ঢাকাঃ ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জার পাশাপাশি হামলা হচ্ছে হাসপাতালেও। এতে করে গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ইতোমধ্যেই প্রায় ভেঙে পড়েছে।
এই অবস্থায় গাজার স্বাস্থ্য পরিস্থিতিকে বিপর্যয়কর বলে উল্লেখ করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস। এমনকি ভূখণ্ডটির বিপর্যয়কর এই স্বাস্থ্য পরিস্থিতির উন্নতি প্রায় অসম্ভব বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
সোমবার (১১ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় বিপর্যয়কর স্বাস্থ্য পরিস্থিতির উন্নতি করা অসম্ভব বলে রোববার জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান। এমনকি গাজায় আরও চিকিৎসা সুবিধা পাঠানোর জন্য বোর্ড সর্বসম্মতিক্রমে একটি জরুরি প্রস্তাব পাস করা সত্ত্বেও বর্তমান পরিস্থিতির উন্নতি করা অসম্ভব বলে জানিয়েছেন তিনি।
ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারাও গাজায় বিপর্যয়কর স্বাস্থ্য পরিস্থিতির কথা বর্ণনা করেছেন। মূলত ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের ফলে গাজার বেশিরভাগ মানুষ গৃহহীন হয়েছে। ভূখণ্ডটিতে এখন সামান্যই বিদ্যুৎ, খাদ্য বা বিশুদ্ধ পানি আছে এবং সেখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে।
রয়টার্স বলছে, আফগানিস্তান, কাতার, ইয়েমেন এবং মরক্কোর প্রস্তাবিত এই জরুরি পদক্ষেপে চিকিৎসা কর্মীদের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম গাজায় সরবরাহের জন্য নিরাপদ পথ উন্মুক্ত করার দাবি করা হয়েছে। একইসঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা কর্মী এবং রোগীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ঘটনা নথিভুক্ত করতে এবং হাসপাতাল পুনর্নির্মাণের জন্য তহবিল যোগাড় করতেও ডব্লিউএইচও-কে বলা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস বলেন, ‘আমাকে অবশ্যই আপনার সাথে খোলামেলা কথা বলতে হবে: বর্তমান পরিস্থিতিতে এই ধরনের কাজ করা প্রায় অসম্ভব।’
তবুও পরিস্থিতির উত্তরণে অভিন্ন ভিত্তি খুঁজে বের করার জন্য এসব দেশের প্রশংসা করেছেন তিনি। টেড্রোস বলেছেন, সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে এবারই প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের কোনও প্রস্তাবে সর্বসম্মতিতে সম্মত হয়েছে তারা।
টেড্রোস জেনেভায় ৩৪ সদস্যের বোর্ডকে বলেন, গাজায় চিকিৎসার চাহিদা বেড়েছে এবং একইসঙ্গে রোগের ঝুঁকিও বেড়েছে। আর সংঘাত শুরুর আগের সময়ের তুলনায় গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সক্ষমতা এক-তৃতীয়াংশে হ্রাস পেয়েছে।
বার্তাসংস্থা আনাদোলুর পৃথক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই মহাপরিচালক বলেছেন, গাজা এবং পশ্চিম তীরে গত ৭ অক্টোবর থেকে স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলোতে ৪৪৯ টিরও বেশি হামলা হয়েছে। আর এই কারণে এখন ‘সেখানে স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজ করা অসম্ভব’।
অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে স্বাস্থ্য পরিস্থিতির ওপর ডব্লিউএইচও নির্বাহী বোর্ড আয়োজিত একটি বিশেষ অধিবেশনে বক্তৃতার সময় টেড্রোস গাজার স্বাস্থ্য পরিস্থিতির ওপর সংঘাতের বিপর্যয়কর প্রভাবের বিষয়েও জোর দেন।
তিনি বলেন, ‘গাজায় ১৭ হাজারেরও বেশি লোক মারা গেছেন বলে জানা গেছে, যার মধ্যে ৭ হাজার শিশু। আমরা জানি না কতজন তাদের বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন। ৪৬ হাজারেরও বেশি মানুষের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গাজায় ১৯ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন যা মূলত এই উপত্যকার প্রায় পুরো জনসংখ্যার সমান এবং তারা যেখানে পারছেন সেখানেই আশ্রয় খুঁজছেন। গাজায় কোনও স্থান এবং কেউ-ই নিরাপদ নয়।’
ফিলিস্তিনি রাজনীতিবিদ মুস্তাফা বারঘৌতি গাজায় কার্যক্রম পরিচালনা করা ২৫ টি দলের সমন্বয়ে গঠিত ইউনিয়ন অব দ্য প্যালেস্টাইন মেডিকেল রিলিফ কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন। তিনি বলেছেন: ‘গাজার অর্ধেক মানুষ এখন অনাহারে রয়েছেন।’
তিনি বলেন, গাজার সাড়ে ৩ লাখ লোকের সংক্রমণ রয়েছে যার মধ্যে ১ লাখ ১৫ হাজার মানুষ গুরুতর শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণে ভুগছেন। ভুক্তভোগী এসব মানুষ গরম কাপড়, কম্বল এবং বৃষ্টি থেকে সুরক্ষার অভাবে রয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, অনেকেই পেটের সমস্যায় ভুগছেন কারণ অল্প বিশুদ্ধ পানি এবং তা ফুটানোর জন্য পর্যাপ্ত জ্বালানি না থাকায় আমাশয়, টাইফয়েড এবং কলেরার প্রাদুর্ভাবের ঝুঁকিও রয়েছে।
মুস্তাফা বারঘৌতি বলেন, ‘ইসরায়েলি হামলায় আহত ৪৬ হাজার লোক রয়েছেন আমাদের কাছে। আহত বিপুল সংখ্যক এসব মানুষের সঠিকভাবে চিকিৎসা করা যাচ্ছে না কারণ গাজা ভূখণ্ডের বেশিরভাগ হাসপাতালই কাজ করছে না।’
এমআইসি