ঢাকাঃ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রাসেল এবং তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলাম এ আদেশ দেন।
এর আগে গুলশান থানায় প্রতারণার অভিযোগে করা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশার থানার উপ-পরিদর্শক ওয়াহিদুল ইসলাম।
আসামিপক্ষের শুনানি করেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট এম. মনিরুজ্জামান আসাদ ও আইনজীবী জে আর খান রবিন। রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মো. আবদুল্লাহ আবু।
শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম আসামিদের বিরুদ্ধে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিন দুপুর ২টার দিকে তাদের আদালতে হাজির করে আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। দুপুর আড়াইটার দিকে আসামিদের তোলা হয় আদালতে।
এরও আগে শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টার দিকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে রাসেল ও তার স্ত্রীকে হাজির করে তাদের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
এর আগে বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাতে আরিফ বাকের নামে একজন ভুক্তভোগী গুলশান থানায় আত্মসাৎ ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৫টা ২০ মিনিটে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেলকে মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ৪০৩ কোটি টাকা দেনা থাকা ইভ্যালির দুই কর্ণধারকে নেওয়া হয় র্যাব সদরদপ্তরে। সেখানেই চলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ।পরে শুক্রবার তাদেরকে প্রতারণার মামলায় গুলশান থানায় হস্তান্তর করে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আরিফ বাকের গত ২৯ মে ও জুন মাসের বিভিন্ন সময়ে ইভ্যালিতে মোটরসাইকেলসহ বেশ কয়েকটি পণ্য অর্ডার করেন। এগুলো ৭ থেকে ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে দেওয়ার কথা থাকলেও তারা (ইভ্যালি) দেয়নি। ইভ্যালির কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিয়ে সমাধান পাওয়া যায়নি। অফিসে গিয়ে তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বললে খারাপ ব্যবহার করেছে। প্রতিষ্ঠানটির সিইও রাসেলের সঙ্গেও দেখা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন বাকের। তার সঙ্গে ইভ্যালি চরম দুর্ব্যবহার করেছে।
আরিফ অভিযোগ করেন, পণ্যগুলো ৭-৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে সরবরাহে ব্যর্থ হলে উক্ত প্রতিষ্ঠান সমুদয় টাকা ফেরত দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিল। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে তারা পণ্য সরবরাহ করেনি। আমি বহুবার ইভ্যালির কাস্টমার কেয়ারে ফোন করি। প্রতিবার তারা আমার পণ্যগুলো ‘শিগগিরই দিচ্ছে’ বলে আশ্বস্ত করে যাচ্ছিল। এক পর্যায়ে ইভ্যালি পণ্য অথবা টাকা প্রদানে ব্যর্থ হওয়ার পর আমি তাদের অফিসে যাই। তখন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী কর্মকর্তা (সিও) মো. রাসেলের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছি।
এজাহারে আরিফ জানান, গত ১০ সেপ্টেম্বর তিনিসহ তার বন্ধুরা ইভ্যালি অফিসে গিয়ে পণ্যের অর্ডার সম্পর্কে কথা বলতে চাইলে তারা উত্তেজিত হয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি করেন। এক পর্যায়ে অফিসের অভ্যন্তরে থাকা ইভ্যালির সিইও রাসেল উত্তেজিত হয়ে তার রুম থেকে বেরিয়ে আরিফকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে এবং পণ্য অথবা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এক পর্যায়ে প্রাণনাশের হুমকিও দেন বলে অভিযোগ করেছেন আরিফ।
পণ্য না পাওয়ায় আর্থিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জানিয়ে আরিফ বলেন, ইভ্যালি পণ্য বিক্রয়ের নামে নানা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে আমার মতো বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের অসংখ্য গ্রাহকের নিকট থেকে আনুমানিক ৭০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।
উল্লেখ্য, অনেক দিন ধরেই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ ছিল। গত ১৪ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে এক সভায় ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জসহ ১০টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত কমিটি। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠানটির প্রধান দুই কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করে র্যাব। গত ২৫ আগস্ট প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও এমডির সব ব্যাংক হিসাব তলব করে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।