জানাজানি হয়। এরপর ঢাকা শুল্ক বিভাগের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন বাদী হয়ে বিমানবন্দর থানায় এ বিষয়ে মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালে উদ্ধার হওয়া ৪৮টি ডিএম বার- যার মোট ওজন ৮.০২ কেজি ও ২০২০ থেকে ২০২৩ সালে বিভিন্ন সময়ে আটক ৩৮৯টি ডিএম বার- যার মোট ওজন ৪৭.৪৯ কেজি স্বর্ণ আলমারির লকার ভেঙে চুরি হয়েছে। গত ২ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ১২টা ১৫ থেকে সকাল ৮টা ৩০ মিনিটের মধ্যে কে বা কাহারা বর্ণিত স্বর্ণবার ও স্বর্ণালঙ্কার গোডাউন থেকে স্টিলের আলমারির লকার ভেঙে চুরি করেছে।
চুরি হওয়া এই সোনার মূল্য প্রায় ৪৫ কোটি টাকা। মামলাটি বর্তমানে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ তদন্ত করছে। এদিকে পুরো ঘটনা তদন্তের জন্য কাস্টমসের যুগ্ম-কমিশনার মিনহাজ উদ্দীনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি টিম গঠন করেছে কাস্টমস হাউজ।
ঘটনার পর চার রাজস্ব কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হেয়ছে। তারা হলেন- সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম সাহেদ, শহীদুল ইসলাম, মাসুম রানা ও আকরাম শেখ।
এমআইসি