ঢাকাঃ জাপানি মা নাকানো এরিকোর বিরুদ্ধে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে একটি আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন তার সাবেক স্বামী ইমরান শরীফ। বিভিন্ন মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারের অভিযোগ এনে সাবেক স্ত্রীর কাছে এই নোটিশ পাঠিয়েছেন সাবেক স্বামী।
মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ইমরানের পক্ষে তার আইনজীবী ফাওজিয়া করিম এ নোটিশ পাঠিয়েছেন।
নোটিশ পাওয়ার সাতদিনের মধ্যে ওই ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে দেওয়ানি ও ফৌজদারি আইনে মামলা করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত ২১ ফেব্রুয়ারি ইমরান তার দুই মেয়ে জেসমিন ও লাইলাকে নিয়ে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। পরে দুই মেয়েকে জিম্মায় চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন দুই শিশুর মা জাপানি নাগরিক এরিকো।
এর আগে দুই মেয়েকে নিয়ে বাধাহীনভাবে উন্মুক্ত পরিবেশে চলাচল, রাতে তাদের সঙ্গে ঘুমানোর অনুমতি চেয়ে উচ্চ আদালতে করা জাপানি মা নাকানো এরিকোকে অনুমতি দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে করা আপিলের ওপর নো-অর্ডার দেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।
এর আগে মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এই দিন ঠিক করে আদেশ দেন।
পরে গত ১৯ আগস্ট সাবেক স্বামীর জিম্মায় থাকা দুই শিশু সন্তানকে ৩১ আগস্ট হাজির করার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাদের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন আদালত।
এরআগে দুই শিশুকে নির্যাতনের অভিযোগ এনে তাদের মা পৃথক মামলা করেন। গত ২২ আগস্ট শিশুদের উদ্ধার করে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডি। এরপর তাদের তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়েছিল।
পরে গত ৩১ আগস্ট সেখান থেকে দুই শিশুকে গুলশানস্থ বাসায় একসঙ্গে ১৫ দিন বসবাস করার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ঢাকার সমাজ সেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক পদের একজনকে বিষয়টি তদারকির নির্দেশ দেন। পাশাপাশি ডিএমপি কমিশনারকে তাদের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়।
জানা যায়, জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক ইমরান শরীফের ১৩ বছরের সংসারে বিরোধের জেরে ১৮ জানুয়ারি বিয়ে বিচ্ছেদের জন্য জাপানি আদালতে মামলা করেন এরিকো। এরপর সন্তানদের নিজের জিম্মায় রাখতে টোকিওর পারিবারিক আদালতে পৃথক একটি মামলা করেন এরিকো। টোকিওর আদালত ৩১ মে এরিকোর অনুকূলে মেয়ে দুটিকে হস্তান্তরের আদেশ দেন। ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি শরীফ ইমরানের সঙ্গে এরিকোর বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। ২১ জানুয়ারি ইমরান আমেরিকান স্কুল ইন জাপান কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। কিন্তু এতে এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ ইমরানের প্রস্তাব নাকচ করে দেয়। এরপর একদিন বড় দুই মেয়ে জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা স্কুল বাসে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্টপ থেকে ইমরান তাদের অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান।
গত ৩১ মে টোকিওর পারিবারিক আদালত জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে তাদের মা এরিকোর জিম্মায় হস্তান্তরের আদেশ দেন। এরপর গত ১৮ জুলাই বাংলাদেশে আসেন এরিকো। এরপর করোনা পরীক্ষায় রিপোর্ট নেগেটিভ আসলেও ইমরান তা অবিশ্বাস করে সন্তানদের সঙ্গে তাকে সাক্ষাতে অস্বীকৃতি জানান। পরে ২৭ জুলাই এরিকোর মোবাইল সংযোগ বন্ধ করে চোখবাঁধা অবস্থায় মেয়েদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দেন। এ অবস্থায় দুই মেয়েকে নিজের জিম্মায় পেতে হাইকোর্টে রিট করেন জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো।