নীলফামারী: পরিবারের আদর্শিক প্রতিকূলতাকে পেরিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে দেশকে হানাদার মুক্ত করতে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন টগবগে তরুন আব্দুস সামাদ বসুনিয়া। দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। দায়িত্ব পালন করেছেন কোম্পানী কমান্ডারের।
বেতনের টাকা জমিয়ে স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে কোরবানীর গরু কিনে অসহায় দুঃস্থদের মাঝে বিলিয়েছিলেন গোশত। স্কুলে পড়াকালীন সময়ে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।
১৯৭১ সালে একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন তিনি। নীলফামারীর সৈয়দপুরে ২৩ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। শহরের অবরুদ্ধ বাঙ্গালীদের বাচাতে তিনি এলাকার তরুণদের নিয়ে দেশী অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পাকিস্তান পন্থী বিহারীদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হন। এক পর্যায়ে উর্দূভাষীদের সঙ্গে সাদা পোষাকে পাকি সেনারা যোগ দেয় এবং উপর্যূপরি আগ্নেয় অস্ত্র গুলিবর্ষণ শুরু করলে দল নিয়ে তিনি পিছু হটে। পালিয়ে যান নীলফামারী সদর উপজেলার চড়াইখোলা গ্রামের বসুনিয়া পাড়ায়।
সেখানে যুবকদের সংঘঠিত করে ডিমলা উপজেলার সীমান্ত দিয়ে মে মাসে ভারতে চলে যান। সেখানে ইয়োথ ক্যাম্পে উপস্থিত হয়ে মুক্তিযোদ্ধার খাতায় নাম লেখান। শিলিগুড়িতে ট্রেনিং শেষ করে প্রশিক্ষক পদে পদোন্নতি পান। এর পর কোম্পানি কমান্ডার নিযুক্ত হন।
১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার সীমান্ত দিয়ে দেশে প্রবেশ করে পাক সেনাদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে সামিল হন। তৎকালীন সময়ে ডিমলা থানা স্বাধীন করে ডোমার হয়ে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ থানায় মুক্তি বাহিনীর ২০০ জন সদস্য নিয়ে চলে আসেন। এই এলাকায় ১৩, ১৪ ও ১৫ ডিসেম্বর এক নাগারে পাকি সেনাদের সঙ্গে তিন দিন সম্মুখ যুদ্ধ করেন। কিশোরগঞ্জ থানা হানাদার মুক্ত হলে রংপুরের তারাগঞ্জ এলাকার বাড়াতি ব্রীজ ধ্বংসের নির্দেশনা পান।
সেই প্রস্তুতি গ্রহণ করতে করতে দেশে বিজয়ের ঘোষণা চলে আসেন। তখন বিজয়ের বেশে যুদ্ধ শেষে বাড়িতে ফিরেন। শহরে বসনিয়া মোড়ে তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে কথা হয় সেই সময়ের মুক্তিযোদ্ধার কোম্পানী কমান্ডার আব্দুস সামাদ বসুনিয়ার সঙ্গে।
তিনি বলেন, পড়াশোনার প্রারম্ভিক জীবন থেকেই তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের ১৯৫৯ সালেল মৌলিক গণতন্ত্রের ভোটে আইয়ূব খানের গোলাপ ফুল মার্কার পোষ্টারে গোবর লেপন করার অপরাধে চাচার হাতে বেদম মার খেয়েছিলেন।
তার মতে সেই সময় আওয়ামীলীগের রাজীনতির সাথে শ্রমুজীবী মানুষরাই বেশি জড়িত ছিলেন। প্রভাবশালী ধনবান পরিবারের লোকজন মুসলিম লীগ করতেন। সেই কারণে মুক্তি যুদ্ধেও কৃষক, শ্রমিক, জেলে, তাঁতী, কামার, কুমোর তথা শোষিত পরিবারের সন্তানরাই বেশি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। পাকিস্তানী শোষনে অতিষ্ট হয়ে তারা আবেগেই অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধে।
মুক্তিযোদ্ধারা রাজনৈতিকভাবে সচেতন হলে সোনার বাংলার আর্থিক চেহারা অনেক আগেই পাল্টে যেত। তারা রাজনৈতিকভাবে সচেতন না হওয়ায় অনেকে বিপথেও পা বাড়িয়েছিল। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভুলে গিয়ে অনেক মুক্তিযোদ্ধা জামাত-বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মতো সাম্প্রদায়িক রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হয়। তবে বর্তমান সরকারের আমলে মুক্তিযোদ্ধারা যথেষ্ট মুল্যায়িত হচ্ছে। এ কারণে বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধারা আর সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে সমর্থন করতে নারাজ।
আগামীনিউজ/মালেক