ঢাকাঃ শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠজন অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের কলকাতার বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটে অভিযানে প্রায় ২৯ কোটি রুপি ও ৫ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) কর্মকর্তারা।
বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) ভোরের দিকে বাড়ি থেকে ১০টি ট্রাংক বের করতে দেখা গেছে। অর্পিতার টালিগঞ্জ এবং বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটে সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ কোটি রুপি উদ্ধার হয়েছে বলে জানা গেছে।
স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কলকাতায় ইডির সদর দফতর সিজিও কমপ্লেক্সের লকআপে মন্ত্রী পার্থ ও তার ঘনিষ্ঠজন অর্পিতা। এই ঘটনায় পার্থ অর্পিতাকে জেরা করে একাধিক সম্পত্তির হদিস পেয়েছেন গোয়েন্দারা। তারই প্রেক্ষিতে বুধবার দিনভর অর্পিতার দ্বিতীয় বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ১৮ ঘণ্টার অভিযানে ৫ কেজি সোনার গয়না পেয়েছে ইডি। ইডি সূত্রের খবর, অর্পিতার বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটের টয়লেট, আলমারি থেকেও নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, অর্পিতার দ্বিতীয় বাসা থেকে উদ্ধার নগদ অর্থ গুনতে তিনটি মেশিন ব্যবহার করে ইডি। অভিযানে তার ফ্ল্যাট থেকে গুরুত্বপূর্ণ নথিও পাওয়া গেছে। তবে এসব নথি সম্পর্কে এখনও স্পষ্ট করেনি কর্তৃপক্ষ।
সূত্রের খবর, ওয়ারড্রবে সবই পাঁচশ টাকা এবং দুই হাজার টাকার নোট। রাতভর গণনা শেষে বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) ভোরে ১০টি ট্রাংক নিয়ে যাওয়া হয় ফ্ল্যাটে। বৃহস্পতিবার সকালে নামিয়ে আনা হয় ট্রাংকগুলো। ব্যাপক নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ট্রাক ভর্তি করে সেই টাকা নিয়ে যান ইডি কর্মকর্তারা।
সাক্ষী হিসেবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত আবাসন কমিটির সম্পাদক অঙ্কিত চুরারিয়া জানান, বেশকিছু সম্পত্তির দলিল, সম্পত্তি সংক্রান্ত নথিপত্র এবং কয়েক হাজার টাকার বাতিল নোট উদ্ধার করা হয়েছে। যদিও ইডির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি না দেওয়া পর্যন্ত কোনো তথ্যই সমর্থনযোগ্য নয়।
টালিগঞ্জের মতো বেলঘরিয়াতেও দেখা গেল, ঘরের মেঝেতে ছড়িয়ে রাশি রাশি ২ হাজার এবং পাঁচশোর নোটের বান্ডিল। এমনকী শৌচাগারেও মেলে টাকা। এত দিন এরকম দৃশ্য সাধারণত দেখা যেত বলিউডের ছবিতে। কিন্তু এবার চিত্রনাট্যকে হার মানাচ্ছে বাস্তবতা। রিলকে ছাপিয়ে যাচ্ছে রিয়েল।
প্রসঙ্গত, ২২ জুলাই টালিগঞ্জের একটি আবাসনে অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে নগদ প্রায় ২২ কোটি টাকা, সোনার গয়না এবং বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করে ইডি। তার পর জানা যায়, বেলঘরিয়াতেও ফ্ল্যাট রয়েছে অর্পিতার। বুধবার (২৭ জুলাই) সেখানেই অভিযান চালায় ইডি। বৃহস্পতিবার ভোর ৪টা নাগাদ টাকা গণনা শেষ হয়। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মীদের ডেকে এনে মোট চারটি বড় যন্ত্রে চলছিল টাকা গোনা।
নোটগণনার সাক্ষী হিসেবে এক ব্যক্তিকে ফ্ল্যাটের উপরে নিয়ে গিয়েছিলেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। তার আগে যদিও ট্রাংকসহ একটি বড় ট্রাক নিয়ে আসা হয়েছিল ওই আবাসনে। ওই ট্রাংকে ভরেই উদ্ধার-করা টাকা নিয়ে যাওয়া হয় সকালে। তার আগে টাকা ও অন্যান্য সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া চলে। মোট আটটি ট্রাংকে টাকা ভরা হয় এবং একটিতে সোনার বাট ও গয়না রাখা হয়।
বেলঘরিয়ার ‘ক্লাব টাউন’ আবাসনে বুধবার দুপুর ১২টা নাগাদ পৌঁছায় ইডি। ওই আবাসনে দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতার। দুটি ফ্ল্যাটের একটিতে টাকার সন্ধান পান তদন্তকারীরা। তল্লাশির পর অন্য ফ্ল্যাটটি ‘সিল’ করে দেওয়া হয়। তারপর শুরু হয় অন্য ফ্ল্যাটে টাকা গোনা।
এমবুইউ