ঢাকাঃ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্য নিয়ে অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি এই আগ্রাসনে ইতোমধ্যেই ২৮ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়েছে এবং এর জেরে বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে দেশটি।
এমন অবস্থায় ফিলিস্তিনের রাফাহ শহরে হামলা চালানোর ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। তবে রাফাহের বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করতে হবে বলে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে আবারও মনে করিয়ে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য বিশ্বাসযোগ্য এবং কার্যকরী পরিকল্পনা ছাড়া রাফাহতে সামরিক পদক্ষেপের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাওয়া উচিত নয় বলে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে বৃহস্পতিবার আবারও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।
রয়টার্স বলছে, বৃহস্পতিবার জো বাইডেন এবং বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ফোনে কথা বলেন। এক সপ্তাহেরও কম সময়ের সময়ে উভয় নেতার মধ্যে দ্বিতীয়বার অনুষ্ঠিত এই ফোনালাপে নেতানিয়াহুকে গাজা উপত্যকার দক্ষিণ অংশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১০ লাখ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরিকল্পনা ছাড়াই সামরিক পদক্ষেপের দিকে যাওয়ার বিষয়ে সতর্ক করে দেন বাইডেন।
এছাড়া ফোনালাপে উভয় নেতা চলমান বন্দি মুক্তি আলোচনার বিষয়েও কথা বলেছেন এবং বাইডেন বন্দিদের মুক্ত করতে সাহায্য করার জন্য চব্বিশ ঘণ্টা কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।
এদিকে ইসরায়েলি বাহিনী বৃহস্পতিবার বলেছে, তারা গাজায় বর্তমানে কার্যকর সবচেয়ে বড় হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছে। এই আক্রমণ শত শত রোগী এবং চিকিৎসা কর্মীদের পাশাপাশি যুদ্ধ থেকে বাঁচতে সেখানে আশ্রয় নেওয়া বহু বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের ভাগ্য নিয়ে নতুন শঙ্কা জাগিয়েছে।
এছাড়া হাসপাতালে এই ইসরায়েলি আক্রমণ এমন এক সময়ে হলো যখন গাজার শেষ তুলনামূলকভাবে নিরাপদ স্থান রাফাহতে আক্রমণ চালানোর ঘোষণা দেওয়ার পর ইসরায়েল ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক চাপের মুখোমুখি হয়েছে।
এর আগে চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে গাজায় নিহতদের মধ্যে নিরীহ ফিলিস্তিনির সংখ্যা ‘অনেক বেশি’ বলে জানান বাইডেন। একইসঙ্গে ফিলিস্তিনি এই ভূখণ্ডে বেসামরিক নাগরিকদের প্রাণহানির ক্রমবর্ধমান সংখ্যা নিয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।
তাই এই মন্তব্য ফিলিস্তিনের রাফাহ শহরে ইসরায়েলের আসন্ন সামরিক অভিযানের ওপর নতুন করে চাপ সৃষ্টি করেছে বলেও সেসময় মনে করা হয়েছিল।
গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউসে জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহর সাথে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ‘এই সংঘাতে নিহত ২৭ হাজার ফিলিস্তিনির মধ্যে অনেক নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিক রয়েছেন, যাদের মধ্যে হাজার হাজার শিশুও রয়েছে।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, লাখ লাখ মানুষ খাদ্য, পানীয় বা অন্যান্য মৌলিক প্রয়োজনগুলো পূরণ করতে পারছে না এবং অনেক পরিবার কেবল একজনকে নয়, অনেক আত্মীয়কে হারিয়েছে। এটি হৃদয়বিদারক।
পূর্ববর্তী মার্কিন আহ্বানের পুনর্ব্যক্ত করে বাইডেন বলেন, ‘রাফাহতে আশ্রয় নেওয়া ১০ লাখেরও বেশি লোকের নিরাপত্তা ও সহায়তা নিশ্চিত করার জন্য বিশ্বাসযোগ্য কোনও পরিকল্পনা ছাড়া সেখানে বড় সামরিক অভিযান চালানো উচিত নয়।’
সহিংসতা থেকে বাঁচতে ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার কারণে রাফাহতে অনেক বাস্তুচ্যুত লোক রয়েছে উল্লেখ করে বাইডেন বলেন, ‘তাদের রক্ষা করা দরকার।’
তার ভাষায়, ‘আমরাও শুরু থেকেই (নিজেদের অবস্থানে) স্পষ্ট ছিলাম। আমরা গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের যে কোনও জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির বিরোধিতা করি।’
প্রসঙ্গত, ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণের ফলে অন্তত ২৮ হাজার ৬৬৩ জন নিহত হয়েছে। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৬৮ হাজারেরও বেশি মানুষ।
গত বছরের অক্টোবরে আগ্রাসন শুরুর দিনগুলোতে ফিলিস্তিনিদের রাফাহতে আশ্রয় নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল ইসরায়েল। কারণ সেসময় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডটির উত্তরের শহরগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছিল।
আর এবার সেই রাফাহতেও আক্রমণের পরিকল্পনা করছে ইসরায়েল।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
এমআইসি/