ঢাকাঃ পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে কারাগারে খাবার দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মাহমুদ কোরেশি। তিনি বলেন, ‘ইমরান খানের জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষ তাঁকে খাবারও দিচ্ছে না।’
এদিকে ইমরান খানকে গ্রেফতার ও কারাগারের নেয়ার পর থেকে আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেছে পিটিআই। এআরওয়াই নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
এর আগে ইমরান খানকে দোষী সাব্যস্ত করার পর তাকে গ্রেফতার করতে ইসলামাবাদ পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। কিন্তু তার পরিবর্তে ইমরান খানকে গ্রেফতার করে পাঞ্জাব পুলিশ।
গ্রেফতারের পর পাঞ্জাব পুলিশ কঠোর নিরাপত্তায় ইমরান খানকে লাহোর থেকে নিয়ে আসে। এছাড়া আদালত রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেল সুপারকে ইমরান খানকে গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু তার পরিবর্তে ইমরানকে পাঞ্জাবের আটোক কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
ইমরান খানকে কোন কারাগারে রাখা হবে তা নিয়ে কর্তৃপক্ষ গোপনীয়তা বজায় রেখেছিলে বলে জানিয়েছেন একজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। তিনি পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডনকে জানিয়েছেন, ইমরান খানকে কোন কারাগারে রাখা হবে এ নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষকে পুরোপুরি অন্ধকারে রাখা হয়েছিল। তারা আশা করেছিলেন যে ইমরান খানকে আদিয়ালা কারাগারে রাখা হবে। তবে শেষ পর্যন্ত তাকে আটোক কারাগারে নেওয়া হয়।
ইমরান খানের আইন বিষয়ক সহকারী নাঈম হায়দার পাঞ্জোথা বলেন, কারাগারে আইনজীবীদেরও প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
তিনি জানান, ইমরান খানকে জামাকাপড়, খাবার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করার জন্য কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে পিটিআই চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকের অনুমতি দেয়নি এবং আইনজীবীদের পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি পেতে সোমবার যেতে বলা হয়।
একজন আইনজীবী জানান, 'আমরা কারা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলাম যে, বিভিন্ন আবেদনপত্রে এবং আদালতের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নি প্রয়োজন। এর জন্য ইমরান খানের স্বাক্ষরের প্রয়োজন।'
পিটিআই মুখপাত্র রওফ হাসান বলেছেন যে, আইনী দলকে ইমরান খানের সাথে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
শাহ মাহমুদ কোরেশি আরও বলেন, আদালত পিটিআই প্রধানকে আদিয়ালা কারাগারে রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিলেও তাকে আটোক কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আটোক কারাগারে সুযোগ-সুবিধার অভাব রয়েছে। সেখানে ‘বি ক্লাস’ সুবিধা দেওয়া হয় না।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে সি ক্লাস কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে দাবি করে কোরেশি বলেন, কারাগারে আইনজীবীদের ইমরান খানের কাছে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি। তিনি আরও বলেন, তারা পাওয়ার অব অ্যাটর্নিতে তার স্বাক্ষর ছাড়া এই পিটিআই প্রধানের মুক্তির জন্য আপিল দায়ের করতে পারবেন না।
কোরেশি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পিটিআই প্রধানকে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য পলি ক্লিনিকের মেডিকেল বোর্ডে নেওয়া হয়নি। কিন্তু কারাগারের প্রত্যেক বন্দির জন্য এটা বাধ্যতামূলক এবং জেল প্রশাসনের দায়িত্ব। ইমরান খানের জীবন ঝুঁকিতে থাকায় বিচার বিভাগকে নোটিশ দেওয়ারও দাবি জানান তিনি।
তবে এক কারা কর্মকর্তা ডনকে জানিয়েছেন, ইমরান খানকে কারাগারে বি ক্যাটাগরির সুবিধা দেওয়া হয়েছে। সেখানে তার রুমে বই, পছন্দের সংবাদপত্র, একটি টেবিল, একটি চেয়ার, ২১ ইঞ্চি টেলিভিশন, একটি তোষক, পোশাক ও বাথরুমের সুবিধা রয়েছে। তবে তাকে বাইরে থেকে খাবার আনার অনুমতি দেওয়া হবে না।
গত শনিবার (৬ আগস্ট) তোশাখানা দুর্নীতি মামলায় ইমরান খানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন ইসলামাবাদের আদালত। শুধু কারাদণ্ডই নয়, ইমরানের বিরুদ্ধে ১ লাখ পাকিস্তানি রুপি জরিমানাও করা হয়েছে। একইসঙ্গে ৫ বছরের জন্য রাজনীতি থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাকে।
বুইউ