ঢাকাঃ ইউক্রেনের আকাশে নো ফ্লাই জোন ঘোষণা না করায় ন্যাটোর প্রতি নিন্দা জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি।
শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় ইউক্রেইনের জনগণের উদ্দেশ্যে দেওয়া এক টেলিভিশন ভাষণে জেলেনস্কি অভিযোগ করে বলেন, তাদের দেশের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রাসনের মাত্রা আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে এটা পশ্চিমা নেতারা জানেন আর তারা শহর ও নগরগুলোতে বোমা হামলা চালিয়ে যাওয়ার জন্য ভ্লাদিমির পুতিনকে লাইসেন্স দিয়ে দিচ্ছেন।
রাজধানী কিয়েভ থেকে ভিডিও ভাষণে তিনি বলেন, ‘নতুন হামলা ও হতাহত অনিবার্য, এটা জানার পরও ন্যাটো ভেবেচিন্তে ইউক্রেইনের আকাশ বন্ধ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
‘আজ ওই জোটের নেতারা নো-ফ্লাই জোনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ইউক্রেইনের শহর ও গ্রামগুলোতে আরও বোমাবর্ষণের সবুজ সঙ্কেত দিয়ে দিল।’
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, একইদিন এর আগে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ৩০ সদস্যের নেটো সামরিক জোটের নেতাদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের নিন্দা ও ন্যাটো জোটের কোনো সদস্য দেশ আক্রান্ত হলে পরস্পর পরস্পরকে রক্ষা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এর নেতারা।
কিন্তু রাশিয়ার যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র থেকে ইউক্রেইনের আকাশকে মুক্ত রাখতে জেলেনস্কির চাওয়া সাহায্যের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নিলে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে রশিয়ার যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে বলে আশঙ্কায় এমন সিদ্ধান্ত নেন তারা। তবে পুতিনকে শাস্তি দেওয়ার জন্য ইউরোপ আরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
বৈঠকে ন্যাটোর মহাসচিব ইয়েন্স স্টলটেনবার্গ ইউক্রেইনের পরিস্থিতিকে ‘ভয়ঙ্কর’ বলে বর্ণনা করেন কিন্তু জানান, এই জোটের বাহিনীগুলো স্থল বা আকাশপথে ইউক্রেইনে প্রবেশ করবে না।
পশ্চিমা কর্মকর্তারা বলেন, ‘নো-ফ্লাই জোন’ ঘোষণা করলে নেটোর যুদ্ধবিমানগুলো রাশিয়ার যুদ্ধবিমানগুলোকে গুলি করতে বাধ্য হবে, এতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
এর প্রতিক্রিয়ায় জেলেনস্কি বলেন, ‘আজ থেকে যেসব মানুষ মরবে, তারা আপনাদের কারণেও মরবে। মরবে আপনাদের দুর্বলতার কারণে, আপনাদের বিচ্ছিন্নতার কারণে।’
‘আজ ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলন হল। একটি দুর্বল সম্মেলন। একটি বিভ্রান্ত সম্মেলন। এমন একটি সম্মেলন যা দেখিয়েছে ইউরোপের স্বাধীনতার জন্য লড়াইটিকে অনেকেই প্রধান লক্ষ্য বলে বিবেচনা করছেন না।’
তিনি বলেন, ‘ন্যাটো দেশগুলোর গোয়েন্দা সংস্থাগুলো শক্রদের পরিকল্পনা সম্পর্কে সবই জানে। তারা জানে রাশিয়া আক্রমণ অব্যাহ রাখবে। ন্যাটো ভেবেচিন্তে ইউক্রেইনের আকাশ বন্ধ না করার সিদ্ধান্ত দিল। ন্যাটো দেশগুলো একটি কাহিনী তৈরি করে বলছে, ইউক্রেইনের আকাশ বন্ধ করে দিলে রাশিয়াকে ন্যাটোর বিরুদ্ধে সরাসরি আগ্রাসনের উস্কানি দেওয়া হবে।’
‘এটি আত্মসম্মোহিত দুর্বলদের বক্তব্য, যারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, যদিও তাদের অস্ত্রশস্ত্র আমাদের চেয়ে অনেকগুণ বেশি শক্তিশালী।’
পরে তিনি ইউরোপজুড়ে চলা বড় ধরনের প্রতিবাদ নিয়ে কথা বলেন, প্রতিবাদকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘যদি ইউক্রেইন বেঁচে না থাকে, ইউরোপও বাঁচবে না। ইউক্রেইনের পতন হলে, পুরো ইউরোপেরও পতন হবে।’
এর আগে ইউক্রেনের ‘নো ফ্লাই জোন’ প্রস্তাব নাকচ করে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে এমনটা করা হলে গোটা ইউরোপজুড়ে যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। তবে ব্লিনকেন এও বলেছেন যে, তিনি মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে আলাপ চালিয়ে যাবেন, যেন তারা রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার মতো যথেষ্ট সমর্থন পায়।
সিএনএন-এর খবরে আরও বলা হয়, ন্যাটো মূলত নো ফ্লাই জোন নিয়ে ভাবছেন না কয়েকটি কারণে। প্রথমত, ইউক্রেন কিংবা রাশিয়া কেউই ন্যাটোভুক্ত দেশ নয়। এ ছাড়া নো ফ্লাই জোন ঘোষণার আরেক অর্থ হলো রুশ যুদ্ধবিমানে ন্যাটোর হামলা। যা করা হলে পরমাণু শক্তিধর রাশিয়ার সঙ্গে ইউরোপের যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার আশঙ্কা আছে এবং তাতে আরও বড় আকারে প্রাণহানী ঘটতে পারে।
আগামীনিউজ/এমবুইউ