ঢাকাঃ ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) ঋণ জালিয়াতি, ৪ কোটি টাকা আত্মসাত ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহাসহ ১১ আসামির বিরুদ্ধে মামলার রায় রায় পড়া শুরু করেছেন বিচারক।
মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) সকাল ১১টা ৩ মিনিটে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলমের আদালত রায় পড়া শুরু করেন।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলমের আদালতে মামলার রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য ছিল। বিচারক এ দিন রায় ঘোষণা না করে ৯ নভেম্বর পরবর্তী রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করেন।
তার আগে গত ৫ অক্টোবর রায় ঘোষণার দিন ধার্য ছিল। কিন্তু বিচারক অসুস্থ থাকায় রায় ঘোষণার তারিখ পেছানো হয়। এ নিয়ে দুুই দফা মামলার রায় ঘোষণার তারিখ পেছালো।
এসকে সিনহা ছাড়াও মামলার অন্য আসামিরা হলেন- ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) সাবেক এমডি এ কে এম শামীম, সাবেক এসইভিপি গাজী সালাউদ্দিন, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জিয়াউদ্দিন আহমেদ, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সাফিউদ্দিন আসকারী, ভাইস প্রেসিডেন্ট লুৎফুল হক, টাঙ্গাইলের বাসিন্দা শাহজাহান, একই এলাকার বাসিন্দা নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা, রনজিৎ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী সান্ত্রী রায়।
এরমধ্যে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি জিয়াউদ্দিন আহমেদ তদন্তকালে মারা যাওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
মামলায় এখনও পলাতক রয়েছেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সাফিউদ্দিন আসকারী, টাঙ্গাইলের বাসিন্দা রনজিৎ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী সান্ত্রী রায়।
দুদকের অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, আসামিরা ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রভাব বিস্তার করে অবৈধভাবে ভুয়া ঋণ সৃষ্টির মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করে নগদে উত্তোলন ও বিভিন্ন পে-অর্ডারের মাধ্যমে স্থানান্তর করে অর্জিত অপরাধলবদ্ধ আয় উত্তোলন, স্থানান্তর ও নিজেদের ভোগদখলে রেখে অবৈধ প্রকৃতি উৎস অবস্থান গোপন করে পাচার করেছেন বা পাচারের ষড়যন্ত্রে সংঘবদ্ধভাবে সম্পৃক্ত থেকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
এর আগে গেল বছরের (১০ জুলাই) দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন বাদী হয়ে কমিশনের জেলা সমন্বিত কার্যালয় ঢাকা-১ এ উল্লিখিত ১১ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।
২০১৮ সালের (২৬ সেপ্টেম্বর) এসকে সিনহার ব্যাংক হিসাবে টাকা স্থানান্তরের বিষয়টি জানতে ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কে এম শামীমসহ ৬ ব্যাংক কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।
ওই বছরেরই (৬ মে) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে দুই ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহাকে এস কে সিনহার ব্যাংক হিসাবে ৪ কোটি টাকা স্থানান্তরের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
এসময় তাদের আইনজীবীরা সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, এস কে সিনহাকে তার বাড়ি বিক্রির ৪ কোটি টাকা পে-অর্ডারের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়েছে।
আইনজীবীরা বলেন, এস কে সিনহার উত্তরার ৬তলা বাড়িটি ৫ কাঠা জমির ওপর ছিল। এ বাড়িটি ২০১৬ সালের শুরুর দিকে টাঙ্গাইলের বাসিন্দা সান্ত্রী রায় ৬ কোটি টাকায় ক্রয় করেন। বায়না দলিলের সময় তিনি ২ কোটি টাকা পরিশোধ করেন। বাকি টাকা পরিশোধের জন্য নিরঞ্জন ও শাহজাহানের সহযোগিতা নেন। নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা রনজিতের চাচা (চাচা শ্বশুর)। আর শাহজাহান রনজিতের বন্ধু।
তারা বলেন, বাড়ি কিনতে বাকি ৪ কোটি টাকা ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে নিরঞ্জন ও শাহজাহান ২ কোটি টাকা করে মোট ৪ কোটি টাকা ঋণ নেন। ঋণ পরিশোধে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে সান্ত্রী রায় জামিনদার হন। জামিনদার হিসেবে টাঙ্গাইল ও ঢাকার আশপাশের বেশকিছু জমি বন্ধক রাখেন সান্ত্রী।
তাদের তথ্যানুযায়ী, ২০১৬ সালের মে মাসে জমির বায়না দলিল হয় এবং ওই বছরের ৮ নভেম্বর দুটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে এস কে সিনহা সোনালি ব্যাংক সুপ্রিম কোর্ট শাখার মাধ্যমে চার কোটি টাকা গ্রহণ করেন। পে-অর্ডারের পরে ওই বছর ২৪ নভেম্বর হস্তান্তর দলিলের মাধ্যমে বাড়িটি সান্ত্রী রায়কে বুঝিয়ে দেন।
ফারমার্স ব্যাংক থেকে ঋণের নামে আত্মসাৎ ও পে-অর্ডারে এক ‘গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির’ ব্যাংক হিসাবে ৪ কোটি টাকা জমা দেয়ার অভিযোগে ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহাকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
আগামীনিউজ/বুরহান