ঢাকাঃ উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাজলা মাঙ্গুশকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের খবর প্রকাশ্যে আসার পর রোববার (২৭ আগস্ট) মাঙ্গুশকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
এই ঘটনায় সদ্য বরখাস্তকৃত পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুরও ঘোষণা দিয়েছেন লিবিয়ার প্রধানমন্ত্রী। সোমবার (২৮ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোহেনের সঙ্গে বৈঠকের কারণে লিবিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাজলা মাঙ্গুশকে বরখাস্ত করেছেন লিবীয় প্রধানমন্ত্রী। মূলত লিবিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করায় রোববার মাঙ্গুশকে বরখাস্ত এবং তদন্ত শুরুর নির্দেশ দেওয়া হয়।
লিবিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাজলা মাঙ্গুশ এবং ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোহেন গত সপ্তাহে বৈঠক করেছিলেন। এই বৈঠকের বিষয়ে ইসরায়েল এক বিবৃতিতে বলেছে, গত সপ্তাহের ওই বৈঠকে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী উভয় দেশের মধ্যে সম্ভাব্য সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেছেন।
অবশ্য এই বৈঠকের খবর সামনে আসার পর লিবিয়ায় ছোট আকারে বিক্ষোভ হয়েছে। মূলত দেশ হিসেবে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয় না উত্তর আফ্রিকার মাগরেব অঞ্চলের দেশ লিবিয়া।
লিবিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, নাজলা মাঙ্গুশ ইসরায়েলের প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠকে বসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন এবং যা ঘটেছে তা হলো- ‘ইতালির পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠকের সময় অপ্রস্তুত, অপ্রত্যাশিত সাক্ষাৎ।’
লিবিয়ার মন্ত্রালয়ের এই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, (ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে) আকস্মিক সেই সাক্ষাতে ‘কোনও আলোচনা, চুক্তি বা পরামর্শ’ অন্তর্ভুক্ত ছিল না। এছাড়া ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ‘স্বাভাবিকীকরণকে সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান’ করেছে মন্ত্রণালয়।
অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ২০২০ সাল থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, মরক্কো এবং সুদানের সাথে তথাকথিত ‘আব্রাহাম চুক্তির’ মাধ্যমে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে ইসরায়েল। এছাড়া লিবিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের বিষয়েও খোলামেলা তথ্য দিয়েছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোহেন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমি (লিবিয়ার) পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে দুই দেশের জন্য বিশাল সম্ভাবনার বিষয়ে কথা বলেছি।’
বৈঠকটি ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানির সহায়তায় আয়োজন করা হয়েছিল বলেও ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। বৈঠকে তারা (লিবিয়া ও ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী) মানবিক সমস্যা, কৃষি ও পানি ব্যবস্থাপনায় সম্ভাব্য সহযোগিতা এবং ইসরায়েলি সহায়তা নিয়ে আলোচনা করেছেন বলেও জানানো হয়েছে।
কোহেন বলেছেন, তিনি লিবিয়ায় ইহুদি ঐতিহ্য সংরক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে মাঙ্গুশের সাথে কথা বলেছেন।
উল্লেখ্য, লিবিয়ার দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক মুয়াম্মার আল গাদ্দাফি ২০১১ সালে উৎখাত হওয়ার পর থেকে দেশটির ক্ষমতা নিয়ে কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর মাঝে লড়াই চলছে। মূলত বছরের পর বছর ধরে চলা সংঘাত এবং সরকারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তিক্ত অভ্যন্তরীণ বিভাজনের কারণে লিবিয়ার বৈদেশিক নীতি বেশ জটিল একটি বিষয় বলে মনে করা হয়।
এমআইসি