রাজশাহীঃ রাজশাহীতে লাগামহীন করোনা পরিস্থিতি। ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জের রোগীদের মাধ্যমে রাজশাহীতে ছড়িয়েছে প্রায় ২০ দিন আগে। ফলে অবস্থা বেসামাল। করোনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান। বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে চিকিৎসার পরিধি। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে প্রথম দুই সপ্তাহে করোনায় মৃত্যু চাঁপাইয়ের রোগীর সংখ্যা বেশি থাকলেও সম্প্রতি রাজশাহীর রোগীর সংখ্যা থাকছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের তুলনায় দ্বিগুণ। সবশেষ বুধবার (৯ জুন) সকাল ৭টা থেকে বৃহস্পতিবার ( ১০ জুন) সকাল ৭টা পর্যন্ত রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মারা গেছেন ১২ জন। এরমধ্যে ৯ জনই রাজশাহীর বাসিন্দা। আর বাকি তিনজনের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় মারা যান ৮ জন। তারমধ্যে রাজশাহীরই ছিলেন ৫ জন, বাকি ৩ জন চাঁপাইনবাবগঞ্জের। ফলে লাগমহীনভাবে করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় বড় চ্যালেঞ্জের মুখে উত্তরবঙ্গের বিভাগীয় এ শহর। এ থেকে উত্তরণের উপায় কি? আর সমাধানই বা কোন পথে? এসব নিয়ে বৃহস্পতিবার (১০ জুন) আগামী নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন এখানকার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা।
সাক্ষাতকার নিয়েছেন আমাদের রাজশাহী প্রতিনিধি আমানুল্লাহ আমান
ডা. মো. হাবিবুল আহসান তালুকদার
পরিচালক, রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
করোনার নিশ্চিত সমাধান এখনো বলার সময় হয়নি। স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চললে সংক্রমণের হার অনেকাংশে কমবে। এটিই করতে হবে সকলকে। আর স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে মানানোর জন্য এখন দরকার আইনের কঠোর প্রয়োগ ঘটানো। তবে সমাধানের পথে যেতে চাইলে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক ব্যবহার ও সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস করা এবং অহেতুক জনসমাগম এড়িয়ে চলা জরুরী। তবেই আমরা আবারো সুন্দর একটি পৃথিবী দেখতে পাব।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামিম ইয়াজদানী
পরিচালক, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
করোনা থেকে উত্তরণের পথ রয়েছে। সেজন্য প্রথমত কঠোর লকডাউন, এরপর মানুষকে সচেতন করা এবং মোটিভেশন দিয়ে ঘরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। সমাধানের পথে যেতে চাইলে এগুলোর প্রয়োগ দরকার। আর হাতে নিতে হবে সমন্বিত কার্যক্রম। সেটিও হবে করোনামুক্তির অন্যতম উপায়। তবে সবার আগে দরকার কঠোর লকডাউন। অবশ্যই কঠোর লকডাউন দিতে হবে। এর বিকল্প নেই। কঠোর লকডাউন কার্যকর করে জনগণকে ঘরে রাখা গেলেই করোনা নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং মহামারীর এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব।
ডা. মো. আব্দুল কাইয়ুম তালুকদার
সিভিল সার্জন, রাজশাহী
লকডাউনই কোনো সমাধান নয়। লকডাউন থাকার পরও পাশ্ববর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে মানুষ লুকিয়ে চলে আসছে। প্রশাসনের লোকজন দিনরাত ২৪ ঘণ্টায় চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবুও গোপন রাস্তা দিয়ে চলে আসছে। শুধু একটি বা দুটি প্রয়োগ করলে হবে না। শুধু লকডাউন আর স্বাস্থ্যবিধির কথা বলে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। করোনা থেকে উত্তরণে সবগুলো পদ্ধতি একসাথে প্রয়োগ করতে হবে। পদ্ধতিগুলো অবশ্যই সরকারের এবং প্রশাসনের জানা আছে। সেগুলোর যথাযথ প্রয়োগ ঘটলেই করোনামুক্ত বাংলাদেশ আমরা দেখতে পাব।
ডা. মো. নওশাদ আলী
অধ্যক্ষ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ
করোনা এখনই বিদায় নেবে না। এটা আরো অনেক দিন থাকবে। রাজশাহীর সর্বত্র ছড়িয়েছে করোনা। তবে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কিছু কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। লকডাউন তো মানুষ মানছে না। তাদেরকে ঘরে রাখা যাচ্ছে না। করোনা নিয়ে এখনো উদাসীন তারা। তবে করোনার সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সবকিছু করা যেতে পারে। মানুষকে স্বাভাবিক জীবন-যাপনের সুযোগ দেয়া যায়। তবে সকল স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে মেনেই।
আগামী নিউজ/শরিফ