Dr. Neem on Daraz
Victory Day

পাট থেকে পলিথিনের বিকল্প, সোনালী ব্যাগ-এর জন্মকথা


আগামী নিউজ | মাহা মির্জা প্রকাশিত: মে ২, ২০২১, ১২:০২ পিএম
পাট থেকে পলিথিনের বিকল্প, সোনালী ব্যাগ-এর জন্মকথা

ঢাকাঃ বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ড. মোবারক আহমদ খান সোনালী ব্যাগ এর উদ্ভাবক। পাট থেকে তিনি তৈরি করেছেন পলিথিনের বিকল্প — সোনালী ব্যাগ। যেটি দেখতে পলিথিনের মতো হলেও আসলে পলিথিন নয়, এটি অল্প সময়ের ব্যবধানেই পরিবেশে মিশে যায়। ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও এর অগ্রগতি নানা কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সোনালী ব্যাগের উৎপাদন প্রক্রিয়া, এর পরিবেশে মিশে যাওয়ার প্রক্রিয়া, পরিবেশের উপর এর প্রভাব, এর ব্যবহারিক সমস্যা, বৃহৎ পরিসরে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা নিয়ে তার এই সাক্ষাৎকারটি ‘দৃক পিকচার লাইব্রেরি’ তাদের একটি গবেষণার অংশ হিসেবে গ্রহণ করে।

ড. মোবারক আহমেদ খান ১৯৯০ এর দশক থেকে পাট নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশন (বিজেএমসির) প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা হিসেবে কর্মরত। পাটের পলিথিন ছাড়াও তিনি পাট থেকে জুটিন নামক টিনও তৈরি করেছেন। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন মাহতাব উদ্দীন আহমেদ।  

সোনালী ব্যাগ তৈরিতে কি কি লাগে? এর উৎপাদনের পর্যায়গুলো কি একটু সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করবেন?

ড. মোবারক আহমদ  খান: সোনালী ব্যাগটা মূলত উৎপাদিত হয় পাট থেকে। আসলে পাট থেকে কথাটা ঠিক না, পাটের অংশ থাকে, পাটের মূল অংশ হল তিনটা ­— একটা হল সেলুলোজ যেটা ৭০ পারসেন্ট অন এভারেজ বলছি, কমবেশি হয়, হেমোসেলুলোজ থাকে ২০ পারসেন্ট, আর লিগনিন থাকে ১০ পারসেন্ট। এই তিনটা হল মূল ইনগ্রেডিয়েন্টস। তারপর অন্যান্য ছোটখাটো জিনিস — মাইক্রো অ্যাশ এন্ড আদার প্রোডাক্টস থাকে। কিন্তু আমরা এখান থেকে শুধু সেলুলোজ আর হেমোসেলুলোজটা একবারে নিচ্ছি এটা করার জন্যে। দ্যাট মিনস, আমরা প্রায় ৯০ পারসেন্ট জিনিস পাটের থেকে নিয়ে নিচ্ছি। আর যে ১০ পারসেন্ট যেটা থাকছে — লিগনিন, যেটা একটা ইমপর্টেন্ট বায়ো পলিমার — এটাও কিন্তু খুব দামী বায়ো পলিমার, সেই দামী বায়োপলিমারটাকেও আমরা যখন সোনালী ব্যাগ তৈরি করবো, বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে এটাকেও আমরা কালেক্ট করবো এবং আমরা এটাকে কমার্শিয়ালি ভায়াবল করে ফেলবো বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে। তখন সোনালী ব্যাগের যে দাম সেটাও এটার সাথে এডজাস্টেবল হয়ে যাবে বলে আমার ধারণা। তো এখানে সেই সেলুলোজটুকু আমরা নিচ্ছি — সেলুলোজ, হেমোসেলুলোজটুকু। তো, সেলুলোজটাকে — যেহেতু আপনারা জানেন আমরা যে শার্ট, কাগজ বা যা দেখছি এটা সবই সেলুলোজ এবং পৃথিবীতে সৃষ্টিকর্তার মূল জিনিস হল প্রোটিন, দ্বিতীয়টা হল সেলুলোজ। যেদিকেই আমরা যাই — গাছপালা — সবকিছুর মধ্যে সেলুলোজ আছে। তো, আমরা সেই সেলুলোজটুকুই এখান থেকে নিয়েছি।

এখন সেই সেলুলোজটাকে আমরা কনভার্ট করেছি ওয়াটার সলুবল সেলুলোজ হিসেবে। ওয়াটার সলুবল সেলুলোজ হিসেবে কনভার্ট করার পরে এখানে সেই সলুশনটা নিয়ে এর সাথে আবার একটা বাইন্ডার —এই বাইন্ডারটাও ন্যাচারাল আরেকটা পলিমার, যেটা ন্যাচার থেকেই আসে — তারপরে এর সাথে ক্রস লিংকার বলেন; অ্যাডিটিভস বলি আমরা, অথবা কালার সব — আমরা একত্রে মিশাই। মিক্স করে এটা রিঅ্যাকশন ট্যাংকে দেই। সেই রিঅ্যাকশন ট্যাংকিতে আমাদেরকে তাপমাত্রা, প্রেসার এবং টাইম মেইনটেইন করতে হয় রিঅ্যাকশনটা কমপ্লিট করার জন্যে। এই রিঅ্যাকশনটা কমপ্লিট হলে সেই সলুশনটা একটু ড্রাই করে, মানে একটু ঠান্ডা করে এটা নরমাল রুম টেম্পারেচারে আনতে হয়। তারপর আমরা এটা ড্রায়ার মেশিনে দিয়ে দিচ্ছি। ড্রায়ার মেশিনে দিলে — সে কনভেয়ার বেল্টের মতো — এদিক দিয়ে সলুশন যাচ্ছে ওদিক দিয়ে ফিল্মটা বেরুচ্ছে। এই যে সিম্পল প্রসেস, এই সিম্পল প্রসেসে কিন্তু সোনালী ব্যাগটা তৈরি হচ্ছে।

আমরা যেটা দাবি করি যে সোনালী ব্যাগটা বায়োডিগ্রেডেবল, এনভায়রমেন্ট ফ্রেন্ডলি, অ্যাট দ্যা সেইম টাইম, আমরা ক্লেইম করছি যে আমার প্রসেসটাও — প্রিপারেশন প্রসেসটাও — এনভায়রমেন্ট ফ্রেন্ডলি। এটা ক্লোজ লুপ সিস্টেম। কোনরকম এনভায়রমেন্টে এটা ক্ষতি করবে না। যা আছে সবগুলো আমরা রিসাইকেল করে নিয়ে আসতে পারবো। এটা হল সোনালী ব্যাগের সিম্পল প্রসেস।

আমরা যেটা দাবি করি যে সোনালী ব্যাগটা বায়োডিগ্রেডেবল, এনভায়রমেন্ট ফ্রেন্ডলি, অ্যাট দ্যা সেইম টাইম, আমরা ক্লেইম করছি যে আমার প্রসেসটাও — প্রিপারেশন প্রসেসটাও — এনভায়রমেন্ট ফ্রেন্ডলি। এটা ক্লোজ লুপ সিস্টেম। কোনরকম এনভায়রমেন্টে এটা ক্ষতি করবে না। যা আছে সবগুলো আমরা রিসাইকেল করে নিয়ে আসতে পারবো। এটা হল সোনালী ব্যাগের সিম্পল প্রসেস।

এটা কতদিনে মাটিতে মিশে যায়? পানিতে মিশতে কতদিন লাগে? আমরা দেখেছি বিভিন্ন ক্যাটাগরির সোনালী ব্যাগ তৈরি হচ্ছে যার কোনটা পানিতে দিলে কয়েক ঘন্টার মধ্যে মিশে যায় আবার কোনটার ক্ষেত্রে শোনা যাচ্ছে ৬ মাস সময় লাগে। এই পার্থক্য কেন?

ড. মোবারক আহমদ  খান: এই সোনালী ব্যাগ বা সোনালী শিট যেটা আমরা তৈরি করছি — পাট থেকে শিট — এটার একটা বিশেষত্ব হল, এটা টাইম ডিপেন্ডেবল বায়োডিগ্রেডেবল। কাস্টমার উইশ যেভাবে করবে — যে আমি এটাকে ইনস্ট্যান্ট পানিতে দিলে গলে যাবে, আর যদি কাস্টমার মনে করে যে এটা ৬ ঘন্টা পানিতে সাসটেইন করবে, আর যদি কেউ মনে করে যে না, এটাকে আমি ৬ মাস পানির মধ্যে রেখে দেব — সেটাও আমরা করতে পারবো। এইটা এটার একটা বেসিক। এবং ঠিক সয়েলেও তাই। মাটির নিচেও সয়েল ব্রুইয়াল টেস্টেও একই জিনিস। এটা আমরা ইমিডিয়েটলি — ইমিডিয়েটলি বলতে যে ৬ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই প্রথম যেটা খুব ডিগ্রেডেবল — সেটা তৈরি করতে পারবো। তারপরে এটাকে তিন মাস, ছয় মাস করতে পারবো। এবং ধরেন জাপানে কোরিয়াতে চায়নাতে এরা এগ্রিকালচার ফিল্ডে একধরনের পলিথিন শিট ইউজ করে যেটা এক বছর থাকতে হবে, ঝড় বৃষ্টি মেনেও এক বছর থাকতে হবে। তো এটা কিন্তু আমরা কোরিয়াতে স্যাম্পল পাঠিয়েছি। এবং তারা টেস্ট করে রেজাল্ট আমাদের দিয়েছে। এক বছর পর্যন্ত তাদের এটা থাকছে। তার পর থেকে — এর মধ্যে সে ডিগ্রেড শুরু করে — কিন্তু সাসটেইন করে এক বছর পর্যন্ত। ৮ মাস পর্যন্ত ভাল থাকে, আস্তে আস্তে ডিগ্রেড করে।

তো, এটার মূল কাহিনীটা হল যে, এটার ভেতরে আমরা যে কেমিক্যালসগুলো মিশাচ্ছি, এই কেমিক্যালসগুলোর পারসেন্টেজ কম বেশি করে এর ভেতরে ক্রস লিংকিং ডেনসিটি একটা আছে যেটা হল যে এটা কত শক্তিশালীভাবে বন্ডেজ হয়েছে। সেই বন্ডের জন্যই আমরা এটা করতে পারি। যেটা পলিথিন, পলিপ্রপিলিন বা আদার প্লাস্টিকসে করা সম্ভব না। এটার (সাধারণ পলিথিনের) যেটা হয়ে যাবে একবারই হয়ে যাবে। তো এটার (সোনালী ব্যাগের) বিউটিটা হল এখানে আমাদের হাতের উপর ডিপেন্ড করছে যে আমরা কি জিনিস বানাতে চাইছি। জেনারেলি এটা কাস্টমার্স ডিজাইনের উপর নির্ভর করে। ব্যাগ যেগুলো — শপিংয়ের জন্য যে ব্যাগ — এটা আমরা চাচ্ছি ৮ থেকে ১০ ঘন্টা পানিতে সাসটেইন করুক। একটা লোক বাজার করে আসলো, যেহেতু এটা বেশি ইউজ হবে সুতরাং তার উপরে (নির্ভর করে)। মুদি দোকানেরও — যেটা শপিং ব্যাগ, চেইন শপে যখন যাবে বিদেশে তখন — যে ব্যাগগুলি দেয়া হবে সেটা যাতে ৭-৮ ঘন্টার মধ্যে পানিতে মিশে যায়, অথবা মাটিতে ম্যাক্সিমাম তিন মাসের মধ্যে সে যেন ডিগ্রেড করে। কারণ আপনি বাজার করে আসার সময় যদি একটা ব্যাগ নিয়ে আসলেন — বৃষ্টি নামল বা স্লোয়িং হল — ওটা যদি ছিঁড়ে পড়ে যায় তাহলে তো হবে না। সেজন্য এটাকে ওই স্টেজে নেয়া হয়। শপিং ব্যাগগুলি কিন্তু আমরা ওই স্টেজে নিচ্ছি।

কিন্তু প্যাকেজিং ম্যাটেরিয়াল যদি চান — একটা র‌্যাপিং ম্যাটার — তখন কিন্তু তাকে স্ট্রেংথটা বাড়িয়ে দিতে হবে। এটা যেন বৃষ্টির পানিতে সহজে ক্ষতি না হয় — গার্মেন্টসের প্যাকেটে — এটা ডিপেন্ড করে আরকি। এটা ইউজের উপর নির্ভর করবে যে আপনি কিভাবে নিবেন। এখন আপনি বাজার থেকে মাছ কিনে আনবেন, মাছটায় তো পানি থাকবে, লিকুইড কিছু কিনে আনতে হলে আপনি যাতে পারেন আরকি সেরকম ভাবেই তৈরি করা হয়।

যখন কোন একটা ডিউরেশন দেয়া হয় তিন মাস বা ছয় মাস সেটার মানে হল এই যে ডিগ্রেড করা সে শুরু করবে আগে থেকেই। তবে ওই ডিউরেশনের পরে ইউ ক্যান নট ফাইন্ড এনি ট্রেস। সবচেয়ে কম সময়ে যেটা মিশে যায়, যেটা আপনারা ভিডিও দেখেছেন পানিতে দেয়া মাত্র গলে যাচ্ছে এগুলো ১৫ দিন সময় লাগবে মাটিতে মিশে যেতে। এবং মাটিতে মেশার বিষয়টি সয়েল কন্ডিশনের উপর ডিপেন্ড করবে। মাটি বলতে কিন্তু মাটিরও একটা কন্ডিশন আছে। সে কন্ডিশন যদি বালুর মধ্যে দেন তাহলে কিন্তু সে ১৫ দিনে (মিশে) যাবে না।

সোনালী ব্যাগ যে বায়োডিগ্রেডেবল সেটা কিভাবে প্রমাণ করা হয়েছে? আমরা সোনালী ব্যাগের পানিতে গলে যাওয়া, আগুনে পুড়ে ছাই হওয়া এবং মাটিতে মিশে যাওয়ার কিছু ছবি/ভিডিও দেখেছি। সেগুলোর বিষয়ে আরেকটু বিস্তারিত জানতে চাই। আমরা নিজেরা যদি সোনালী ব্যাগ কিনে সেটা পানিতে রেখে দেই কিংবা মাটিতে পুঁতে রাখি তাহলেও কি একই রকম ফলাফল পাব? লোনা পানি, পরিস্কার পানি, ময়লা পানিতে এর গলে যাওয়ার ফলাফল কিরকম? আর বিভিন্ন রকম মাটিতেই বা এটির গলে গলে যেতে কত সময় লাগে? বিশেষ করে যে মাটিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক দেয়া হয়েছে আর যেটাতে দেয়া হয়নি এই দুই ধরনের মাটির মধ্যে মিশে যাওয়ার ক্ষেত্রে এই ব্যাগের ফলাফল কি?

ড. মোবারক আহমদ  খান: ডিগ্রেডেশন ডিপেন্ড করে দুটি জিনিসের উপরে — যেটা ডিগ্রেড করবে এবং কোন মিডিয়ায় ডিগ্রেড করবে। সেটা হল মানে ঠিক করতে হবে। ডিগ্রেড করে কারা? মাইক্রোবাওয়েল। মাটির ভেতরে ডিগ্রেড করবে মাইক্রোবাওয়েল। মাইক্রোবাওয়েল খেতে শুরু করবে। খেতে খেতে যখন সে এটা খেয়ে ফেলবে এটা হল একটা। আর পানিতে যেটা হয় সেটা হল পানির সাথে একটা রিঅ্যাকশন-বন্ডিং হয়। বন্ডিং হয়ে তার অরজিনাল বন্ডিংগুলো সে (সোনালী ব্যাগ) ভেঙ্গে দিচ্ছে। হাইড্রোফোবিক হয়ে সে ভেঙ্গে যাচ্ছে। তো, এখানে যেটা হল যে পানির ভেতরে ব্যাকটেরিয়া বেশি থাকবে, সেই পানিতে কিন্তু তাড়াতাড়ি যাবে (ডিগ্রেড করবে)। ধরেন আপনি বললেন যে ড্রেনেজ ওয়াটার, যদি এটার মধ্যে ফেলে দেই, তাহলে কিন্তু নরমাল ফ্রেশ ওয়াটারের থেকে তাড়াতাড়ি যাবে। কারণ যেহেতু এখানে দুটা জিনিস হচ্ছে, একটা হল মাইক্রোবাওয়েল খেয়ে ফেলছে, আরেকটা হল পানিতে ও (সোনালী ব্যাগ) রিঅ্যাকশন করে গলে যাচ্ছে, বন্ড ছেড়ে দিচ্ছে।

আর মেরিন ওয়াটারের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি যে (মিঠা) পানিতে যেভাবে যায় ও একইভাবে যাচ্ছে। মেরিন ওয়াটারের জন্য তার কোন খুব একটা পরিবর্তন হচ্ছে না। কোন সময় দেখা যায় কিছু সময় বেশি লাগলো, কোন সময় কম। ইট ডিপেন্ডস অন পারসোনাল এরর। বিকজ, যখন আমরা সলুশনটা, আমরা তো মেরিন ওয়াটার — এখানে তৈরি করি ওয়াটারটা — আর্টিফিসিয়াল তৈরি করে আমরা টেস্টগুলো করেছি। তবে একই রকম যাচ্ছে। এতে কোন ভুল নাই।

এখন মাটির ভেতরেও সেখানে যে ময়েশ্চার; মাটির দেখবেন যে একটা হল বালিমাটি, সেখানে ময়েশ্চার নাই। আবার যেখানে দেখবেন যে একটা নরমাল মাটি — যেটা দেখি আমরা আমাদের জমিতে — সেইটায় কিন্তু ১২ পারসেন্ট ওয়াটার থাকে। যখন আবার পুকুরের পাড়ে কাদামাটি যেটা দেখি সেইটার মধ্যে কিন্তু ২০ পারসেন্ট পানি থাকে। তো, এই পুকুরের পাড়ে, কাদামাটির মধ্যে, যেখানে পানি আছে সেখানে কিন্তু এটা ফাস্ট যাবে। কারণ ওখানে মাইক্রোবাওয়েলও থাকে, আর পানির সাথে রিঅ্যাকশন করে আগে সে গলে গেল, তারপরে সে মাটির সাথে মিশে যাচ্ছে। এই মেকানিজমগুলো হল এইভাবে (কাজ করে)। বালিমাটিতে অবশ্যই অনেক বেশি সময় লাগবে। কারণ ওখানে মাইক্রোবাওয়েল না থাকলে তো সে খাওয়া শুরু করবে না — এইটাই আরকি।

কী কী টেস্ট করেছেন এক্ষেত্রে তার কিছু উল্লেখ করবেন কি?

ড. মোবারক আহমদ  খান: এই টেস্টগুলো- টেস্ট মেথড আছে। এএসটিএম- আমেরিকান স্ট্যান্ডার্ড মেথড, (আরেকটা হল) ডিন — জার্মান স্ট্যান্ডার্ড মেথড, আর হল আপনার আইএসও — যেটা ইন্টারন্যাশনাল সাইন। এরকম মেথডগুলোর উপর ডিপেন্ড করে আমরা টেস্ট — প্রত্যেকটা টেস্টেরই একটা ইন্টারন্যাশনাল ওয়ে আছে। আমি নিজে টেস্ট করলেই হবে না। আমাকে যেকোন একটা টেস্ট ফলো করতে হবে। ধরেন আমি যখন জার্মানীতে এই টেস্টটা করেছি, তখন একটা চেম্বারই ছিল এরকম, চেম্বারের ভেতরে ময়েশ্চারটা সবসময় কন্ট্রোল করা হয়। মাটির ময়েশ্চারটা ঠিক থাকে। আমরা তখন ডিন স্টান্ডার্ডে করেছি, জার্মান স্ট্যান্ডার্ড – ডিআইএন।

কিন্তু আমরা এএসটিএম মেথড ফলো করেছি বাংলাদেশে। আমরা সরাসরি মাটির নিচে নরমাল ফিল্ডে দেখেছি। ওটাতে (পূর্বোক্তটিতে) একটা আর্টিফিসিয়াল ফিল্ড তৈরি করা হয়েছিল। আর নরমাল ফিল্ডে যখন আমরা দেখেছি; আর আমরা এখানে কি করেছি — একটা বাটি নিতাম, বাটির মধ্যে মাটি নিলাম, মাটিতে কত ডেপথে রাখছি এটা; ডেপথেরও একটা ব্যাপার আছে, কত ডেপথের নিচে সে কিভাবে ঘটবে। এবং এখানে আমরা ময়েশ্চারটাও কন্ট্রোল করি। ময়েশ্চারটা কন্ট্রোল করে দেখতে পারি যে কিভাবে কোন জায়গাটায় ডিগ্রেড করছে। এরপরে আমরা গেলাম ফিল্ড ট্রায়ালে, কারণ কেউ তো আর বাটি বানিয়ে এরকম করবে না। আমরা থ্রো করবো ফিল্ডে, ফিল্ডে থ্রো করলে কি হয়? যেটা হয়ত মাটির নিচেই যাবে না, মাটির উপরেই পড়ে থাকবে। আস্তে আস্তে সে মাটির সাথে, কেউ তো আর — যদি পুঁতে রাখে, ল্যান্ড ফিলিং যেটাকে বলে, তখন একভাবে সে যাচ্ছে। আরেকটা হল যদি আমরা উপরে রেখে দেই তাহলে সে কিভাবে যাবে — এই সবগুলো টেস্টই কিন্তু আমরা আমাদের অফিসে, আমাদের ল্যাবরেটরিতে, শুধু এখানে না, আমি বিভিন্ন দেশের — জার্মানীতে, জাপানে, আমেরিকাতে, সব জায়গাতেই আমরা ওদের স্টান্ডার্ডে টেস্টগুলো করেছি। এবং সেই টেস্টগুলোর রেজাল্ট প্রায় সেইম। কারণ যখন যেই দেশের ময়েশ্চারের কন্ডিশন থাকে, তখন সেই সবের উপর ডিপেন্ড করে। তবে এই ডিগ্রেডেশনটা ডিপেন্ড করে ময়েশ্চারের উপরে, পানির কন্ট্রোলের উপরে, এবং মাইক্রোবাওয়েলের কন্ট্রোলের উপরে।

এই সবগুলো টেস্টই কিন্তু আমরা আমাদের অফিসে, আমাদের ল্যাবরেটরিতে, শুধু এখানে না, আমি বিভিন্ন দেশের — জার্মানীতে, জাপানে, আমেরিকাতে, সব জায়গাতেই আমরা ওদের স্টান্ডার্ডে টেস্টগুলো করেছি। এবং সেই টেস্টগুলোর রেজাল্ট প্রায় সেইম।

এখন যদি কেউ মাইক্রোবাওয়েল তৈরি করে — এখন কোন মাইক্রোবাওয়েল এটা খায়, সেটা কিন্তু আমরা টেস্ট করে ফেলেছি। সেই মাইক্রোবাওয়েল যদি আমরা একটা ফিল্ড বানিয়ে রাখলাম যেখানে মাইক্রোবাওয়েল কালচার করেছে তার মধ্যে এটাকে দিয়ে দিলে হয়তো দেখব মাত্র দুই দিনেই মাইক্রোবাওয়েল এটাকে খেয়ে ফেলেছে। তারপরও, এটা যদি আমি ড্রয়ারে রাখি, তাহলে দেখা যাবে যে তেলাপোকা এটাকে খাওয়া শুরু করে দিয়েছে। কারণ এটা এডিবল (খাওয়ার) জিনিস তো! তেলাপোকা খাচ্ছে। আমার এখানে এই ড্রয়ারের থেকে নিয়েও খেয়ে ফেলছে। তো, সেজন্যে এই ডিগ্রেডেশন কথাটা কিন্তু খুব ভেইগ টার্ম। রিয়েলি ভেইগ টার্ম। পলিথিন ডিগ্রেড হয় না এই কথাটা ঠিক না। পলিথিন হয়তো ২০০০ বছর পরে গিয়ে ডিগ্রেড করবে। মাটি এমন একটা জিনিস সব কিছুকেই সে — এটা সময়ের উপর ডিপেন্ড করে ডিগ্রেডেশনটা আসে। বিশাল সাইন্স আছে এই ডিগ্রেডেশনের ব্যাপারটা নিয়ে। এবং এটা একটা কন্ট্রোভার্সিয়াল টার্ম আরকি এই ডিগ্রেডেশন। যেমন বাজারে যেসব অন্যান্য জিনিস আসে, সেগুলো, আপনি এই কাপড়টা মাটিতে ফেলে দিলে সে ডিগ্রেড করবে। কিন্তু কতদিনে করবে? এটা টাইমের ব্যাপার। এবং কোন মিডিয়াতে করবে? এই জায়গায় তখন সবগুলো উল্লেখ করতে হয় আমাদের। তো আমরা এই টেস্টগুলো সবই করেছি। এখন থার্ড পার্টিতে (ডিগ্রেড করার) টেস্টগুলো আমরা করাই নাই।

ডিগ্রেডেশন কথাটা কিন্তু খুব ভেইগ টার্ম। রিয়েলি ভেইগ টার্ম। পলিথিন ডিগ্রেড হয় না এই কথাটা ঠিক না। পলিথিন হয়তো ২০০০ বছর পরে গিয়ে ডিগ্রেড করবে। মাটি এমন একটা জিনিস সব কিছুকেই সে — এটা সময়ের উপর ডিপেন্ড করে ডিগ্রেডেশনটা আসে।

থার্ড পার্টির মাধ্যমে আপনার এই সোনালী ব্যাগের কার্যকারীতার কোন পরীক্ষা কি এখনো হয়েছে? না হলে কেন হয়নি? বিএসটিআইয়ের মাধ্যমে কেন এটা এখনো করা যায়নি? আপনি কিছুদিন আগে এক জার্মান ল্যাবে সোনালী ব্যাগ পরীক্ষার জন্য পাঠাতে চেয়েছিলেন যেটার জন্য ফি হিসেবে ৭৫ কোটি টাকার মতো লাগবে বলে শোনা গিয়েছিল? সেটার বিষয়ে আর কোন অগ্রগতি কি হয়েছে? না হলে কেন হয়নি?

ড. মোবারক আহমদ  খান: না। এই ৭৫ কোটি টাকার ফিগারটা ঠিক না। এটা ওরা, মানে আমাদের দেশের ৩০ লক্ষ টাকার মতো লাগতো আরকি। এটা হল টুব, টিইউবি বলে, এই টুব পৃথিবীর মধ্যে ওয়ান অব দ্যা বেস্ট সার্টিফিকেট, যেটা দিলে সে সার্টিফিকেটটা সারা ওয়ার্ডওয়াইড একসেপ্ট করে।  আমরা যোগাযোগ করছিলাম, এরা আগেই আমাদের কাছে ৬৭৫ ইউরো অগ্রিম চেয়েছিল। কারণ ওরা অগ্রিম চায়, কারণ বিশ্বাস করতে পারে না যে একটা কাজ শুরু করলো, কিন্তু আমরা পরে টেস্ট করালাম না — এরকম একটা ভাবের জন্য ওরা টাকাটা চায়।

পরে আমরা একটা জার্মান বন্ধুর মাধ্যমে করেছিলাম। ওরা জার্মানীর কাছে অগ্রিম টাকাটা চায় না। আমাদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকাটা চাচ্ছিল। তো সেই জায়গাটা সামহাউ আমরা সব রেডিও হয়ে গেছিলাম — টাকাটা আমরা জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের থেকে কিছু টাকা দিব, আর বিজেএমসি কিছু টাকা দিলে আমরা এটা করব। কিন্তু এই করোনাকালীন সময়ে যাতায়াত বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে স্যাম্পলগুলো (পাঠানো যায়নি)। বাট নাউ উই আর ট্রায়িং এগেইন। ওদের সাথে আমরা আবার কথা বলছি যে এটাকে টেস্ট করানোর জন্য। থার্ড পার্টি টেস্টটা কমার্শিয়াল প্রোডাকশনের জন্য মোস্ট ইমপর্টেন্ট। এটা লাগবেই।

থার্ড পার্টি টেস্ট, যিনি ব্যবসা করবেন, যেই দেশে ব্যবসা করবেন সেই দেশে থেকেই কিন্তু তার এই অ্যাক্রিডেশন সার্টিফিকেটটা নিতে হবে। আমরা বিএসটিআইয়ের মাধ্যমে অলরেডি করে ফেলেছি। তারা পারমিশন দিয়েছে এটা বাজারে বিক্রি করার। উই হ্যাভ দ্যাট সার্টিফিকেট। এটা করোনার আগেই, গত বছর মার্চ এপ্রিলে আমরা আগেই দিয়েছিলাম। কিন্তু আমি নিজে গিয়ে ওদেরকে বলে এসেছিলাম, তো ওরা পরবর্তীতে আমাদের — যেহেতু এটা ওদের কি একটা আইন বলে যে আইনের মধ্যে এগুলি নয়, সুতরাং এটা বাজারে বিক্রি করা (যাবে)। আমরা ল্যাবরেটরির যে রিপোর্টগুলো করেছি সেই রিপোর্টগুলোও ওদের জমা দিয়েছিলাম। তখন ওরা এটাকে একসেপ্ট করে নিয়েছে। যেমন আমি যে প্যাটেন্ট করেছি, এই প্যাটেন্টটিও কিন্তু আমার এই ল্যাবরেটরি টেস্টের উপর ডিপেন্ড করে তারা দিয়েছে।

আর থার্ড পার্টি — থার্ড পার্টির টেস্টটা আপনার লাগে হল ব্যবসার ক্ষেত্রে। যখন যে দেশে ব্যবসা করবে অ্যাক্রিডেশন লাগবে। বাট এটা — আমি এত বড় একটা ডিক্লারেশন দিয়েছি, এটা সব টেস্ট না করে কিন্তু আমি এই ডিক্লারেশনটা দেই নাই। এবং একাধিকবার, একাধিক লোক দিয়ে কাজটা করিয়েছি আমরা। এটা শুধু এই টেস্ট না। এর পেছনে হাজারো রকম টেস্ট করতে হয়েছে। এটার ভেতরে মাইক্রোস্কোপ দিয়ে দেখলে পাটের ফাইবার দেখা যায়। এমনি (খালি চোখে) দেখা যায় না। কিন্তু যখন মাইক্রোস্কোপের ভেতর দেয়া হয় — আমার কাছে ছবি আছে। দেখবেন মাইক্রোফাইবার এখানে রয়ে গেছে। সো দিস ইজ প্রুভড — যেটা পলিথিনের মধ্যে পাবেন না — প্রুফ যে দেয়ার ইজ সাম ফাইবার ইনসাইড। খালি চোখে দেখতে পারবেন না। এবং সেই ফাইবারের লেংথ পর্যন্ত আমরা মিজার করেছি। যে এটার কত লেংথ, কত ডায়ামিটার সেগুলি — এটা যে পাটের তৈরি — ইটস অ্যানাদার প্রুফ। থার্ড পার্টির পরীক্ষাটা তাই আমরা এখনো করি নাই তবে আমরা প্রসেসে আছি। কিন্তু যদি কোন দেশ মনে করে যে আমরা ব্যবসা করবো, আমি সবাইকে বলি, আমেরিকানদের বলি বা ইউরোপিয়ানদের বলি যে তুমি যে এটা নিতে চাচ্ছ, আগে তুমি এটা নিয়ে ওখান থেকে তুমি এটার একটা অ্যাক্রিডেশন সার্টিফিকেট নিয়ে নাও। আর না হলে তুমি ওই দেশে ব্যবসা করতে পারবে না।

সব টেস্ট না করে কিন্তু আমি এই ডিক্লারেশনটা দেই নাই। এবং একাধিকবার, একাধিক লোক দিয়ে কাজটা করিয়েছি আমরা। এটা শুধু এই টেস্ট না। এর পেছনে হাজারো রকম টেস্ট করতে হয়েছে। এটার ভেতরে মাইক্রোস্কোপ দিয়ে দেখলে পাটের ফাইবার দেখা যায়।

আমি চাচ্ছি যে খুব শিগগিরই, একটা ফান্ড পেলেই — গভর্নমেন্টের কাছে আবার নতুন করে প্রপোজাল দিচ্ছি — যে এটা দিলেই আমি থার্ড পার্টির টেস্টটা করতে পারবো। ইটস নট আ বিগ অ্যামাউন্ট তাই না? ত্রিশ লক্ষ টাকা তো কোন টাকা না। আসলে টাকাটা আটকায় প্রসেসগত কারণে। আসলে একটা বছর — আমাদের কিন্তু ধরে নিতে হবে যে একটা বছর কিন্তু নাই আমাদের হাতে (করোনার কারণে)। আমরা গত ফেব্রুয়ারিতে যেখানে ছিলাম এখন সেই ফেব্রুয়ারিতেই কথা বলছি। আমি কিন্তু এই কথাটাই বলতে চাই।

আমি চাচ্ছি যে খুব শিগগিরই, একটা ফান্ড পেলেই — গভর্নমেন্টের কাছে আবার নতুন করে প্রপোজাল দিচ্ছি — যে এটা দিলেই আমি থার্ড পার্টির টেস্টটা করতে পারবো। ইটস নট আ বিগ অ্যামাউন্ট তাই না? ত্রিশ লক্ষ টাকা তো কোন টাকা না। আসলে টাকাটা আটকায় প্রসেসগত কারণে।

আপনার এই ব্যাগ সাধারণ পলিথিনের ব্যাগ থেকে দেড়গুণ বেশি চাপ নিতে পারে সেটা কিভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে?

ড. মোবারক আহমদ  খান: এই টেস্টটা পার্টিকুলার একটা মেশিন দিয়ে করা হয়। ইউনিভার্সাল টেস্টিং মেশিন বলে- ইউটিএম। এবং ইউটিএমটা হল যে এটাকে (সোনালী ব্যাগ হাতে নিয়ে দেখিয়ে) টান দিয়ে ছিঁড়তে যে শক্তিটা লাগে এটাকে বলে টেনসার স্ট্রেংথ। আর এটা যদি আমি এই কলমে দেই (বাঁকিয়ে দেখিয়ে) এটাকে বলে বেন্ডিং স্ট্রেংথ। আরেকটা হল হুট করে একটা জিনিস এটার উপর পড়লো, এটা ভেঙ্গে গেল কিনা এটা হল ইমপ্যাক্ট স্ট্রেস। এই তিনটা বেসিক টেস্ট কিন্তু ম্যাটেরিয়ালসের জন্য খুব জরুরী। এবং ইউটিএম মেশিনটা আমাদের অ্যাটমিক এনার্জি কমিশনে আছে, আমরা লতিফ বাওয়ানীতে কিনে ফেলেছি এবং বাংলাদেশে বেশ কটা ইউনিভার্টিতে আছে। এটা বেসিক একটা ইকুইপমেন্ট।

এই মেশিনে ওই স্ট্যান্ডার্ড মেথড বলা আছে যে — এই জিনিসটা যে আপনি এখন টান দিয়ে ছিঁড়বেন, আপনি দুইটা হাত এক জায়গা করে টান দেন, যে শক্তি লাগবে, এটা যদি আরো দূরের থেকে টান দেন —শক্তি একই লাগবে না, তাই না? সেজন্যে এটার একটা স্ট্যান্ডার্ড মেথড আছে। যে মেথডে দুইটা জ’ (মেশিনের দাঁত বা চোয়াল) দিয়ে ধরতে হয় এটাকে, মাঝখানে কতটুকু ফাঁকা থাকবে, এটার উইডথ কত হবে, এই সবগুলি ঠিক করে আপনার টেস্টটা করা হয়। ইট ইজ আ ভেরি ফান্ডামেন্টাল টেস্ট ফর দি ম্যাটেরিয়াল সাইন্স। এটা প্রতিদিনই আমরা স্যাম্পল একটা বানালে ওটা কি কোয়ালিটির হলো সেটা দেখার জন্য আমাদের  দেখতে হয় যে স্ট্রেংথ কত হল।

আরেকটা জিনিস আমরা টেস্ট করি তা হল ওয়াটার পারমাবিলিটি — ওয়াটার ভেপার পারমাবিলিটি — যে এর ভেতর দিয়ে ওয়াটারটা কিভাবে যাচ্ছে। মানে ময়েশ্চারে থাকলে সে কিভাবে নষ্ট হবে। এই টেস্টের মেশিনটা আমাদের লতিফ বাওয়ানীতে আছে। আমরা সরকারের টাকায় কিনেছি। ‍সুতরাং খালি পানিতে ভিজিয়ে রাখলেই হবে না, ময়েশ্চারের সাথেও সে কিভাবে রিঅ্যাক্ট করে সেটা কিন্তু আমাদের এই মেশিনগুলোতে টেস্ট করা হয়েছে। স্ট্রেস নিতে পারার ক্ষেত্রে (সাধারণ) পলিথিনের তুলনায় এটি অন এভারেজ দেড়গুণ বা ১.৬ গুণ বেশি স্ট্রেস নিতে পারে। তার মানে আপনি নরমাল পলিথিনের ব্যাগে যদি ১০ কেজি ওজন নিতে পারেন তাহলে এটাতে আপনি ১৬ কেজি ওজন নিতে পারবেন।

স্ট্রেস নিতে পারার ক্ষেত্রে (সাধারণ) পলিথিনের তুলনায় এটি অন এভারেজ দেড়গুণ বা ১.৬ গুণ বেশি স্ট্রেস নিতে পারে। তার মানে আপনি নরমাল পলিথিনের ব্যাগে যদি ১০ কেজি ওজন নিতে পারেন তাহলে এটাতে আপনি ১৬ কেজি ওজন নিতে পারবেন।

পানিতে যদি এটা মিশেই যায় তাহলে বাজার থেকে কোন তরল বা ভেজা জিনিস কেনা হলে সেটা কি এই ব্যাগ দিয়ে বহন করা যাবে? কিভাবে?

ড. মোবারক আহমদ  খান: আমরা শপিং ব্যাগে কিন্তু কেউ দুধ আনি না। যেহেতু এটা (সোনালী ব্যাগ) রিঅ্যাক্ট করে পানির সাথে, তেলের সাথে রিঅ্যাক্ট করে না। সুতরাং তেল আনতে কোন অসুবিধা নাই। আমরা অলরেডি তেল ভরে দেখেছি। পানিতে আনলে — এখন দুধ আনলে আমরা ৫-৬ ঘন্টা পর্যন্ত যদি আনতে পারি তাহলে তো আমার কোন অসুবিধা নাই। যদি এর পরে কেউ যদি চায় — ভিডিও আছে আমার কাছে, সেই ভিডিওতে আছে আমরা তিনদিন চারদিন পাঁচদিন পর্যন্ত এই ব্যাগের মধ্যে পানি ভরে রেখে দিয়েছি। তারপর ওই পাশে স্টপ ওয়াচ দিয়ে রেখেছি কতক্ষণ পর্যন্ত সে টিকে থাকছে। এই ভিডিওগুলো আমাদের কাছে আছে। আপনারা দেখতে চাইলে ভিডিও দেখতে পারবেন। এগুলো কোন স্ট্যান্ডার্ড মেথড না। যেটা আমাদের চোখে দেখছি, আমরা ক্যামেরা রেখেছি আর হল ওই টাইম রেখেছি যে কতক্ষণে সে এটা ডিগ্রেড করছে।

আবার ওই স্যাম্পলটা নিয়ে কিন্তু আবার আমরা ওই সায়েন্টিফিক টেস্টগুলো করেছি যে পানি কিভাবে যাচ্ছে, কেন এটার মধ্যে যাচ্ছে না, এটার পারমিবিলিটি- ভ্যাপারটা কিভাবে যায়, এগুলো সবগুলো কিন্তু আমরা ওইভাবে টেস্ট করি। এবং আরেকটা টেস্ট আছে আপনার – কনটাক্ট অ্যাঙ্গেল – কনটাক্ট অ্যাঙ্গেলটা হল আপনার ওয়াটার পারমিবিলিটির একটা বিশাল বড় টেস্ট। সেই কনটাক্ট অ্যাঙ্গেলটা হল এখানে একফোঁটা পানি দিলে সে এই দিক দিয়ে ছিদ্র হয়ে বের হয়ে গেল কিনা। এবং এই ফোঁটা পানিটা কিভাবে ডিসপারস করবে, সে একবারেই ছড়িয়ে গেল, নাকি ফোঁটা আকারেই থাকল, এই অ্যাঙ্গেলটা মাপতে হয়। এটা মেশিনে মাপে। কনটাক্ট অ্যাঙ্গেল টেস্ট। এগুলো সব করা হয়েছে।

প্রশ্নটা আবারও করি। শুরুতে একটা হাইপোথিটিকাল সিনারিও যদি ধরি যে সোনালী ব্যাগ সর্বত্র তৈরি ও ব্যবহৃত হওয়ার মতো প্রস্তুতি নেয়া হয়ে গেছে। এখন যদি বাজারের পলিথিনকে এই সোনালী ব্যাগ দিয়ে রিপ্লেস করতে হয়, বাজারে তো নানা রকম পলিথিন আছে, শুকনা দ্রব্য ছাড়াও, কোনটা তেলের জন্য, কোনটা দুধের জন্য, এই যে বিভিন্ন ধরনের পলিথিন, কিংবা মাছ মাংস বা ভেজা জিনিসের জন্যও যদি ব্যবহৃত হতে হয় তাহলে সোনালী ব্যাগ চ্যালেঞ্জটাকে কিভাবে মোকাবেলা করবে, যেহেতু এই ব্যাগ গলে যায় পানিতে সেই প্রেক্ষাপটে?

ড. মোবারক আহমদ  খান: ব্যাগ হিসেবে আমরা যেটা নিব — সিঙ্গেল ইউজ শপিং ব্যাগ যেমন আছে। কিন্তু পলিথিনের ব্যাপারে আবার নানা ধরনের পলিথিনের ব্যাগ আছে। এবং নানা ধরনের পলিমার আছে। হাই ডেনসিটি পলিমার আছে, শুধু পলিথিন আছে, আমরা বাজারে যেটা দেখি এটা (এগুলো সবই) কিন্তু একই জিনিস না। আমাদের মনে হয় যে সবই পলিথিন। কিন্তু এটা সব এক জিনিস দিয়ে তৈরি না। ওটারও ব্যবহার বিভিন্ন রকম আছে। পানির বোতলটা কিন্তু পলিথিনের তৈরি না। পানির বোতলটা পেট দিয়ে তৈরি। কিন্তু পানির বোতলের মুখাটা (ছিপি) কিন্তু অন্য জিনিস দিয়ে তৈরি। সুতরাং এরও কোয়ালিটি আছে। ডিপেন্ড করে আপনার ব্যবহারের উপরে।

এখন যদি কেউ প্যাকেজিং ম্যাটার (চায়) – যেমন দুধ বিক্রি করবে, যেমন মিল্কভিটা বিক্রি করছে, আড়ং বিক্রি করছে – উই ক্যান প্রিপেয়ার দ্যাট ওয়ান।

এখন যদি কেউ প্যাকেজিং ম্যাটার (চায়) – যেমন দুধ বিক্রি করবে, যেমন মিল্কভিটা বিক্রি করছে, আড়ং বিক্রি করছে – উই ক্যান প্রিপেয়ার দ্যাট ওয়ান। এখন এই জায়গাটায় টেস্ট আমরা করি নাই এখনো — আড়ং যে দুধ বিক্রি করে বা প্রাণ বা অন্যরা যারা দুধ বিক্রি করছে, সেগুলোতে উপরে মনে হচ্ছে কাগজ, এটার মধ্যে তিনটা চারটা লেয়ার থাকে। শেষের মাথায় থাকে এলুমিনিয়াম। যাতে কোনভাবেই এটা লিক না করে। কিন্তু এটাতে (সোনালী ব্যাগের ক্ষেত্রে) আমরা অতগুলো লেয়ার লাগার কোন প্রশ্নই আসে না শুধু যদি আমি ওয়াটার প্রিভেন্ট করে দেই। এখন কত দিন? এখন দুধটা ফ্যাক্টরি থেকে প্যাকেটজাত হয়ে কতদিনের মধ্যে মানুষের হাতে যেতে হবে? সেই কথাটুকু জানতে পারলে আমরা ওটা বানিয়ে দিতে পারবো। কিন্তু তারপরে, যেহেতু এটা ফুড আইটেম, সেই ফুড আইটেমের, এর কোয়ালিটি কন্ট্রোলটা লাগবে আবার — যে আসলেই এটা কোন পেনিট্রেট করছে কিনা, কোন অংশ ডিজলভড হয়ে দুধের মধ্যে যাচ্ছে কিনা — এই টেস্টগুলো আমরা এখনো করি নাই। এই টেস্টগুলো করার জন্য যদি কেউ আসে, কোন ইউজার আসে, তো আমাদের সাথে কথা বললে আমরা ওই টেস্টগুলো করে দিব। এখন আমরা শুধুই চিন্তা করছি নরমাল শপিং ব্যাগ নিয়ে — যেহেতু এটা নিয়ে সারা বিশ্ব খুব অরিড হয়আছে আরকি।


সোনালী ব্যাগ ব্যবহারে ঢাকার পলিথিন ব্যগ সৃষ্ট জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হবে বলে বলা হচ্ছে। কিন্তু এটার যদি পানিতে মিশতে ৬ মাস সময়ই লাগে তাহলে এটা ব্যবহারে ঢাকা শহরের বা অন্যান্য শহরের আশেপাশের খাল-নদী নালার জলাবদ্ধতার সমস্যা কিভাবে মিটবে? প্রতিদিনই তো লক্ষ লক্ষ ব্যাগ পরিবেশে চলে আসবে। আজকের ফেলে দেয়া ব্যাগ না হয় ৬ মাস পরে পানিতে গলে যাবে। কিন্তু এই ৬ মাসে তো প্রতিদিনই আরো লক্ষ লক্ষ ব্যাগ জমতে থাকবে সেগুলো তো গলবে আরো পরে। তাহলে এটা ব্যবহারে যে জলাবদ্ধতার সমস্যা কমানো যাবে বলা হচ্ছে সেটা কিভাবে?

ড. মোবারক আহমদ  খান: এর দুটি দিক আছে। যদি রিসাইকেলের কথা আমি মাথায় রাখি, যদি এটার ভ্যালুটা আমি এভাবে ধরি যে ফেরত দিলে আমি পয়সা পাব। আপনি কিন্তু বাজারের ডেইলি নিউজপেপারটা রেখে দিচ্ছেন। কারণ মাস শেষে আপনি এটার একটা রিসাইকেল ভ্যালু পাচ্ছেন। আপনি কিন্তু এটা ফেলছেন না। এই পলিথিনে বাজার যে এখন সয়লাব, সেটাও কিন্তু যদি গভর্নমেন্ট বলত যে আমরা ওগুলি বাসার থেকে কিনবো। তাহলে কিন্তু আমরা এটা ফেলতাম না। এটা আমরা রেখে দিতাম যে — না এটা ২০ টাকা কেজি আমি বিক্রি করতে পারবো। এটা কিন্তু আমি উপর লেভেলে বলেছি যে এটা হলেও কমবে। কিন্তু এখানে যেটা হবে — সোনালী ব্যাগের ক্ষেত্রে — ড্রেনেজের ব্যাপারটা যদি বলি, ড্রেনেজে যাবে কোনটা, আমার ম্যাক্সিমাম হল শপিং ব্যাগ, সবচেয়ে বেশি ইউজ যেটা। এই সোনালী ব্যাগগুলি যদি ড্রেনেজে যায়, যেটা আমরা বলছি যে ৬ ঘন্টার মধ্যে সে পানিতে গলেই যাবে। কিন্তু এটা শুরু করবে কিন্তু আপনার আগের থেকেই। তিন চার ঘন্টা পরে সে আস্তে আস্তে ডিগ্রেড শুরু করবে এবং একটা সময় সে মিশে যাবে। প্রথম দুই এক ঘন্টা পরেই কিন্তু সে খুব নরম হয়ে যাবে। সুতরাং এটা নিয়ে আমার মনে হয় না যে খুব একটা প্রবলেম হতে পারে ড্রেনেজের ক্ষেত্রে।

আপনি কিন্তু বাজারের ডেইলি নিউজপেপারটা রেখে দিচ্ছেন। কারণ মাস শেষে আপনি এটার একটা রিসাইকেল ভ্যালু পাচ্ছেন। আপনি কিন্তু এটা ফেলছেন না। এই পলিথিনে বাজার যে এখন সয়লাব, সেটাও কিন্তু যদি গভর্নমেন্ট বলত যে আমরা ওগুলি বাসার থেকে কিনবো। তাহলে কিন্তু আমরা এটা ফেলতাম না।

কারণ ড্রেনেজের ক্ষেত্রে — যে সোনালী ব্যাগগুলো আমরা তৈরি করবো যেটা ৬ মাস পানিতে নষ্ট হবে না, সেগুলো তো এই শপিং ব্যাগের জন্য তৈরি করবো না। সেগুলো তো স্পেশাল ইউজেস। এগ্রিকালচার ফিল্ডে লাগছে, গ্রীন হাউজে লাগবে। সেসব জায়গায় কিন্তু আমরা ওগুলি দেব। কিন্তু এমনি নরমাল প্যাকেজিং এবং নরমাল সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যাগ যেগুলো, যেটা নিয়ে আমাদের সবচেয়ে বেশি মাথাব্যথা — আপনি বাজারে আধাকেজি কাঁচামরিচ কিনলেও আপনাকে একটা ব্যাগ দিয়ে দিচ্ছে। ইউ থিংক যে দিস ইজ ফ্রি। বাট দিস ইজ নট ফ্রি। ওই লোকটা যদি সকালবেলা ২০টাকা দিয়ে ব্যাগ কিনে থাকে, হি অ্যাড দিস মানি উইথ হিজ কাঁচামরিচ। এটা এড করেই তারপর সে বিক্রি করে। আমরা মনে করি যে আমাকে ফ্রি দিচ্ছে।

যে সোনালী ব্যাগগুলো আমরা তৈরি করবো যেটা ৬ মাস পানিতে নষ্ট হবে না, সেগুলো তো এই শপিং ব্যাগের জন্য তৈরি করবো না। সেগুলো তো স্পেশাল ইউজেস। এগ্রিকালচার ফিল্ডে লাগছে, গ্রীন হাউজে লাগবে।

বিদেশে কিন্তু এটা ফ্রি দেয় না। ওটার জন্য আলাদা চার্জ করে — তুমি কি এমনি নিবে নাকি ব্যাগে নিবে? ব্যাগে নিলে তোমাকে দুই সেন্ট দিতে হবে। কেউ আপনাকে এমনি ফ্রি দিবে না ব্যাগ। কিন্তু আমাদের অভ্যাসটা হয়ে গেছে দেশে যে সবকিছু ফ্রি চায়। স্বপ্নে কেউ বাজার করে, বাজার করার পর আপনি নিয়ে আসেন দেখবেন যে আপনাকে দুইটা তিনটা ব্যাগ দিয়ে দিল — বাজার যত বেশি করছেন। কিন্তু ওই ব্যাগটার দামটা ১০ থেকে ১১ টাকা পড়ে। রহিম আফরোজের যিনি নিয়াজ সাহেব তিনি আমার সাথে কথা বলেছেন। উনি কিন্তু বলেছেন এটা আমি ফ্রি দিচ্ছি না। আমি ওই ব্যাগে যত টাকার জিনিস ধরে তার মধ্যে ব্যাগের টাকাটা ধরে নিচ্ছি। কারণ পার ডে তার ৯৬ হাজার টাকার ব্যাগ লাগে ঢাকা শহরে। এখন ৯৬ হাজার টাকার ব্যাগ তার প্রোডাক্টের উপর সে ধরে নিয়েছে। কেউ ফ্রি দিচ্ছে না। যদি এমনি বলা হত, যে আপনি কি ব্যাগ কিনে নিবেন নাকি নিবেন না, কিনে নিলে এই ব্যাগটার দাম ১০ টাকা। তখন আপনি কিন্তু সচেতন হতেন যে বাসার থেকে আমি একটা কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে যাই বা আমার ব্যাগ নিয়ে যাই। এটা ফ্রি দিবে না। তাই না?

প্রশ্ন: তার মানে আপনি এটাই বলতে চাচ্ছেন যে সোনালী ব্যাগ হোক বা যেটাই হোক রিসাইকেলের ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ? সোনালী ব্যাগ হলেও যদি এটা যত্রতত্র ফেলা শুরু করে তাহলে এটা কোন কাজের কথা হবে না?

ড. মোবারক আহমদ  খান: ফেলে দিলে এটা গলে যাবে। এটা পরিবেশের জন্য হার্মফুল হবে না। কিন্তু এই ম্যাটারটা যেহেতু এক্সপেনসিভ ম্যাটেরিয়াল, এটা আমি ফেলে দিব কেন? এটাকে রিসাইকেল করা — পলিথিনের মতো রিসাইকেলের ব্যাপার না। পলিথিনে এটাকে ইনজেনারেশন করতে হবে, এটাকে পোড়াতে হবে, গলিয়ে এটাকে আপনার সেকেন্ডারি স্টেজে নিয়ে আসতে হবে। কিন্তু এটাকে (সোনালী ব্যাগ) শুধু আপনি পানির মধ্যে দিয়ে দিবেন — আমি যখন রিসাইকেল করি, যখন সব পুরনো ব্যাগগুলো আমার ফ্যাক্টরিতে যাবে, তখন আমি এটাকে পানির মধ্যে দিব, গলে যাবে, শুধু আমি ফিল্ম বানিয়ে ফেলব। আমার তখন আগের স্টেজগুলো লাগছেই না। আমার তখন ব্যাগের দামও অনেক কমে আসবে। আমরা সবসময়ই চাইবো আমাদের ব্যাগগুলো রিসাইকেল হোক। এটাই আইডিয়াল সিনারিও। আর এটা তো ফ্রি দেয়া হবে না। আপনাকে কিনে নিতে হবে । তারপর আমরা হয়তো এমন করতে পারি যে তিনটা পুরনো ব্যাগ দিলে মুদি দোকান থেকে একটা নতুন ব্যাগ পাবেন।

আমরা সবসময়ই চাইবো আমাদের ব্যাগগুলো রিসাইকেল হোক। এটাই আইডিয়াল সিনারিও। আর এটা তো ফ্রি দেয়া হবে না। আপনাকে কিনে নিতে হবে । তারপর আমরা হয়তো এমন করতে পারি যে তিনটা পুরনো ব্যাগ দিলে মুদি দোকান থেকে একটা নতুন ব্যাগ পাবেন।

সোনালী ব্যাগের উৎপাদন প্রক্রিয়াতে কি কি বর্জ্য তৈরি হয়? সেগুলো পরিবেশের জন্য কতটা ক্ষতিকর? সেই ক্ষতি ঠেকানোর জন্য কিভাবে সেই বর্জ্যকে সংশোধিত করা হয়?

ড. মোবারক আহমদ  খান: আমি প্রথমে যেটা বলেছিলাম, আমার ব্যাগটা যেমন পরিবেশবান্ধব, এটার প্রসেসটাও পরিবেশ বান্ধব। প্রসেসটাতেও এখানে কোন ওয়েস্ট জেনারেট করবে না।


আপনি বলছেন এই ব্যাগ শতভাগ প্রাকৃতিক। তাই এটা মিশে যাবে এবং মিশে গেলে পরিবেশের কোন ক্ষতি হবে না। কিন্তু আপনি যখন জুট সেলুলোজ বের করছেন এবং সেটাকে ব্লিচ করছেন, এরপর এটাকে যে প্রক্রিয়ায় ওয়াটার সলুবল করছেন, এর সাথে বাইন্ডার হিসেবে যে ধরনের সিনথেটিক পলিমার মেশাচ্ছেন, এরপর রাসায়নিক বিক্রিয়ার জন্য যেসব এডিটিভ এবং ক্রস লিংকার মেশাচ্ছেন সেগুলো কি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নাকি ক্ষতিকর নয়? এগুলো কি ব্যাগের মধ্যে রয়ে যাবে? যদি রয়ে যায় তাহলে এগুলো যখন পরিবেশে মিশবে তখন কি পরিবেশের কোন ক্ষতি হবে না?

ড. মোবারক আহমদ  খান: না এটা এডিশনাল রিঅ্যাকশন। সবগুলিই এটার মধ্যে থেকে যাচ্ছে। আমার বাইরে কোথাও কিছু যাচ্ছে না। শুধু আমার যেটা — সেলুলোজ তৈরি করার সময় প্রচুর পরিমাণ পানি লাগে। এখানে পানির — যে সলুশনটা তৈরি করি ৯০ পারসেন্ট সেখানে পানি থাকে, ১০ পারসেন্ট সেখানে ম্যাটার থাকে। তো, প্রচুর পরিমাণ পানির ব্যবহার আছে। তো, আমি যদি এক টন উৎপাদন করি, তাহলে আমার ৯০ টন পানি দরকার। এই পানির জোগান থাকতে হবে আমার এটা তৈরি করার জন্য। তাহলে এতগুলো পানি যদি আমার ফেলে দেই — ফেলে দেব না। কারণ এখানে যে ক্যামিকেলসগুলো ইউজ করা হয়, অ্যাসিডিক কিছু আছে, অ্যালকালাইন কিছু আছে, এগুলো আমরা অন লাইন ওখানে একটা দুইটাকে রিঅ্যাকশন করে আমরা আবার ফ্রেশ পানি তৈরি করে ফেলবো। এসিড আর বেস রিঅ্যাকশন করলে তো আপনার লবণ আর পানি তৈরি হবে, সুতরাং আপনার এটা কোনভাবেই পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক না। বরঞ্চ এখানে থেকে, জুটের থেকে যে খারাপ — ব্ল্যাক লিকার যেটাকে বলি আমরা — এটার থেকে যে লিকারটা বের হবে, সেই লিকারটাকে কিন্তু আমরা — কনভার্টেড টু লিগনিন। ৫ কেজি পাটের থেকে আমরা ১ কেজি লিগনিন পেতে পারি অন এভারেজ। তো লিগনিনটার দামই — বাংলাদেশে এখন ১ কেজি লিগনিনের দাম, একদম ক্রুড লিগনিনের দামই বাংলাদেশী টাকায় ২০০০ টাকা। সুতরাং ৫ কেজি পাটের থেকে যদি আমি ২০০০ টাকার লিগনিন পাই তাহলে পাটের দাম কোথায় চলে গেল? সুতরাং তখন আমার এই ব্যাগের কস্টটা কমে আসবে।

আমি যদি এক টন উৎপাদন করি, তাহলে আমার ৯০ টন পানি দরকার। এই পানির জোগান থাকতে হবে আমার এটা তৈরি করার জন্য। তাহলে এতগুলো পানি যদি আমার ফেলে দেই — ফেলে দেব না। কারণ এখানে যে ক্যামিকেলসগুলো ইউজ করা হয়, অ্যাসিডিক কিছু আছে, অ্যালকালাইন কিছু আছে, এগুলো আমরা অন লাইন ওখানে একটা দুইটাকে রিঅ্যাকশন করে আমরা আবার ফ্রেশ পানি তৈরি করে ফেলবো। এসিড আর বেস রিঅ্যাকশন করলে তো আপনার লবণ আর পানি তৈরি হবে, সুতরাং আপনার এটা কোনভাবেই পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক না।

আমরা এখানে কোন পানি বাইরে যেতে দিব না। এনভায়রমেন্টের কোন ক্ষতি হতে দিব না। এবং আমরা সিস্টেমে এখনও যা করছি আমরা ছাড়ছি না। আমরা কিন্তু সব — ক্লোজ রুফ সিস্টেম বলি এটাকে। ইভেন আমরা এখন এটাও চিন্তা করছি — যে পানিটা ভ্যাপার হয়ে যাবে, ওটাকেও আমরা, মানে ডিজাইনটাকে এভাবে করতে হবে, আমার বুয়েটের একটা গ্রুপ কাজ করছে এটার উপরে, একটা স্টুডেন্ট গ্রুপ, ওরা ওটা নিয়ে কাজ করছে যে হাউ টু কনভার্ট ইট, মানে একটা কনডেন্সার বসিয়ে দিলেই তো সে আবার পানি হয়ে যাবে। তো সেই সিস্টেমটা করলে, মানে পানি তুলতে কি বেশি পয়সা খরচ হয় নাকি এভাবে পানি আনলে খরচ কম হয় — এবং ওই পানিটা কিন্তু আপনার ডিস্টিল ওয়াটার। যেটা হবে ওটা কিন্তু ডিস্টিল ওয়াটার। সেই ডিস্টিল ওয়াটারটা কিন্তু তখন ডিস্টিল ওয়াটার হিসেবেও বিক্রি করা যাবে। সুতরাং এটা যে শুধু খালি রিসাইকেলে চলে আসবে তা না। ইটস আ ভেরি ইমপর্টেন্ট ওয়াটার, যেটা অনেক এক্সপেনসিভ ওয়াটার। তাই না? বৃষ্টির পানিটা যেমন ডিস্টিল ওয়াটার। ওরকম আরকি।

৫ কেজি পাটের থেকে আমরা ১ কেজি লিগনিন পেতে পারি অন এভারেজ। তো লিগনিনটার দামই — বাংলাদেশে এখন ১ কেজি লিগনিনের দাম, একদম ক্রুড লিগনিনের দামই বাংলাদেশী টাকায় ২০০০ টাকা।

আচ্ছা এই যে আপনি বললেন যে ক্রসলিংকার, এডিটিভ এগুলো কোনটাই যাচ্ছে না পরিবেশে এগুলো সব ব্যাগের মধ্যে রয়ে যাচ্ছে…

ড. মোবারক আহমদ  খান: ওটাকেও নিউট্রাল করতে হচ্ছে আমাদের। আরেকটা প্রসেসে নিউট্রাল করতে হচ্ছে। আরেকটা প্রসেস আছে ওই ব্যাগটা প্রথমে যখন শিট আকারে বের হয়ে আসে, তখন এর মধ্যে যে অ্যাডিটিভস বা যা থাকে, একটু, মানে, স্মেল থাকে আরকি। কিন্তু এই ব্যাগটার মধ্যে (নিজের হাতের ব্যাগটা দেখিয়ে) কোন স্মেল নাই। কারণ এটাকে আবার একটা বিশেষ চেম্বারে ঢুকিয়ে নিউট্রাল করা হবে। একটা চেম্বার আমরা তৈরি করছি। চেম্বারের ভেতর দিয়ে সে যাবে, আদার ক্যামিকেলসগুলি নিউট্রালাইজ হবে, কোন খারাপ দিক তৈরি হবে না। নিউট্রালাইজ হবে যে এটার সাথে রিঅ্যাকশন করে সে ওটাকে অপটিমাইজ করে দিবে।


এখন নিউট্রালাইজ করার পরেও অ্যাডিটিভস, ক্রসলিংকার তো ব্যাগের মধ্যেই রয়ে যাবে, ওটা যখন মাটিতে বা পানিতে মিশে যাবে তখন ওই জিনিসগুলো কি মাটি এবং পানির কোন ক্ষতি করবে কিনা? আপনারা যখন আপনাদের পরীক্ষায় এটাকে মাটিতে এবং পানিতে মিশে যেতে দিয়েছেন তখন মিশে যাওয়ার পর ওই মাটি এবং পানির গুণগত মান কি পরীক্ষা করে দেখেছেন? সেই গুণগত মান কি অপরিবর্তিত ছিল? নাকি ইতিবাচক বা নেতিবাচক পরিবর্তন হয়েছিল? একটু বিস্তারিত উদাহরণ দিয়ে বলবেন কি? যেমন পানির ক্ষেত্রে সোনালী ব্যাগ মিশে যাওয়ার পর বিভিন্ন উপাদানের মাত্রা কি গ্রহণযোগ্য মাত্রায় ছিল?

ড. মোবারক আহমদ  খান: রাইট। এটা আমরা থার্ড পার্টির সাথে, ইংল্যান্ডের একটা থার্ড পার্টির সাথে এই টেস্টগুলো করে ফেলেছি। এটা খুব জরুরী। জরুরী যে, যে ব্যাগটা পানিতে ডিজলভড হল, সেই পানির অবস্থাটা কি হল? এবং সেখান থেকে আমরা টেস্ট করে দেখেছি — এবং এর ইলিমেন্টাল অ্যানালাইসিস এবং মাইক্রোবাওয়েল গুণাগুণ, সব আমাদের পারমিসিবল ডোজের ভেতরে। কোন খারাপ দিক (পাই নি) — এই ডাটা, আমার থার্ড পার্টির ডাটা আছে। এবং এখানে যেটা তৈরি হয়; এর মধ্যে কোন লেড বা আর্সেনিক (জাতীয়) কোন কিছু আছে কিনা যেটা আপনার খাবারের মাধ্যমে আবার মাইগ্রেট করতে পারে কিনা — এই টেস্টগুলোও আমরা করেছি। এখানে এমন কোন পরিমাণ নাই যে পরিমাণটা এর মাধ্যমে খাবারের মধ্যে যেতে পারে। কারণ হল আসবে তো আমার পাটের থেকে, আসবে তো আমার পানির থেকে — খারাপ ইলিমেন্টগুলো, মানে হেভি ইলিমেন্টগুলো। এখন আমরা যে পানিটা নিচ্ছি এই পানিটা তো আগে আমরা টেস্ট করে নিব এর মধ্যে হেভি ইলিমেন্ট আছে কিনা।

আমরা এখন লতিফ বাওয়ানীতে যে পানি নিচ্ছি এটা একটা ট্রিটেড ওয়াটার যেখানে কোন হেভি ইলিমেন্ট নাই। এবং বাইরে যারা করবে, ইন্ডাস্ট্রি আকারে যারা করবে, তখন শুধু একটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে যে আয়রন ফ্রি হতে হবে। মানে একটা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থাকবে যেটাতে আয়রনটাকে ঠিক করতে হবে। আর পাট কোন জায়গা থেকে তৈরি হচ্ছে আমরা কিন্তু সেটা জানি না। এই পাটের সেলুলোজটার ভেতরে — যদি ময়মনসিংহের হয়, তবে সেই পাটের ভিতরে কি হেভি ইলিমেন্ট থাকবে, কিংবা বরিশাল হলে, মানে যে জায়গা থেকে আসবে সেই জায়গার জিনিসগুলো কিন্তু (চলে আসতে পারে)। আমাদের ওই মাটির একটা আগে টেস্ট করে দেখতে হবে যে এর মধ্যে কোন হেভি ইলিমেন্ট আছে কিনা। থাকলে সেই জায়গাটার কিভাবে ট্রিটমেন্ট করার দরকার সেটা করতে হবে। কিন্তু আমরা এখন যে জায়গার পাট নিয়ে করছি এ পাটের মধ্যে আমার কোন হেভি এলিমেন্ট — হেভি এলিমেন্ট নাই তা না — কিন্তু পারমিসিবল ডোজের ভেতরে (আছে), যেটা মানুষের শরীরের জন্য কোন ক্ষতি করবে না। এটাও প্রায় ৭০-৮০টা এলিমেন্টাল টেস্ট করা হয়েছে। এটা ইংল্যান্ডের এক ল্যাবরেটরিতে করিয়েছি আমরা। এই মুহূর্তে নামটা মনে পড়ছে না। তবে করানো হয়েছে থার্ড পার্টি দিয়ে এবং ওটার রিপোর্ট আমার কাছে আছে।

এক্ষেত্রে আরেকটু বিস্তারিত জানতে চাই। আমরা জানি পাট পচানো হয় যে পানিতে সেটাতে ব্যাপক মাত্রায় দূষণ তৈরি হয়। যেমন লালমনিরহাটে গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে পাট পচানো পানিতে পিএইচ এর মাত্রা খুবই কম থাকে, পানির হার্ডনেস খুবই বেড়ে যায়, ফসফেটের মাত্রা গ্রহণযোগ্য মাত্রা থেকে প্রায় ১০০০ গুণ বেড়ে যায়, দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রাও খুবই কম থাকে যার সম্মিলিত ফলাফল হিসেবে সেখানে জলজ প্রাণ বাঁচতে পারে না। তাহলে পাটের তৈরী কোটি কোটি সোনালী ব্যাগ যখন পানিতে গিয়ে পড়বে এবং তাতে পচে গিয়ে মিশে যাবে তখন সেটি কি জলজ পরিবেশ ও প্রাণের জন্য নতুন ধরনের হুমকি তৈরি করবে না? এক্ষেত্রে এটা ঠেকানোর উপায় কি?

ড. মোবারক আহমদ  খান: পাট কাটার পরে, হারভেস্টিংয়ের পরে ফ্রেশ ওয়াটার — নদীর মধ্যে যদি পাটটা জাগ দিয়ে রাখেন, পাট সহজে পচবে না। পচবে না ঠিক না, হয়তো তিন মাস লাগবে পচতে। কিন্তু পচায় কে? আপনি ধরেন এই মাছটা ফেলে দিলাম, গন্ধ হল এগুলো কে করে? এটা এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া করে। আল্লাহ আমাদের এই জিনিসগুলো দিয়ে রেখেছেন। তা না হলে যদি ব্যাকটেরিয়া না থাকতো তাহলে পৃথিবীতে কিছু পচতো না। আপনি আমি মরে পড়ে থাকতাম, পচতাম না। এই পচার জন্যে পাটের যে ব্যাকটেরিয়াটা — এটার জন্যে একটা বদ্ধ পানি লাগে যেখানে জাগ দেয় এবং সেখানে ব্যাকটেরিয়া গ্রো করলেই সেই ব্যাকটেরিয়াটা তাড়াতাড়ি পাটটাকে পচিয়ে দিচ্ছে। এখন যেই পাটটা আমরা ফ্রেশ ওয়াটারে ধুয়ে নিয়ে আসলাম — সে ব্যাকটেরিয়া কিন্তু থাকছে না। আপনি একটা জিনিস মনে রাখেন আল্লাহর একটা বিশেষ দান — আমি এখানে বলবো — যে ব্যাকটেরিয়াগুলো ১০০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের ভেতরে মরে যায় সেই ব্যাকটেরিয়াগুলোই হল আমাদের জন্য ক্ষতিকারক। ১০০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের উপরে যে ব্যাকটেরিয়া বেঁচে থাকে সেই ব্যাকটেরিয়া আমাদের জন্য ক্ষতিকারক না। সেজন্য আমরা পানি ফুটিয়ে খেলেই কিন্তু আমরা ব্যাকটেরিয়া ফ্রি হয়ে গেলাম। তো সেই জন্য এই পাটটাকে আমরা যে প্রসেসে এই জায়গায় নিয়ে আসছি — এবং আমি কিন্তু পাট ইউজ করছি না, পাটের সেলুলোজ ইউজ করছি। যেভাবে সেলুলোজ এক্সট্রাকশন করছি, সেখানে কিন্তু কোনরকম ব্যাকটেরিয়া বা ওই ধরনের জীবাণু থাকার কোন প্রশ্নই আসে না। আমার কথা ক্লিয়ার কিনা আপনার কাছে?

তারমানে যেহেতু আপনি সরাসরি পাট নিচ্ছেন না, সেলুলোজ নিচ্ছেন, তাই সেলুলোজ পচলে পাট পচার মতো বিষাক্ত পরিস্থিতি পানিতে তৈরি হয় না এটাই তো বলতে চাচ্ছেন? কিন্তু সেলুলোজ পানিতে পচলে কেন পাট পচার মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে না সেটি কি একটু বিস্তারিত ব্যাখ্যা করবেন?

ড. মোবারক আহমদ  খান: না। সেলুলোজ পচলে পাট পচার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে না। এটা কেন হয় না? কারণ ওখানে পাটের ওপর যে ক্লোরোফিল থাকে — পাটটাতো সবুজ, ওখানে ক্লোরোফিল থাকে, দেয়ার ইজ আ কেমিস্ট্রি — ক্লোরোফিলটাই হলো প্রথমে পচাচ্ছে। আঁশটা তো পঁচে নাই। কেমন একটা কায়দা দেখেন — আপনি পচিয়েছেন কোন পর্যন্ত? শুধু উপরের কভারটা। যদি পাটটা শুদ্ধ পচিয়ে ফেলতেন তাহলে বলতাম যে পাট পচে গেছে। পাট কিন্তু পচে নাই। ফাইবারটা অ্যাজ ইট ইজ আছে। উপরের যে আবরণটা — সবুজ আবরণটা সেটাই কিন্তু পচে পানিটা নষ্ট করে। আসলে পানিও নষ্ট করে না। ইটস এন ইম্পর্টেন্ট ওয়াটার। ওই পানি না থাকলে তো আপনি পাট আবার পচাতে পারবেন না। কারণ আপনাকে একটা বদ্ধ — জলাবদ্ধ জায়গায় পাটটাকে পচাতে হবে। আমরা মাটির নিচে একটা লাশ কেন পুঁতে রাখছি? কারণ ওখানে মাইক্রোবাওয়েল জন্মাবে। জন্মে আমাদের লাশটাকে পচিয়ে ফেলবে, মানে খেয়ে ফেলবে। এখন যদি আপনি দেখেন কোন গরু মরে পড়ে আছে সে কিন্তু অত তাড়াতাড়ি পচছে না। অনেক রকম মাছি পোকা কোথা থেকে জন্মায়? আপনি একটা ভাল জিনিস ঘরের মধ্যে রেখে দিয়েছেন তারপর দেখছেন এর মধ্যে আস্তে আস্তে পোকা জন্মাচ্ছে, মাইট জন্মাচ্ছে। ন্যাচারালি এগুলো তৈরি হয়। এটার মধ্যে (সেলুলোজ) কিন্তু কোন মাইক্রোবাওয়েল নাই। এটার মধ্যে ওই যে পাট পচানোর যে কাহিনী সেটার কিছু নাই। ইটস আ টোটালি ডিফারেন্ট থিং। এবং আমরা যখন পাট থেকে সেলুলোজটা বের করে নিয়ে আসলাম, তখন তো পাটই থাকলো না। থাকলো শুধু সেলুলোজ আর আদার ইনগ্রেডিয়েন্টগুলো।

তাহলে আরেকটা হাইপোথিটিক্যাল প্রশ্ন করি। যদি ধরে নেই যে সোনালী ব্যাগ ফুল স্কেলে প্রডাকশনে আছে। এখন তার জন্য কাঁচামাল হিসেবে যে পাট সেটাকে তো পচাতে হবে। এখন যত্রতত্র যদি পাট পচানো শুরু হয় তাহলে সেটা তো পরিবেশের জন্য আরেক সমস্যা তৈরি করবে।

ড. মোবারক আহমদ  খান: এক্ষেত্রে একটা নীতিমালা থাকতে হবে। ওটা হল জুট রিসার্চের কাজ। কারণ হল পাটটা আগের দিনে মানুষ যেভাবে পচাতো, বিশাল বিশাল জলাধার ছিল, সেখানে পচাতো। কেউ এটা নিয়ে কোন চিন্তা করতো না। তো এখন যেহেতু আমরা পরিবেশ নিয়ে একটু সচেতন, সেজন্য এই পাটটাকে যেভাবে রেটিং করা হচ্ছে, মানে এটাকে পচানো হচ্ছে ইটস নট সায়েন্টিফিক — আমি বলব। সো উই হ্যাভ টু ফাইন্ড আ নিউ ওয়ে টু ডু ইট সায়েন্টিফিক্যালি। এখন যেটা আছে পাটখড়িটাকে বের করে দিয়ে চুবিয়ে রাখছে, ক্লোরোফিলটাকে সরিয়ে দেয়ার জন্যে — তো এই যে এখন চারের মধ্যে পচাচ্ছে — ওই সিস্টেমটাও ঠিক না। যদি আমি একটা ক্লোজডোর বিল্ডিংয়ে বা আমি একটা জায়গার মধ্যে শুধু পাট জাগ দেয়ার জন্য (ঠিক করা যায়) — কৃষকরা কিন্তু সময় মতো পানিও পায় না। এইবার হয়তো ছিল, কিন্তু অন্যান্য বছর কিন্তু পানিও পায় না জাগ দেয়ার মতো। এটা যে এলাকায় পাট হবে সেই এলাকায় একটা স্ট্রাকচার করে জায়গা করে দিতে হবে যে এখানে পাট পচানো হবে। এবং সেই পানিগুলো ট্রিটমেন্ট করে ফেলতে হবে। পানি ট্রিটমেন্ট করা কোন ব্যাপার না। ব্যাকটেরিয়াগুলোকে মেরে ফেললেই হবে।

আচ্ছা এতটুকু বোঝা গেল যে ব্যাগ পানিতে ডিজলভ হওয়ার পর পানির কি অবস্থা হয় সেই টেস্টটা আপনারা করেছেন। কিন্তু ডিজলভ হওয়ার পরে মাটির কি অবস্থা হয় সেই বিষয়ক টেস্ট কি আপনারা করে দেখেছেন?

ড. মোবারক আহমদ খান: এই ব্যাগ ডিগ্রেড করার পরে সয়েলের কি অবস্থা হয় সেই টেস্টটা আমরা এখনো করি নাই। একটা ইউনিভার্সিটিকে দিয়েছি — হাজী দানেশ ইউনিভার্সিটিতে এবং ওখানে সয়েলে কোন ব্যাকটেরিয়াটা এটা খাচ্ছে দে ফাইন্ড আউট দ্যাট। এবং এটার মধ্যে সে কোন খারাপ কিছু বা টক্সিক কিছু ছাড়ছে কিনা — মাটির মধ্যে (সেটাও পরীক্ষা করে দেখছে)। কিন্তু আমরা (এমনিতে) গাছ বুনে দেখেছি যে গাছ হচ্ছে। তবে সয়েলের রিপোর্ট আমরা এখনো পাইনি। এক বছর হল সেটা তাদের দিয়েছি (হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে)। কোন ব্যাকটেরিয়া খায় সেটা আমরা আইডেন্টিফাই করতে পেরেছি। কিন্তু ওই ব্যাকটেরিয়া যা রিলিজ করবে বা অন্য কিছু রিলিজ যদি করে থাকে — আরো কিছু খারাপ কিছু সয়েলে গেল কিনা — এগুলো টেস্ট করার জন্য (ওদেরকে দিয়েছি)।

আসলে এই টেস্ট করতে সময় লাগে, ম্যানপাওয়ার লাগে, টাকা লাগে। আমাদের কিন্তু সায়েন্সের জন্য কেউ টাকা খরচ করছে না, দুঃখের সাথেই বলতে হচ্ছে। সোনালী ব্যাগ নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। কমার্শিয়াল হবে, অমুক হবে — কিন্তু এর যে বেসিক অনেক টেস্ট বাকি রয়ে গেছে এখনো —সেই টেস্টগুলো করার জন্য — আমার ছাত্রছাত্রীরা আছে নানা জায়গায়, আমি বিভিন্ন ল্যাবে তাদেরকে দিয়ে এটা করাচ্ছি বা একজনকে থিসিস দিচ্ছি যে এই সোনালী ব্যাগ মাটির নিচে পচলে এর কি হয় এটা তুমি থিসিস করো। সে কিন্তু মনপ্রাণ দিয়ে তার থিসিস করার জন্য এটা করছে। কিন্তু এর পেছনে যে কেমিক্যালস লাগে, এর পেছনে যে আরো কিছু শ্রম লাগে, সেজন্য ওই ইউনিভার্সিটির প্রফেসরদের বলি যে তোমরা এটায় সাহায্য করো। তোমার ছেলের ডিগ্রী হবে, তারপর আমাদের একটা পেপার হবে — আমাদের বিজ্ঞানীদের ক্রেডিট তো ওখানেই যে আমাদের একটা সায়েন্টিফিক পেপার হয়ে গেল। এটাই ক্রেডিট। তো এভাবে কাজ চলছে। বাট, আমার লতিফ বাওয়ানী জুট মিলে এবার আমরা কিছু টাকা পেয়েছি বিজিএমসি থেকে। এবং কিছু টাকা আমরা জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট থেকে পাচ্ছি। এই টাকা পেলে আমরা কিন্তু কিছু ইকুইপমেন্টস কিনে ফেলছি। কিছু ইকুইপমেন্টস পেলে তখন এখানেই ল্যাবরেটরিতে আমার ছাত্রকে আবার আগের মতো থিসিস করাবো এটা আমার আশা আরকি। তখন আমার এই ডাটাগুলো বেরিয়ে আসবে।

আসলে এই টেস্ট করতে সময় লাগে, ম্যানপাওয়ার লাগে, টাকা লাগে। আমাদের কিন্তু সায়েন্সের জন্য কেউ টাকা খরচ করছে না, দুঃখের সাথেই বলতে হচ্ছে। সোনালী ব্যাগ নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। কমার্শিয়াল হবে, অমুক হবে — কিন্তু এর যে বেসিক অনেক টেস্ট বাকি রয়ে গেছে এখনো —সেই টেস্টগুলো করার জন্য — আমার ছাত্রছাত্রীরা আছে নানা জায়গায়, আমি বিভিন্ন ল্যাবে তাদেরকে দিয়ে এটা করাচ্ছি বা একজনকে থিসিস দিচ্ছি যে এই সোনালী ব্যাগ মাটির নিচে পচলে এর কি হয় এটা তুমি থিসিস করো।

তারমানে এখনো পর্যন্ত এটার বৈজ্ঞানিক গবেষণায় যে পরিমাণ অর্থের বরাদ্দটা দেয়া দরকার সেটা দেয়া হয়নি? এটাই বলতে চাচ্ছেন?

ড. মোবারক আহমদ  খান: নাহ। এটা ঠিক ওভাবে বলবো না। মানে কিছু অর্থ পেলে তাড়াতাড়ি করা যাবে আরকি। মেশিনপত্রের অভাব ছিল। জনবলের অভাব ছিল। আমার একজন সায়েন্টিস্ট চলে গেছে। আমি এখনো নিয়োগ দিতে পারি নাই — এই আরকি।

এখনো সোনালী ব্যাগ বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে পারছে না কেন? ৪০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ কেন পাওয়া যাচ্ছে না?

ড. মোবারক আহমদ  খান: ৪০০ কোটি টাকাও একটা ভেইগ টার্ম — আমি বলি মাঝে মাঝে। কারণ, যখন এখানে আমরা পাইলট স্কেলে তৈরি করার জন্য — ২০০০ ব্যাগ প্রতিদিন — যখন একটা আমরা করলাম, তখন কিন্তু আমি সরকারকে বলেছিলাম, এই কেবিনেটের আগের কেবিনেট আরকি, যখন মির্জা আজম সাহেব মন্ত্রী ছিলেন। তো, উনি তখন বলেছিলেন যে, এটাকে তাহলে একটা দৈনিক এক টন বা দেড় টন এরকম — ওহ না তিন টন, তিন টনের একটা প্রোডাকশন লাইন তৈরি করার জন্য একটা চিন্তাভাবনা (হয়েছিল)। সেসময় আমরা ১৭০ কোটি টাকার একটা বাজেট দিয়েছিলাম। এবং সেই হিসেবে আমি কোথা থেকে কোন যন্ত্রাপাতি কিনব — মালয়েশিয়ায় গিয়েছি, ইন্ডিয়াতে গিয়েছি এবং বাকি মেশিনগুলো আমরা লোকালি (তৈরি) করবো এরকম আমরা চিন্তাভাবনা করে আমরা একটা হিসাব দিয়েছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে মনে হল যে এটা তিন টন হবে না। এর পরে এটা ১০ টনের জন্য আবার একটা প্রজেক্ট তৈরি করলাম — ১০ টনের প্রজেক্ট করা যায় কিনা। তো, এইগুলি সরকার একটার পর একটা উন্নত (করতে) চেয়েছে আমরাও তৈরি করেছি, সেভারেল প্রজেক্ট লেখা হয়েছে, কিন্তু আলটিমেটলি আমরা কোন জিনিস করতে পারি নাই।

ইন্ডিয়ার একটা মেশিনের এক্স ফ্যাক্টর ভ্যালু ছিল ৩ কোটি টাকা, তারপর এখানে এসে আমরা মনে করলাম যে সে যদি এখানে এসে ইনস্টলেশন করে দিল — তো, তারা ৫ কোটি টাকার মতো চাইল। সেই মেশিন যখন আবার টেন্ডারে — গভর্নমেন্ট তো এমনি কিনতে পারবে না; টেন্ডারে গেলাম ­— টেন্ডার আসলো ১৩ কোটি টাকা। আমি চাইলাম ৭ কোটি টাকা, টেন্ডার আসলো ১৩ কোটি টাকা। তো এটাতো আমি কিনতে পারবো না! এই রকম হল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ জটিলতা। তারপর আরেকটা মেশিন যেটা লিকুইড সেলুলোজ তৈরি করে, সেটা আমরা পাহাং ইউনিভার্সিটি মালয়শিয়ার সাথে যোগাযোগ করেছি সেটা, সেই মেশিনটার দাম ছিল ২৫ কোটি টাকা। আমার কাছে এটা অ্যাবসার্ড মনে হল। এবং ওখানে ওই মেশিন আমরা দেখেছি — যারা কাজ করছে, প্লাম ফাইবার থেকে সেলুলোজ বানাচ্ছে। তো এখন আলহামদুলিল্লাহ, যে আমরা আরো ডেভেলপড মেথড তৈরি করেছি সেলুলোজ তৈরি করার জন্যে। ইটস ভেরি লেস এক্সপেনসিভ মেথড। এর মধ্যে রিসার্চ করে আমাদের বিজ্ঞানীরা আরেকটা ভাল জিনিস তৈরি করতে পেরেছে; যাতে খুব অল্প পয়সায় অল্প মেশিনারিজ দিয়ে আমরা সেলুলোজ তৈরি করতে পারবো। তো, এখন এই টাকাগুলো হল একটা ভেইগ (টার্ম)। রিসার্চ করলে দেখা যাবে আস্তে আস্তে এর পরিমাণটা, টাকার পরিমাণটা কমে আসবে। 

ইন্ডিয়ার একটা মেশিনের এক্স ফ্যাক্টর ভ্যালু ছিল ৩ কোটি টাকা, তারপর এখানে এসে আমরা মনে করলাম যে সে যদি এখানে এসে ইনস্টলেশন করে দিল — তো, তারা ৫ কোটি টাকার মতো চাইল। সেই মেশিন যখন আবার টেন্ডারে — গভর্নমেন্ট তো এমনি কিনতে পারবে না; টেন্ডারে গেলাম ­— টেন্ডার আসলো ১৩ কোটি টাকা। আমি চাইলাম ৭ কোটি টাকা, টেন্ডার আসলো ১৩ কোটি টাকা। তো এটাতো আমি কিনতে পারবো না! এই রকম হল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ জটিলতা।

এক জায়গায় কেন্দ্রীভূতভাবে উৎপাদন করার মডেলে আপনি কেন চিন্তা করছেন? আপনাকে আপনার প্রাপ্য রয়ালিটি দিয়ে এটা যদি সারা দেশ জুড়ে ছোট বড় বিভিন্ন কারখানায় একযোগে উৎপাদিত হয় তাহলে তো আর আপনাকে ৪০০ কোটি টাকার বিনিয়োগের জন্য বসে থাকতে হয় না। এবিষয়ে আপনার ভাবনাটা জানতে চাই।

ড. মোবারক আহমদ  খান: এটার আরএন্ডডিটা (রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট) এখনো ডিসেন্ট্রালাইজ করার মতো পর্যায়ে যাওয়ার ব্যাপারে — উই আর নট শিউর। মেশিনপত্র দেখে যদি একটা পাইলট স্কেলের প্রোডাকশন — হ্যা, এটার থেকে এটা, এটার থেকে এটার মতো করে (সেই) সেটআপটা যদি আমরা তৈরি করতে পারতাম, তাহলে কিন্তু মানুষ, ইন্টারপ্রেনাররা এসে দেখত, যে এটা (এরকম)। আমরা আজকে পলিথিন ব্যাগ যেটা পাচ্ছি, দেখবেন যে নবাবপুরে গেলে আপনার একটা মেশিনের মধ্যে দিয়ে ব্যাগ বানিয়ে ফেলছে। তাই না? এটার পেছনে যে কত ইনভেস্টমেন্ট, কোথায় পেট্রোল থেকে তৈরি করে সেটাকে পলিথিন বানিয়ে, পলিথিনের দানা বানিয়ে — এখানে বিলিয়ন ডলার খরচ করা হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন এন্টারপ্রেনার বিভিন্ন স্টেপের উপর কাজ করছে। সেই স্টেপ অনুযায়ী এখন পলিথিনের গ্রানিউলে আমরা এসেছি। কেউ ওটার থেকে এখন এক্সট্রুডারের মাঝখানে দিয়ে ব্যাগ বানাচ্ছে, কেউ হয়তো খেলনা বানাচ্ছে, কেউ হয়তো আদার প্রোডাক্টস বানাচ্ছে — এই এরকম।

হয়তোবা কোন একদিন, যখন এরকম এটার সুবিধা হবে, একজন হয়তো কেবল পাট থেকে সেলুলোজ বানিয়েই বিক্রি করবে। আরেকজন হয়তো সেলুলোজ কিনে এনে খালি লিকুইড সেলুলোজ বানালো। আমরা এখন কাজ করছি, এখন লিকুইড সেলুলোজটাকে যদি আবার ওয়াটার সলুবল বানানোর প্রয়োজন পড়ে, এটাকে যদি ড্রাই করে রাখি, এটা কি আবার অন্য জনে নিয়ে গেলে আবার সেই জায়গাটায় আবার সে লিকুইড বানিয়ে ব্যাগ বানাতে পারবে কিনা, প্রোপার্টি নষ্ট হবে কিনা — আমরা এই রিসার্চগুলো এখন করছি আরকি। সেজন্য একটা টোটাল প্রসিডিউর — ফলোআপ, মানে যেটাকে এইভাবে যেতে হবে — আমরা কিন্তু সেই জায়গাটায় এখনো পৌঁছাই নাই। কিন্তু এখনো যদি এন্টারপ্রেনাররা এটা নিতে চায়, তাহলে অ্যাজ এ হোল প্ল্যান্ট নিতে হবে। ছোট ছোট করে দেয়ার কোন স্কোপ নাই।

অনেক ছোট ছোট উদ্যোক্তা আসে যে — স্যার আপনি যে পলিথিন বানাচ্ছেন, আপনার কাছে দানার মতো কিছু পাওয়া যায় বোধ হয়, তো সেটা নিয়ে আমি এটা বানালাম — কিন্তু আসলে তো আমরা ওই দানা বানাতে পারি নাই এখনো, মানে যেটা গ্রানিউল। আমরা চেষ্টা করছি। আমাদের রিসার্চ চলছে।

যিনি ইন্টারেস্টেড হবেন তাকেই টোটালি ৪টা প্ল্যান্ট নিয়ে দৌড়াতে হবে। ৪টা প্ল্যান্ট হল: সেলুলোজ, লিকুইড সেলুলোজ, রিঅ্যাকশন ট্যাংক এবং ফিল্ম বানানো। ফিল্ম বানানোর পর এখন আপনি যা ইচ্ছা করেন সেটা (আপনার ব্যাপার) আরকি। অনেক ছোট ছোট উদ্যোক্তা আসে যে — স্যার আপনি যে পলিথিন বানাচ্ছেন, আপনার কাছে দানার মতো কিছু পাওয়া যায় বোধ হয়, তো সেটা নিয়ে আমি এটা বানালাম — কিন্তু আসলে তো আমরা ওই দানা বানাতে পারি নাই এখনো, মানে যেটা গ্রানিউল। আমরা চেষ্টা করছি। আমাদের রিসার্চ চলছে। যে এটাকে যদি গ্রানিউল আকারে দিতে পারি — ওকে তুমি নিয়ে পানিতে সলুশন করে তুমি (ব্যাগ বানিয়ে) ফেললা। এটা আমাদের রিসার্চ চলছে। অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবো যদি গ্রানিউল — যে কেউ খালি গ্রানিউল কিনে নিয়ে পানিতে এটা ডিজলভ করে দিয়ে সে বানিয়ে ফেলল আরকি। যেটা এক্সট্রুডার মেশিন দিয়ে করছি সেটা পানির মধ্যে দিয়ে এটা করবে। ওই রিসার্চটা চলছে এখনো।

সরকার বলছে যে আপনি এখনো পাইলটিং শেষ করেননি। আপনি পত্রিকায় দাবী করেছেন যে পাইলটিং শেষ। এই সমন্বয়হীনতা কেন তৈরি হচ্ছে?

ড. মোবারক আহমদ  খান: এখন পাইলটিংয়ের টার্গেট নির্ধারণ করা হয় নাই কখনোই যে কোন পর্যন্ত আমার পাইলটিং। আমি কিন্তু প্রোডাকশন আপনার সামনে তুলে ধরছি। এটা হচ্ছে। এখন এটাকে প্রসেস ফলোআপ করার দায়িত্বটা হল প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারদের বা যারা টাকা পয়সা নিবে তাদের। আমি যদি বলি আমার টেকনোলজি ইজ ডান। বাট একটা জায়গায় কিছু কিছু তো অসুবিধা ওই বললাম — যে আপনাদের প্রত্যেকটা স্টেপে স্টেপে আমি আলাদা আলাদা করতে পারবো কিনা, এগুলি — আমাকে রিসার্চের সময় দিতে হবে। আর একদিনে — একটা মোবাইল আপনি দেখেন একটা এত্তবড় মোবাইল ছিল, এত বড় একটা ডান্ডা (এন্টেনা) ছিল, এখন সেই মোবাইল এখন আপনার এইটুকু বা আরো ছোট। এইটা হাতে থাকলে দুনিয়া আপনার হাতে। তো এটা তো একদিনে আসে নাই। তাই না?

তো সেইজন্যেই এটা আপনার আরো দিন যত যাবে, রিসার্চ যত বের হবে, এটার পসিবলিটিজ বাড়বে। মানুষ হয়তো নতুনভাবে আরেকটু চিন্তা করবে, এখন আমরা গ্রানিউল বানানোর চিন্তা করছি, গ্রানিউল বানাতে পারলে হয়তো তখন গ্রানিউল বিক্রি করবো। তখন আর পাট নিয়ে মানুষ — পাট এখান থেকে কিনে নিয়ে আমেরিকাতে বসে গ্রানিউল বানিয়ে ফেলল। অসুবিধা নাই তো কিছু — এইভাবে। কিন্তু এই জায়গাটা পাইলটিংয়ের, যেটা হচ্ছিল ফার্স্টে যে আপনার ১ টন প্রডাকশন দিব। উই আর নাউ এবল টু প্রডিউস ওয়ান টন। পার ডে আমার সেই সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। বাট যে এক লক্ষ — এক টন থেকে যে এক লক্ষ পিস ব্যাগ তৈরি হবে — ব্যাগ বানানোর জন্য যে মেশিনটা দরকার, সেই মেশিনটা আমার কাছে নাই। অটোমেটেড মেশিন যেটা — ইটস নট আ লাইক পলিথিন মেশিন। যে পলিথিন মেশিনে পলিথিন যাচ্ছে, পট করে কেটে হিট সিলিং — এটার হিট সিলিং হবে না। কারণ যেহেতু এটা কাপড়ের মতো। বরং এটাতে যদি আপনি আয়রন করেন দেখা যাবে যে কাপড়ের মতো ইস্ত্রি হয়ে গেছে।

উই আর নাউ এবল টু প্রডিউস ওয়ান টন। পার ডে আমার সেই সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। বাট যে এক লক্ষ — এক টন থেকে যে এক লক্ষ পিস ব্যাগ তৈরি হবে — ব্যাগ বানানোর জন্য যে মেশিনটা দরকার, সেই মেশিনটা আমার কাছে নাই।

তো সেই জায়গাটায় এখন যে সিলিংটা আমরা ব্যবহার করছি, সুইং করে করতে পারি, সুইং করলে ওকে, শপিং ব্যাগের জন্য কোন অসুবিধা নাই। কিন্তু যদি আপনার লিকুইড জিনিস আনতে চান, তাহলে তো ওখানে ছিদ্র থাকবে। এটা হবে না। এখন আমরা চিন্তা করছি গ্লু। এখন গ্লু হল সিলিকন গ্লু — বাজরে বিক্রি হয়। সিলিকন গ্লুগুলি কিন্তু আবার বায়োডিগ্রেডেবল না। আমি (কিন্তু) এর মধ্যে একটু পরিমাণও নন-বায়োডিগ্রেডেবল মেশাতে চাই না। যদি কোন কিছু না পাওয়া যায় তখন চিন্তা আরকি। কারণ এর মধ্যে হয়ত পয়েন্ট জিরো জিরো ওয়ান পারসেন্ট ওয়েটের তুলনায় হয়তো সিলিকন থাকবে। কিন্তু আমরা অলরেডি এই ধরনের গ্লু আমরা পাটের থেকে তৈরি করে ফেলেছি। কিন্তু সেই মেশিনটা লাগবে। এই যে গ্লু মিশবে অটোমেটেড মেশিনে যাবে — এইগুলি। এখন এইজন্যে আমরা জাপানিজদের সাথে, চাইনীজদের সাথে, তারপরে আপনার জার্মানীর সাথে, নেদারল্যান্ডের সাথে, বিভিন্ন দেশ, ইভেন আমেরিকা — সবার সাথে কথা বলছি যে হু ক্যান ডেভেলপ দিস মেশিন — আমাদের আইডিয়ায়। এবং আমরা প্রতিদিনই, কালকেও আমি স্যাম্পল পাঠিয়েছি। যে ওরা টেস্ট করে দেখবে যে তারা ওটা পারে কিনা — এই মেশিনটা বানানোর জন্য। এখন ধরেন কাগজের ব্যাগ যারা বানায়, তারা তো গ্লু দিয়ে বানাচ্ছে। তাদেরও সিস্টেমের সাথে কথা হয়েছে। তাদেরও এটা — আমাদের স্যাম্পল পাঠানো হয়ে গেছে তাদের কাছে। আরেকটা হল যে আপনার নন-ওভেন ব্যাগগুলো যে দেখেন, সে ব্যাগটা — কিন্তু যে সেলাইটা, সেই সেলাইটা কিন্তু আল্ট্রা সাউন্ড দিয়ে করা। সেটা কিন্তু কোন (সুতা) না।

এই যে মাস্কে যে সেলাইটা দিয়েছে, এটা কিন্তু আল্ট্রাসাউন্ড দিয়ে করা। তো, আল্ট্রা সাউন্ডে আমাদের এগুলো হচ্ছে। বাট নট অল। ওই যে আমাদের ডিফারেন্ট টাইপস ব্যাগ — সেগুলো। এবং এটার জন্য আমার রিসার্চ করা দরকার। এবং জার্মানীর একটা রিসার্চ — তারা বলল যে প্রথমে তারা ব্যাগ পাঠিয়েছে,  তারা এটা ৯ কোটি টাকা চাচ্ছে, শুধু জার্মানী থেকেই কিনে আনতে যাবে। বাকি এইটার খরচ, সবকিছু অন্যরকম। আর চাইনীজরা আরো কম পয়সা চাচ্ছে। কিন্তু আপনি জানেন ওরা এইটা আল্ট্রাসাউন্ড দিয়ে আসলে ব্যাগ তৈরি করে। করোনার মধ্যে এগুলো তো বসে থাকে নাই। ওরা ব্যাগ আমার বাসায় পাঠিয়েছে। কিন্তু নট আপ টু দ্যাট লেভেল। আমি দেখেছি ওটা, পছন্দ হয় নাই আমার। তখন ওরা বলল আমরা আরো রিসার্চ করতে পারবো, তোমাদের অগ্রিম টাকা পাঠাতে হবে। দিস ইজ দ্য প্রবলেম। গভর্নমেন্ট আবার অগ্রিম টাকা পাঠাতে পারে না। বাট সেদিন আমাদের মাননীয় সেক্রেটারি মহোদয় বলেছেন, যে আমরা প্রয়োজন হলে পাঠাবো। কিন্তু ওই জায়গাটা একটা বিশ্বস্ততার ব্যাপার যে আমি ৫০০০ ডলার পাঠালাম, ও দুই দিন পরে বলল যে আমার হয় নাই এটা, কিন্তু ওরা একটা এগ্রিমেন্ট করতে চাচ্ছিল এরকম যে যদি হয় তাহলে ৫০০০ ডলার আমি মেশিন থেকে কেটে নিব। তো, এরকম।

আজকে আপনি কাজ করে কালকেই আপনি আউটপুট চান, যে দেখি টাকা দিলাম কি করলা? বিজ্ঞানী ইজ নট সাপোজড টু আনসার দ্যাট কোয়েশ্চেন। সেই জায়গাটাই হল যে জনবল। এখন আপনারা জানেন যে আমাদের এই অর্গানাইজেশনটাই ডিজলভ হয়ে যাচ্ছে। এখন সেখানে অর্থায়নটা কিভাবে আসবে, ভবিষ্যতটা কিভাবে আসবে জানি না।

যেমন আমার এখন ড্রায়ার মেশিন যেটা আছে, লম্বাটা, ওই মেশিনের একটা ডিজাইন আপনার টার্কির লোকেরা করেছে। তারা ৯ কোটি টাকা অ্যাডভান্স চাইলো যে আমরা একটা ডামি মেশিন বানাবো। যদি সাকসেসফুল হয় তুমি এটাও নিয়ে যাবা আর নতুন মেশিন যেটা নিবা তখন এই ৯ কোটি টাকা আমরা কম নিব। আর না হলে ৯ কোটি টাকা মার যাবে। তো, এই যে — এগুলো একটা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হলে কিন্তু তারা ইজিলি গিয়ে ওখানে বসে থেকে অর্ডার করে জিনিস বানিয়ে নিয়ে আসতে পারতো। কিন্তু যখনই সরকারি টাকা আমাকে ইউজ করতে হয়, তখন তো আমার সরকারের নিয়মের মধ্যে (থাকতে হয়) — এটা তো কোন ব্যক্তি না। এখন রিসার্চের জন্য অর্থকে ধরতে হবে যে আমি অর্থকে পানিতে ফেলে দিচ্ছি। প্রথমে রিসার্চে সবকিছু আপনার পানির মধ্যে ফেলে দিবে। এই জিনিসটা তো (সোনালী ব্যাগ দেখিয়ে) একদিনে আসে নাই। আমার রিসার্চের জন্য কত ছাত্র আমার মাথা খাটিয়েছে। কতজন আমার ব্রেইন খাটিয়েছে। কত কেমিক্যালস আমি নষ্ট করেছি এটার পিছনে। সুতরাং সেগুলো আর এটার হিসেব করে পাওয়া যাবে না। এখন যেটা কাজ করতে হবে — যদি আজকে আপনি কাজ করে কালকেই আপনি আউটপুট চান, যে দেখি টাকা দিলাম কি করলা? বিজ্ঞানী ইজ নট সাপোজড টু আনসার দ্যাট কোয়েশ্চেন। সেই জায়গাটাই হল যে জনবল। এখন আপনারা জানেন যে আমাদের এই অর্গানাইজেশনটাই ডিজলভ হয়ে যাচ্ছে। এখন সেখানে অর্থায়নটা কিভাবে আসবে, ভবিষ্যতটা কিভাবে আসবে জানি না।

আগামীনিউজ/প্রভাত

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে