ঢাকাঃ খনি থেকে তেলের দৈনিক উত্তোলন হ্রাসের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জ্বালানি তেল উত্তোলন ও বিপণনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর জোট ওপেক প্লাস, তার সুফল পেতে শুরু করেছে জোটভুক্ত দেশগুলো। গতকাল শুক্রবার আন্তর্জাতিক অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের উভয় বেঞ্চমার্ক – ব্রেন্ট ক্রুড এবং ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম বেড়েছে ২ শতাংশ বা তারও বেশি।
এক প্রতিবেদনে রয়টার্স জানিয়েছে, শুক্রবার প্রতি ব্যারেল (১৫৯ লিটার) ব্রেন্ট ক্রুড বিক্রি হয়েছে ৮৩ দশমিক ৫৫ ডলারে এবং প্রতি ব্যারেল ডব্লিউটিআই বিক্রি হয়েছে ৭৯ দশমিক ৯৭ ডলারে। শতকরা হিসেবে আগের দিন বৃহস্পতিবারের তুলনায় প্রতি ব্যারেলে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম বেড়েছে ২ শতাংশ এবং ডব্লিউটিআইয়ের দাম বেড়েছে ২ দশমকি ১০ শতাংশ।
জ্বালানি তেলের বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো চলমান অর্থনৈতিক অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দৈনিক উৎপাদন হ্রাসের জেরেই ফের চাঙা ভাব এসেছে আন্তর্জাতিক জ্বালানি তেলের বাজারে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক বাজার পর্যবেক্ষণ সংস্থা এমইউএফজির কমোডিটি, ইসিজি এবং ইমার্জিং মার্কেট বিভাগের প্রধান এহসান খোমান রয়টার্সকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘করোনা মহামারির ২ বছর এবং তার পরপরই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে ডলারের দাম হু হু করে বাড়ছিল; ফলে বিশ্বজুড়ে মৃদু ধরনের মন্দা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল এবং তার প্রভাব পড়েছিল তেলের বাজারে।’
‘এই পরিস্থিতিতে বাজার স্থিতিশীল রাখতে ওপেক প্লাস তেলের উত্তোলন হ্রাসের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তা সময়োপযোগী ছিল। কারণ তেলের বাজার চাঙা থাকলে অর্থনীতি ও অন্যান্য বাজারেও তার প্রভাব পড়বে।’
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ বাহিনী ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে রুশ তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ। ফলে যুদ্ধ শুরুর পর প্রথম কয়েক মাসে হু হু করে বাড়ছিল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল বা পেট্রোলিয়ামের দাম।
কিন্তু একই সঙ্গে ডলারের দামও বাড়তে থাকায় বিশ্বের অধিকাংশ দেশ জ্বালানি তেল ক্রয় কমিয়ে দেয়। ফলে তেলের বাজারে মন্দাভাব শুরু হয় এবং লোকসানের শিকার হতে থাকে তেল উত্তোলন ও বিক্রয়কারী দেশগুলো।
এ পরিস্থিতিতে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম তেলের উত্তোলন হ্রাসের সিদ্ধান্ত জানায় ওপেক প্লাসের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরাষ্ট্র রাশিয়া। সে সময় এক বিবৃতিতে রাশিয়া বলেছিল, এখন থেকে প্রতিদিন ৫ লাখ ব্যারেল তেল কম উত্তোলন করবে দেশটি।
রাশিয়া এই ঘোষণা দেওয়ার এক মাস পর নিজেদের দৈনিক তেলের উত্তোলন ১ কোটি ব্যারেল থেকে ৯০ লাখে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেয় জোটের নেতৃস্থানীয় সদস্য সৌদি আরবের জ্বালানি তেল বিষয়ক মন্ত্রণালয়। গত ডিসেম্বরে ওপেক প্লাস জানিয়েছে, বাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার আগ পর্যন্ত দৈনিক তেলের উত্তোলন আর বাড়ানো হবে না।
সূত্র : রয়টার্স, দ্য ন্যাশনাল
এম/