Dr. Neem on Daraz
Victory Day

নাইকো দুর্নীতি মামলা : খালেদার আবেদনের শুনানিতে যা হলো


আগামী নিউজ | আদালত প্রতিবেদক প্রকাশিত: আগস্ট ৯, ২০২৩, ০৫:২২ পিএম
নাইকো দুর্নীতি মামলা : খালেদার আবেদনের শুনানিতে যা হলো

ফাইল ছবি

ঢাকাঃ নাইকো দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চাওয়া বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার আবেদনের আংশিক শুনানি হয়েছে। বাকি শুনানি ১৪ আগস্ট। এরপর শুনানি আর পেছানো হবে না জানিয়ে আদালত বলেছেন, ওইদিন শুনে (আবেদনের শুনানি) শেষ করে দেব।
 
বুধবার (৯ আগস্ট) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চে আবেদনটির শুনানি শুরু হয়। 

আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মেহেদী হাছান চৌধুরী ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।


শুনানিতে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, এ মামলায় মূল শুনানি করবেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। তিনি অসুস্থ, যে কারণে শুনানি পেছানোর আর্জি জানাচ্ছি। 

তখন আদালত বলেন, আমরা দুদকের বক্তব্য শুনি, আপনি নোট নিন। আমরাও নোট নিচ্ছি। এরপর শুনানি করেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

শুনানিতে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ১৯৯৭ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের হয়েছিল। কিন্তু তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র হয়নি। হাইকোর্ট মামলাটি বাতিল করেছেন। সেই মামলা বাতিলের বিরুদ্ধে দুদক এখন পর্যন্ত আপিল করেনি। একই ইস্যুতে মামলায় খালেদা জিয়া মামলা মোকাবিলা করলে শেখ হাসিনা কেন করবেন না?


জবাবে দুদকের আইনজীবী বলেন, মামলার অভিযোগ গঠনের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে এ আবেদনটি করা হয়েছে। তাদের (খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের) দেখাতে হবে বিচারিক আদালত অভিযোগ গঠনের আদেশে কোথায় আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন। আমরা দেখাব আদেশের কোথাও আইনের ব্যত্যয় ঘটেনি। দুদক শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা বাতিলের আদেশের বিরুদ্ধে কেন আপিল করেনি, এটি এ মামলার বিষয়বস্তু নয়। কেন ওই মামলাটি বাতিল করেছেন, তার বিশদ ব্যাখ্যা হাইকোর্টের রায়ে রয়েছে। খালেদা জিয়ার মামলার আর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা এক নয়।

মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা অন্যান্য অভিযুক্তদের স্বীকারোক্তিতে উঠে এসেছে। গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ও এম এ এইচ সেলিমের স্বীকারোক্তিতে তা নিশ্চিত করেছেন। এ মামলাটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করার রায়ে (২০১৫ সালে) রায় দিয়ে আপিল বিভাগ বলেছেন, খালেদা জিয়ার অপরাধ প্রকাশ হচ্ছে, এই অপরাধের গুরুত্ব কতটুকু তা সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে নির্ণয় হবে। আর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা বাতিলের রায়ে (২০১০ সালে) হাইকোর্ট বলেছেন, এ মামলায় কোনো অপরাধ ঘটেনি।

দুদকের আইনজীবী বলেন, এ মামলার (খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে) অভিযোগ গঠনের পর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় মামলাটির অভিযোগ গঠনের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে এসেছেন। আগামী ২২ আগস্ট বিচারিক আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ রয়েছে। হাইকোর্টে শুনানির তারিখ থাকলে বিচারিক আদালত তারিখ পিছিয়ে দেন। বিচার আটকে থাকে। ফলে এ আবেদনের শুনানি হয়ে শেষ হওয়া জরুরি।


তখন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম বলেন, আগামী ১৪ আগস্ট বেলা ১১টায় রাখলাম। এরপর শুনানি আর পেছানো হবে না। ওইদিন শুনে (আবেদনের শুনানি) শেষ করে দেব।

এ পর্যায়ে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মেহেদী হাছান চৌধুরী বলেন, প্রস্তুতি নিয়ে এসেছি। আমরা আজকে শুনানি করতে চাই। ১০ মিনিটের মধ্যে শুনানি শেষ করব। 

তখন আদালত বলেন, ১৪ আগস্ট বেলা ১১টা থেকে শুনানি শুরু হবে। ওই দিন সবার কথা শুনব। পরে আদালত ১৪ আগস্ট পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন।

এর আগে গত ১৭ মে নাইকো দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। 

গত ১৯ মার্চ নাইকো দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯-এর বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান এ আদেশ দেন।  

অভিযোগপত্রভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, বাগেরহাটের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ এইচ সেলিম ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ। 

কানাডার কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিপুল আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক। দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম বাদী হয়ে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত দেখিয়ে কানাডার কোম্পানি নাইকোর হাতে তুলে দেওয়ার মাধ্যমে আসামিরা রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতি করেছেন।

২০০৮ সালের ৫ মে এই মামলায় খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। এতে আসামিদের বিরুদ্ধে প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়। 


এমআইসি

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে