Dr. Neem on Daraz
Victory Day

যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে বিনামূল্যের ওষুধ লুটপাট!


আগামী নিউজ | বিল্লাল হোসেন, যশোর জেলা প্রতিনিধি প্রকাশিত: মে ২, ২০২১, ০৭:৫৪ পিএম
যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে বিনামূল্যের ওষুধ লুটপাট!

ছবিঃ আগামী নিউজ

যশোরঃ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে সরকারি ওষুধ সামগ্রী থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা। প্রতি অর্থ বছরে কোটি কোটি টাকার ওষুধ সামগ্রী কেনা হলেও সেগুলো যায় কোথায় তা নিয়েও রয়েছে সমালোচনা। বিগত দিনে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) যশোর শাখার রিপোর্ট কার্ড জরিপেও ওষুধ বিতরণে অনিয়মের বিষয়ে উল্লেখ একাধিকবার করেছেন। অভিযোগ উঠেছে, রোগীদের মাঝে সরবরাহ না করে সরকারি ওষুধ সামগ্রী লোপাট করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, যশোরসহ আশপাশের  কয়েকটি জেলা ও উপজেলার রোগীদের আশা ভরসার স্থল হলো যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল। সরকারি এই স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠনে  প্রতিদিন দ্বিগুনের বেশি রোগি ভর্তি থাকেন। বহির্বিভাগে গড় চিকিৎসা সেবা নেন ৯ শ থেকে ১ হাজার রোগী। দেশসেরা হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত পাওয়ায় যশোরসহ নড়াইল, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, মাগুরা জেলার অধিকাংশ গরিব মানুষ চিকিৎসার জন্য এখানে আসেন। উদ্দেশ্য একটাই অল্প খরচে উন্নত চিকিৎসাসেবা পাওয়া। গরিব মানুষের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সরকারিভাবে এই হাসপাতালে ৮৪ প্রকারের ওষুধ সরবরাহ কর হয়। এর মধ্যে ইডিসিএল ৪৪ প্রকার ও স্বাস্থ্য অধিদফতর ও স্থানীয় অর্থে টেন্ডারের মাধ্যমে অবশিষ্ট ৪০ প্রকার ওষুধ কর্তৃপক্ষ ক্রয় করে।

এছাড়া চিকিৎসা সামগ্রী তো আছেই। এরমধ্যে এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন সেফট্রিঅ্যাকসন, সেফ্রাডিন হাইড্রোকরটিসন, ওমিপ্রাজল, ম্যাট্রোনিডাজল ,ক্যাসিন, ক্যাপসুল সেফ্রাডিন, ক্লিনডামাইসিন, এমোক্সসাসিলিন, সেফিক্সিম, ক্লিনডামাইসিন, ওমেপ্রাজল ৪০এমজি ও নাভিতে দেয়া ইনজেকশন, ট্যাবলেট অ্যালবেনডাজল, কারভিস্টা, সেফুরএক্সিম, সিটিরিজিন, ইটোরাক, ইসোরাল, হিস্টাসিন, লপিরিল, লপিরিল প্লাস, লোসারটন, মন্টিলোকাস্ট, নেপরোস্কিন, অফলোক্সাসিন, প্যান্টোনিক্স, স্যালবোটল, রাবিপ্রাজল, কারভিস্টা, সিরাপ অ্যামব্রোক্স, বি-কমপ্লেক্স, সেফুরএক্সিম, ডমপেরিডন, লবুপ্রোফেন, ড্রপ সিপরোসিন, ক্যামিক্যাল রি এজেন্ট, অপারেশনের জন্য বিভিন্ন সুতা, সার্জিক্যাল গজ, ব্যান্ডেজ, ক্যাথেটার, মাইক্রোপর, জিপসোনা, সপ্টরোল, ক্রেপ ব্যান্ডেজ রোল, সার্জিক্যাল গ্লোপস, সোফরাটোলা, বালিশ, বালিশের কভার ,মশারী নেট, লংক্লথ কাপড়, ট্রেটন ক্লথ কাপড়, অ্যাডোমিনাল সিট উল্লেখযোগ্য।

অনুসন্ধানকালে  সার্জারি, মেডিসিন, হৃদরোগ, গাইনি, অর্থোপেডিকস, গাইনি, শিশু, পেইং, লেবার  ওয়ার্ডের একাধিক রোগী  ও তাদের স্বজনরা জানিয়েছেন, রোগীর চিকিৎসার জন্য  হাসপাতাল থেকে যৎসামান্য ওষুধ দেয়া হয়। প্রায় ওষুধ ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র বাইরে থেকে কিনে আনেন। সেবিকারা রোগীর স্বজনদের বলছেন এই ইনজেকশন সাপ্লাই নেই তাই ওষুধ দেয়া হচ্ছে না। যে কারণে সেফটিএক্সোন প্রতিটি ইনজেকশন ১ গ্রাম ১৯০ টাকা, ২ গ্রাম ২৯০ থেকে ৩শ টাকা ও ওমিপ্রাজল ইনজেকশন ৮০ টাকা দরে তারা বাইরে  থেকে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। মূল্যবান এসব, ইনজেকশন কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন রোগীর স্বজনেরা।

দীর্ঘদিন ধরে এমন অবস্থা চললেও কর্তৃপক্ষের কোন মাথাব্যথা নেই। চুড়ামনকাটি গ্রামের লালিয়া খাতুন জানান, ২৫ তার মা ফাতেমা খাতুনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

রোগীর চিকিৎসার জন্য সেফটিএক্সোন ও ওমিপ্রাজল ইনজেকশন বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়েছে। রোগীর স্বজন আতিয়ার রহমান, আশানুর রহমান, ইকবাল আহমেদ, তুষার খান, বেবি খাতুন, ময়না বেগমসহ আরো অনেকেই জানান, রোগীর চিকিৎসার জন্য তারা সেফটিএক্সোন ও ওমিপ্রাজল ইনজেকশন কিনে এনেছেন। হাসপাতাল থেকে তেমন কোন ওষুধ ও ইনজেকশন দেয়া হয়নি।

তারা আরো বলেছেন, শুনেছি হাসপাতালে সরকারের বিনামূল্যে সরবরাহকৃত অনেক ওষুধ রয়েছে। কিন্তু বিতরণ করা হয় কম। আর দামি ট্যাবলেট, ইনজেকশন ও স্যালাইনতো রোগীদের দেয়া হয় না বললেই চলে। জিজ্ঞাসা করলেই সেবিকারা বলেন, সঙ্কট চলছে নতুবা শেষ হয়ে গেছে। কাশিমপুর গ্রামের তারা বেগম জানান, তার মেয়েকে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার করা হয়। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ৭ হাজার টাকারও বেশি ওষুধ সামগ্রী কিনতে হয়েছে। দামি সুতাই কিনতে হয় ৪ টি। তাহলে হাসপাতালের সরবরাহকৃত সুতা যায় কোথায় এমন প্রশ্ন তার।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সরকারি এ হাসপাতালে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত রোগীরাই ভর্তি হয় বেশি। আর্থিক সঙ্কটের কারণে তারা বেসরকারি হাসপাতালে যান না। তাদের ভরসা থাকে স্বল্প খরচে সরকারি হাসপাতালে সঠিক চিকিৎসা পাবেন। ওই সব রোগিরা হাসপাতালে ভর্তির পর পড়েন বেকায়দায়।

মূল্যবান ওষুধ কিনতে গিয়ে রোগীর স্বজনেরা হাফিয়ে উঠছেন। তবে প্রভাবশালী বা প্রভাবশালী ব্যক্তির কোন রোগী ভর্তি হলে রয়েছে ভিন্নতা। চিকিৎসার জন্য প্রায় ওষুধ দেয়া হয় হাসপাতাল থেকে। অথচ গরীব রোগীরা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

হাসপাতালের একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রতি অর্থ বছরে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এমএসআরের ৬ গ্রুপের দরপত্রের মাধ্যমে তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকার ঔষধ পত্র, গজ ব্যান্ডেজ ও তুলা, লিলেন সামগ্রী, সার্জিক্যাল ও যন্ত্রপাতি, ক্যামিক্যাল রি এজেন্ট, গ্রুপ- আসবাব পত্র ও কিচেন সামগ্রী ক্রয় করেন।

সরকারি এই ওষুধ রোগীরা খুব বেশি না পেলেও হাসপাতালের কতিপয় কর্মকর্তা কর্মচারী লাভবান হচ্ছেন।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ জানান, তাদের জানা মতে রোগীদের প্রচুর পরিমাণে সরকারি ওষুধ দেয়া হয়। এছাড়া বর্তমানে কোন ওষুধের সংকট নেই। রোগীরা কেনো ওষুধ পাচ্ছে না খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।

আগামীনিউজ/এএস

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে