Dr. Neem on Daraz
Victory Day

কী হচ্ছে আড়াই কোটি টাকার পাতকুয়ায়?


আগামী নিউজ | আমানুল্লাহ আমান, রাজশাহী প্রতিনিধি প্রকাশিত: মে ৩১, ২০২১, ০৩:৪৭ পিএম
কী হচ্ছে আড়াই কোটি টাকার পাতকুয়ায়?

ছবি : আগামী নিউজ

রাজশাহীঃ বরেন্দ্র অঞ্চলে বিনা টাকায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের সবজি ও ইরি ধানে সেঁচ সুবিধার জন্য ২০১৮ সালে প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। অথচ রাজশাহীতে ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সৌর বিদুৎ চালিত সেই ২০টি পাতকুয়া (ডাগওয়েল) কোনো কাজে আসছে না কৃষকদের। এ প্রকল্পকে সরকারি টাকা অপচয়ের অভিনব কৌশল বলেই মনে করছেন কৃষকরা। এছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে ডাগওয়েল পরিচালনা কমিটি গঠনেও বিলম্ব হচ্ছে। প্রভাবশালীরাই নিজেদের সুবিধামতো ব্যবহার করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

রাজশাহী বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের অক্টোবরে জেলার বাঘা, চারঘাট ও পবা উপজেলায় ‘জলাবদ্ধতা নিরসন এবং ভূ-পরিস্থ পানির প্রাপ্যতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ প্রকল্প’ শুরু হয়। প্রকল্পের অধীনে এই তিন উপজেলায় সৌরবিদুৎ চালিত ২০টি পাতকুয়া বা ডাগওয়েল ও ১০টি এলএসপি পাম্প স্থাপন করা হয়। শুধুমাত্র পাতকুয়া স্থাপনে খরচ হয়েছে প্রকল্পের ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

সূত্র জানায়, সম্পূর্ণ প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ২৮ কোটি টাকা। কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ পায় বিএমডিএ। বাস্তবায়নকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সুপারস্টার রিনিউক্যাবল এনার্জি লিমিটেড তড়িঘড়ি করে কাজ শেষ করে ফিরে যায় ঢাকার সেগুনবাগিচায়। কাজে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও বিন্দুমাত্র অনিয়ম হয়নি বলে দাবি করে বিএমডিএ। তাদের দাবি, পাতকুয়াগুলো ভূ-পরিস্থ পানির সংরক্ষণ, সেচ কাজে ব্যবহার ও ভূ-গর্ভস্থ পানির রিচার্জ বৃদ্ধিতে সহয়তা করছে। 

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, পবা উপজেলার সবকটি পাতকুয়া কৃষকের চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ। প্রতিটি পাতকুয়া থেকে মাত্র ২ জনেরও সুবিধা মিলছে না। সেইসাথে উদ্বোধনের ৪ মাস পরও সুবিধাভোগীদের কমিটি গঠন হয়নি। প্রকল্পে উল্লেখিত ২৪২ হেক্টর জমির সেচ সুবিধা সম্প্রসারণের ফলে ১৪৫৭ হেক্টর জমি আবাদ করার কথা কাগজকলমে থাকলেও বাস্তবতার সঙ্গে তার মিল নেই। এসব জমি থেকে ৮ হাজার ১৩ মেট্রিক টন অতিরিক্ত ফসল উৎপাদন দাবি করা হলে তারও কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। আর নির্মাণের ১ বছর পার হতে না হতেই কয়েকটি পাতকুয়া অকেজো হয়ে গেছে। এলাকার প্রভাবশালীর নিজস্ব সম্পত্তি হিসেবেই পাতকুয়া ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ একাধিক কৃষকের।

কৃষকরা জানান, চলতি বছরের জুন মাসে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই কার্যকারিতা হারিয়েছে বেশিরভাগ পাতকুয়া। আর এরইমধ্যে কয়েকবার মেরামত করা হয়েছে কয়েকটি। এমনকি পাতকুয়ার সমস্যা দেখা দিলে তাদের টাকা দিয়েই তা মেরামত করা হয়েছে। এক বছরের গ্যারান্টি থাকা যন্ত্রপাতি ৬ মাস না হতেই কীভাবে নষ্ট হয় এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কৃষকরা।

তারা জানান, নদী থেকে পানি তুললেও তাঁরা নিয়মিত পানি পান না। জমিতে সেচ দিতে ২০০ টাকা ঘন্টা গুনতে হয় তাদের। আবার টাকা দিয়ে সেচ দেয়ার পরও ধান উঠলে প্রতি বিঘায় ২ মণ ধান দাবি করেন ডাগওয়েল পরিচলানায় থাকা প্রভাবশালীরা। তাছাড়া কৃষকদের পানি নেয়ার কার্ড করে দেয়ার জন্য ১ হাজার করে টাকাও দাবি করা হয়েছে। 

পবা উপজেলার চর মাজারদিয়া পশ্চিমপাড়া এলাকায় নির্মিত একটি পাতকুয়ার পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন আলম শেখ। তিনি বলেন, এত টাকার জিনিসে মাত্র ৫ বিঘা জমিতে আবাদ হবে এটা যুক্তিযুক্ত না। আমার নিজের জমিতেই সেঁচ দিতে পারিনা। বাধ্য হয়ে ৩০ হাজার টাকায় শ্যালো মেশিন বসিয়ে সেটি দিয়েই ১০ বিঘা জমিতে সেচ দিতে হচ্ছে।

একই এলাকায় চাষি সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘সরকার ব্যর্থ কাজ করেছে এটা। এই টাকা দিয়ে একটা ডিপ করা যেত। এখন যে অল্প জমিতে সেচ দেয়া যাচ্ছে, সেটা বেড়ে ২০০ বিঘা জমিতে সেচ দেয়া যেত। সুইচ খুলে গিয়ে আছে, আমরা চালু করতে পারিনা।’

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সেচ প্রকল্পের সৌর বিদুৎ চালিত ‘এলএসপি পাম্প’ স্থাপন হয় উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের মাজারদিয়ার চর এলাকায়। এই এলএসপি পাম্পের দেখাশুনা করেন স্থানীয় প্রভাবশালী মেম্বারের ভাই মাবুদ। তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে বেশ কয়েকটি অভিযোগ। কথা হয় মাবুদের সঙ্গে। সব অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমার পাইঠের (শ্রমিক) দাম (পারিশ্রমিক) আছে। ডিপের (পাম্প) কার্ডে টাকা তোলার জন্য সারাদিন লস করে শহরে যেতে হয়। নদী পার হলেই ৪’শ টাকা খরচ হয়। তারপরেও টাকা বাঁকি রাখে। আমি ২০০ টাকা ঘন্টা নিই, অস্বীকার করব না।’।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো: নাজিরুল ইসলাম বলেন, রাজশাহীর চার উপজেলায় ২০ টি ডাগওয়েল হয়েছে। পবা উপজেলায় ১১টা, পুঠিয়া ২টা, বাঘা ২টা, চারঘাটে হয়েছে ৫টা। প্রতিটি ডাগওয়েল সাড়ে ৫ হেক্টর জমিতে সেচ দিতে পারবে এটা আমাদের টার্গেট। পাতকুয়াগুলো তার চেয়ে বেশি দিচ্ছে, ৭-৮ বিঘা পর্যন্ত।

পাতকুয়ার কার্যকাকারিতা ও পরিচালনা কমিটি গঠন নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে রিপোর্ট আছে। ৮-৯ জনের একটি করে পরিচালনা কমিটি আছে। রিপোর্টে সব আছে। রিপোর্ট তো আর এমনি দেয় না। মিনিস্ট্রির লোকজন সরেজমিনে গিয়ে দেখেছেন। প্রতিদিন ৮ ঘন্টা করে চলে। রোদ কম হলে সেদিন কম হবে। তাছাড়া ভালোই চলছে সব।’

এ ব্যাপারে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কে জে এম আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘আমি এখানে নতুন এসেছি। ডাগওয়েল সম্পর্কে এ মূহুর্তে তথ্য নেই। তথ্য সংগ্রহ করে কথা বলতে হবে।’

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে